দূরের পথ দ্রুত পাড়ি দিতে বিমানই মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় ভরসা। ফলে বিশ্ব জুড়ে বিমানের ব্যাপক চাহিদা।
বর্তমানে প্রতিদিন পৃথিবীর আকাশে এক লাখ বাণিজ্যিক বিমান চলাচল করে।
যত দিন যাচ্ছে ততই বিমান ভ্রমণ বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে বিপদও।
ফলে আকাশ পথেও এখন আর নিরাপদে ভ্রমণ করা যাচ্ছে না।
বিমান ভ্রমণ পর্যবেক্ষণকারীদের তথ্য অনুযায়ী, আকাশ পথে ভয়ংকরভাবে বিপদের মুখোমুখি হচ্ছেন যাত্রীরা। আগের তুলনায় এ সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ছে।
বিমান ভ্রমণ কতটা নিরাপদ?
অন্য যে কোন পরিবহনের তুলনায় বিমানে চলাচল বরাবরই নিরাপদ। কিন্তু সাম্প্রতিক চিত্রগুলো ভয় দেখাচ্ছে।
নিয়মিতই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার খবর আসছে।
ইদানিং আকাশ পথে এমন কিছু ঘটনা ঘটছে, যা প্রাণহানি না ঘটালে আজীবনের জন্য ভয় ধরিয়ে দিতে পারে।
এ পরিস্থিতিকে বলা হয় টার্বুলেন্স। যা নিয়ে বিশ্বজুড়েই উদ্বেগ চলছে। এমনকি বিমান তৈরিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
টার্বুলেন্স কি?
টার্বুলেন্স হলো এমন পরিস্থিতি, যেখানে বাতাসের চলাচল অস্বাভাবিক রকমের এলোমেলো হয়ে থাকে। অর্থাৎ বায়ু প্রবাহ অপ্রত্যাশিতভাবে বদলে যেতে পারে।
এ ধরণের পরিস্থিতিতে বাতাস বিমানে সজোরে ধাক্কা দিতে থাকে।
যেহেতু বাতাস এলোমেলোভাবে বইতে থাকে, তাই বিমানও অস্বাভাবিকভাবে ডানে-বামে বা উপর-নীচে তীব্র ঝাঁকুনি খেতে থাকে।
এই পরিস্থিতিকে এয়ার টার্বুলেন্স বলা হয়।
এই কাঁপুনির সময়টাতে যাত্রীরা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে, বমি করে দিতে পারে। সবমিলিয়ে আকাশে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
২০২৪ সালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স মারাত্মক এয়ার টার্বুলেন্সের মুখে পড়েছিল। মিয়ানমারের আকাশ অতিক্রমের একপর্যায়ে যাত্রীরা বিমানের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েছিলেন।
আকাশ পথে টার্বুলেন্স বাড়ছে কেন?
সবাই-ই একমত যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এয়ার টার্বুলেন্স বাড়ছে।
ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের অধ্যাপক পল উইলিয়ামসের গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৭৯ সালের পর এয়ার টার্বুলেন্স ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।
২০৫০ সালে সারা বিশ্বে এয়ার টার্বুলেন্স ভয়াবহভাবে বাড়তে পারে, বিশেষ করে পূর্ব এশিয়া ও নর্থ আটলান্টিক এলাকার আকাশপথ ভয়ের রাজ্যে পরিণত হতে পারে।
এর ফলে মানুষ বিমান ভ্রমণের আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
এ বিপদ কাটাতে বিমান কোম্পানি, বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা একসাথে কাজ করছে।
এয়ার টার্বুলেন্স কমাতে যা করা হচ্ছে
অস্ট্রিয়ার কোম্পানি টার্বুলেন্স সলিউশন ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
তারা বিমানের পাখায় পরিবর্তন আনার কাজ করছে, যা বাতাসকে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
এজন্য কোম্পানিটি পাখি কিভাবে পাখার সাহায্যে টার্বুলেন্স মোকাবিলা করে, তা পর্যবেক্ষণ করছেন।
টার্বুলেন্স সলিউশনের সিইও আন্দ্রাস গফি আশা করছেন, তাদের প্রযুক্তি এয়ার টার্বুলেন্সের ঝাঁকুনি ৮০ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারবে।