জোহরান মামদানি: কে এই তরুণ, কেন তাকে ঘিরে এত আলোচনা?

জোহরান মামদানি

ভিটোরিয়া বারেতো

তরুণ রাজনীতিবিদ জোহরান মামদানি নিউ ইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে এমন ঝড় তুলেছেন যে, তার তীব্রতা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ব জুড়ে।

৩৩ বছর বয়সী মামদানি কয়েকদিন আগেও নিউ ইয়র্ক সিটির এলিট রাজনৈতিক মহলে খুব অপরিচিত ছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও প্রচলিত রাজনীতিতে তার তেমন কোন অভিজ্ঞতাই ছিল না।

সেই মামদানি নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে প্রবীণ রাজনীতিবিদদের স্তব্ধ করে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে দিয়েছেন। যা রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে।

জোহরান মামদানি ইতিমধ্যে শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ইতিহাস তৈরি ফেলেছেন। চূড়ান্ত লড়াইয়ে জয়ী হলে তার নামের পাশে লেখা হয়ে যাবে কয়েকটি ইতিহাস।

নির্বাচিত হলে জোহরান মামদানি হবেন নিউ ইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র ও প্রথম দক্ষিণ-এশীয় মেয়র।

এছাড়া ১৯১৭ সালের পর তিনিই হবেন নিউ ইয়র্ক সিটির সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র।

কে এই জোহরান মামদানি?

জোহরান মামদানি আফ্রিকার দেশ উগান্ডার কাম্পালায় জন্গ্রহণ করেন। তার বাবা বিখ্যাত ভারতীয়-উগান্ডান শিক্ষাবিদ মাহমুদ মামদানি এবং মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ার।

মামদানি ২০১৪ সালে বোডোইন কলেজ থেকে আফ্রিকানা স্টাডিজে ডিগ্রি অর্জন করেছেন- সেখানে তিনি তার কলেজে প্রথমবার প্রতিষ্ঠিত ‘জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন চ্যাপ্টার’ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

রাজনীতিতে আসার আগে তিনি নিম্ন আয়ের কুইন্সের বাড়ির মালিকদের আবাসন পরামর্শদাতা হিসেবে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করেছিলেন এবং এই শ্রম-চালিত রাজনৈতিক চেতনা তার পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে।

মামদানির অ্যাসেম্বলি সদস্য প্রোফাইলে বলা হয়েছে, “তিনি বিশ্বাস করেন যে আমাদের প্রাপ্য ভবিষ্যৎ হল এমন- যেখানে আবাসন, শক্তি এবং ন্যায়বিচার কেবল কয়েকজনের জন্য নয়, অনেকের জন্য”।

তার প্রচারণার নীতিগুলির মধ্যে রয়েছে- ৬ সপ্তাহ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সর্বজনীন শিশু সেবা, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে গ্রোসারি দোকানের চেইন তৈরি করা, বাড়িওয়ালাদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনা, ভাড়া স্থিতিশীল রাখা, আবাসনের সুযোগ বাড়ানো এবং শহরে বিনামূল্যে বাস পরিসেবা চালু করা।

ভাইরাল প্রার্থী

জোহরান মামদানি সোশ্যাল মিডিয়ায় শহরের তরুণদের মধ্যে একজন উদীয়মান তারকা ছিলেন।

মামদানি টিকটকে স্প্যানিশ এবং উর্দু- উভয় ভাষায় পোস্ট করতেন। তরুণদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে তিনি শহরের রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ছোট ছোট ভিডিও করতেন। ভোটারদের সঙ্গে সেলফি তোলা, তাদের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা তুলে ধরাসহ বিভিন্নভাবে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করেছেন মামদানি।

বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক পডকাস্ট শোতেও তিনি নিয়মিত উপস্থিত হতেন।

এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি মূলত শহরের নিম্নবিত্তদের সমস্যা ও সমাধান তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, যা নির্বাচনী লড়াইয়ে তার প্রতি ব্যাপক সমর্থন তৈরি করেছে।

ছোট ছোট ভিডিওতে মামদানি ড্রাইভারদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন, ধনীদের উপর কর বৃদ্ধির প্রস্তাব রেখেছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা করেছেন।

একজন মুসলিম হিসেবে মামদানি প্রতিদিন ইসলামোফোবিক হুমকি পাওয়ার বিষয়েও খোলাখুলিভাবে কথা বলেছেন। নিউ ইয়র্ক পুলিশ বর্তমানে হুমকিগুলো তদন্ত করছে।

মামদানির সমালোচকরা যা বলছেন

মামদানি শহরের জীবনযাত্রাকে আরও সাশ্রয়ী করে তোলার উপায় নিয়ে জোর দিচ্ছেন। তবে সমালোচকরা এক্ষেত্রে তার অভিজ্ঞতা এবং প্রতিশ্রুতি পূরণের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

শহর পরিচালনার জন্য মামদানির চিন্তাভাবনাকে অনেকে অনেকটা ‘উগ্রপন্থী’ হিসেবেও সমালোচনা করছেন।

কেউ কেউ মামদানির জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ট্রাম্প-বাদের’ বিরুদ্ধে একটি বড় ধরণের আঘাত হিসেবেই দেখছেন।

তবে তার প্রতিদ্বন্ধি অ্যান্ড্রু কুমো বলছেন, মামদানি নিউ ইয়র্কের অভিজ্ঞ রিয়েল এস্টেট ম্যাগনেট রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কোনভাবেই সামলাতে পারবেন না।