পাকিস্তানের সঙ্গে মাঝ পথে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ায় ভারতের নাগরিকরা ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করে তারা প্রশ্ন তুলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ভারত সরকার কেন নতি স্বীকার করলো?
২২ এপ্রিল কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতি হামলার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে ভারত। ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা দাবি করে এর কড়া জবাব চাইছিলো ভারতের নাগরিকদের বড় অংশ।
এ নিয়ে দুই দেশের কথার লড়াইয়ের এক পর্যায়ে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। এরপর ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছে।
যুদ্ধবিরতিতে ক্ষোভ ভারতে, মোদির সমালোচনা
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে দুই দেশেই প্রাণহানি হয়েছে, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষতি বেশি হয়েছে কিনা- তা নিয়ে এখন ভারতের অভ্যন্তরেই অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা রাজেশ পাল মনে করেন, যুদ্ধ সম্পর্কে ভারতবাসীকে কার্যত অন্ধকারে রাখা হয়েছে।
“এর ফলে নানা ধরণের গুজব, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এগুলো একসময় বিতর্ক তৈরি করবে। রাজনৈতিক কাঁদা ছোড়াছুড়িতে যাবে। সেগুলো দেশের জন্য সম্মানজনক হবে না।”
রাজেশ পালের মত অনেকে যুদ্ধবিরতিকে ভারতের পিছু হটা হিসেবে দেখছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এ ইস্যুতে ভারতের নাগরিকদের ক্ষোভের মধ্যে বড় হয়ে আসছে- পাকিস্তানকে মোক্ষম জবাব দিতে না পারার ব্যর্থতা।
মোদি সরকারের সমালোচনা করে ভারতীয় নাগরিক সুবল সাহার প্রশ্ন, যুদ্ধবিরতিতে পাকিস্তানে আনন্দ মিছিল হলেও ভারত উৎসব করতে পারছে না কেন?
“কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততা পাকিস্তানকে বাঁচিয়ে দিয়েছে, তাই তারা আনন্দিত। কিন্তু ভারত যা হারিয়েছে এবং ভারতবাসী হিসেবে আমরা যা চেয়েছিলাম- তার ফায়সালা হয়নি।”
আরও অনেকের মত সুবল সাহাও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের বহু পুরনো মিত্র, সে হিসেবে ওয়াশিংটনের শাহবাজ সরকারকে সহযোগিতাই করারই কথা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রসঙ্গ টেনে সুবল সাহা বলেন, “তখনও তো যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে অখণ্ড রাখতে চাপ দিয়েছে। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী কি থেমে গিয়েছিলেন? তিনি মোদির পথে হাঁটলে তো ইতিহাস অন্যরকম হয়ে যেত!”
মোদি সরকারের ফাঁকা আওয়াজ
যুদ্ধ নিয়ে নরেন্দ্র মোদির সরকার ও বিজেপি যেসব বয়ান সামনে এনেছে, তা নিয়েও এখন সন্দেহ করছেন অনেকে।
তাদের ধারণা, এসব বয়ানের অনেক কিছু হয়তো ফাঁকা আওয়াজ ছিল।
মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা রাহুল রায়ের ক্ষোভ, পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ভেঙে ভারতের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালালেও ভারতীয় নেতৃত্ব কাপুরুষের পরিচয় দিয়েছে।
“ওরা হামলা করছে, আর আমরা দিচ্ছি বিবৃতি। বিবৃতিতে কড়া জবাব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছিলো, কিন্তু আমরা দেখলাম তারা চোখ তুলে তাকানোরও চেষ্টা করলো না। অথচ এসব নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ ছিল না!”
তবে ভিন্ন সুরও রয়েছে। বিশেষ করে বিজেপি সমর্থকদের একাংশ দাবি করছেন, দেশের স্বার্থেই সরকার ও সেনা নেতৃত্ব যা উপযুক্ত সে সিদ্ধান্তই নিয়েছে।
তাদের মতে, ভারত যুদ্ধ চালিয়ে গেলে পাকিস্তান বিপদজনক কোন পদক্ষেপ নিলে তা ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতো।