ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক
মুসলমানরা আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার জন্য দোয়া করে থাকেন।
বিশেষ করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা বিষয়ে দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে থাকেন ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা।
তারা বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ মানুষের চাওয়া শুনেন এবং ইচ্ছা অনুযায়ী তা পূরণও করে থাকেন।
ইসলাম ধর্ম অনুসারে- কখন, কার কোন দোয়াটি কবুল হবে সেটি কেবল আল্লাহই জানেন।
তবে কুরআন ও হাদিসে কিছু বিশেষ প্রেক্ষাপটের বর্ণনা এসেছে। সে অনুযায়ী কোন সময়ে দোয়া কবুল হতে পারে, তার কিছু ধারণা পাওয়া যায়।
দোয়া কখন কবুল হয়?
কুরআন-হাদিসের বর্ণনাগুলো বিশ্লেষণ করে, যেসব সময়ে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে- তা থাকছে নীচের আলোচনায়।
১. বিপদের সময়ের দোয়া
যখন কেউ বিপদে পড়ে আল্লাহকে স্মরণ করেন, তখন তিনি তার দোয়া কবুল করেন।
কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বিষয়টি এসেছে।
সূরা আন নামালে (৬২ নং আয়াত) আল্লাহ বিপদাপন্ন ব্যক্তির ডাকে সাড়া দেয়া এবং তার দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেয়ার কথা বলেছেন।
বিপদ-আপদে দোয়া ইউনূস পড়ার তাগিদ এসেছে কুরআন ও হাদিসে।
দোয়াটি হল- লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনায যলিমিন।
২. মজলুম, মুসাফির ও সন্তানের বিরুদ্ধে মা-বাবার দোয়া
মহানবী (সা.), মুয়াজ ইবনে জাবালকে ইয়েমেনের গভর্নর হিসেবে পাঠানোর সময় যে কয়েকটি নির্দেশ দিয়েছিলেন- তার একটি ছিল অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া থেকে সাবধান থাকতে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, “মজলুমের দোয়া ও আল্লাহর মধ্যে কোন অন্তরায় নাই।” (মুসলিম, বুখারী)
হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (সা.) ৩টি দোয়া কবুল হওয়ার বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই বলে জানিয়েছেন।
সেগুলো হচ্ছে, ছেলেমেয়ের বিরুদ্ধে মা-বাবার দোয়া, মুসাফিরের দোয়া ও মজলুমের দোয়া। (তিরমিজি, আবু দাউদ)
৩. শেষ রাত এবং নামাজের পরের দোয়া
কোন দোয়া সবচেয়ে বেশি কবুল হয়- এ বিষয়ে রাসূল (সা.) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
তিনি তখন শেষ রাতের দোয়া ও ফরজ নামাজের শেষের দোয়ার কথা বলেছেন। (তিরমিজি)
হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে যে- রাসূল (সা.) বলেছেন, রাতের শেষ তৃতীয়াংশে মুমিন ব্যক্তি যা চায় আল্লাহ তা-ই পূরণ করেন।
৪. জুমআর দিনের দোয়া
ইসলামে সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হল জুমআর দিন বা শুক্রবার।
এ দিনের আছরের পর থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত দোয়া কবুল হওয়ার কথা রাসূল (সা.) বলেছেন।
তিনি বলেছেন- এই সময়ে মুসলমান ব্যক্তি যা চায়, আল্লাহ তা দেন। (নাসায়ী, আবু দাউদ)
৫. সিজদার দোয়া
মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, সেজদার সময় মানুষ আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। তিনি তাই সেজদার সময় বেশি করে দোয়া করতে বলেছেন। (আবু দাউদ ও নাসায়ী)
৬. আযান ও ইকামতের মাঝের সময়
আযান ও ইকামতের মাঝের সময়ে দোয়া করার তাগিদ দিয়ে রাসূল (সা.) বলেছেন, “এই সময়ের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না।” (তিরমিজি)
৭. আযানের সময় ও যুদ্ধের মাঠে
রাসূল (সা.) বলেছেন, দুটি সময়ে (আযানের সময় ও মুজাহিদরা যুদ্ধে শত্রুর সম্মুখীন হওয়ার সময়) দোয়া করলে তা ফেরত দেয় হয় না বা খুব কম ফেরত দেয়া হয়। (আবু দাউদ)
৮. অনুপস্থিত মুসলমানের জন্য দোয়া
মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, কোন মুসলমানের অবর্তমানে অন্য মুসলিম ব্যক্তি কল্যাণ কামনা করলে তা কবুল হয়। এসময় একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতা বলে, আল্লাহ তোমাকেও একইরকম কল্যাণ দান করুন। (মুসলিম)
৯. আরাফার দিনের দোয়া
আরাফার দোযাকে রাসূল (সা.) সবচেয়ে উত্তম দোয়া বলেছেন।
বহু হাদিসে জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখে আরাফাতে অবস্থানকারীদের দোয়া কবুল হওয়ার বর্ণনা এসেছে।
মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, উপরের প্রেক্ষাপটগুলো ছাড়াও যে কোন আল্লাহ মানুষের দোয়া কবুল করতে পারেন।
তবে এই মুহূর্তগুলো যেহেতু বিশেষভাবে উল্লেখিত, তাই মুসলমানরা তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে পারেন।