রানা প্লাজায় কি ঘটেছিল?

রানা প্লাজায় কি ঘটেছিল?

ঠিক এক যুগ আগের কথা, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। দিনের শুরুতেই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভার এলাকা থেকে দুর্ঘটনার খবর আসে।

একটি পোশাক কারখানার ভবন ভেঙে পড়েছে- স্রেফ এটুকুই।

ঘুম ভাঙা চোখে টিভি স্ক্রল দেখে তখন বাংলাদেশ আঁচ করতে পারেনি কত বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।

২৪ এপ্রিল সকালে সাভারবাসী বিকট আগে আওয়াজে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠতে দেখেন। মুহুর্তেই আকাশ ধূলিকনায় ঢেকে যায়।

এর মাধ্যমে বাংলাদেশে স্মরণকালের এমন ভয়াবহতম ঘটনার শুরু হয়েছিল, যা টানা কয়েকদিন ধরে টিভিতে লাইভ দেখেছিল কোটি কোটি মানুষ।

প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় এখন যেমন ঘটনার আগেই লাইভ দেখা যায়, এক যুগ আগে বাংলাদেশে তা এত সহজ ছিল না।

ঘটনার ভয়াবহতা এমন ছিলে যে, মাসব্যাপী পত্রিকার প্রথম পাতার খবরে প্রাণ হারানোর মানুষদের চিত্রই আসছিল।

কি ঘটেছিল রানা প্লাজায়?

সাভার বাস স্ট্যান্ড এলাকার রানা প্লাজা ছিল একটি পোশাক কারখানার ভবন। ভবনটিতে আরও কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও ছিল।

ভবনটি আগেই থেকেই সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে ছিল। ডোবা ভরাট করে তৈরি করা ভবানটির উপরের ৪ তলা নির্মাণের অনুমতিই ছিল না।

পরে বিভিন্ন স্থানে চিড় ধরায় ভবনটি ব্যবহার না করার নির্দেশ ছিল। তা অমান্য করেই হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভবনটিতে কাজ করে আসছিলেন।

ঘটনার আগেরদিন ফাটলের কারণে সবাইকে ভবন ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা না মেনে গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কাজে আসার নির্দেশ দেয়।

ঘটনার দিন সকালে প্রায় ৪ হাজার কর্মী কাজে ঢুকার পরপরই ১০ তলা ভবনটি ধ্বসে যায়। ভবনটি এমনভাবে ভেঙে পড়ে যে, সেখানে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে বেশ বেগ পেতে হয়।

কয়েক সপ্তাহ ধরে মানুষের খোঁজে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে অভিযান চালানো হয়। সারাদেশ থেকে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী সরকারি বাহিনীগুলোর সঙ্গে উদ্ধার কাজে যুক্ত হয়েছিলেন।

প্রতিদিনই এত এত মানুষের মৃত্যুর খবর আসছিল যে, ঘটনাস্থলের চারপাশ স্বজন হারানো মানুষের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠেছিল।

কত মানুষ মারা যায় রানা প্লাজায়?

সরকারি হিসাবে রানা প্লাজায় ১১৩৬ জন মারা গিয়েছেন। ধ্বংসস্তুপের নীচ থেকে ২৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়; যাদের অনেকেই পঙ্গু হয়ে যান।

পৃথিবীর ইতিহাসে শিল্প দুর্ঘটনায় একসাথে এত মানুষের মারা যাওয়ার ঘটনা খুবই বিরল।

রেশমার বেঁচে যাওয়া

দুর্ঘটনার ১৬দিন পর এমন এক ঘটনা ঘটে, যা সবাইকে বিস্মিত করে দেয়।

১০ মে ধ্বংসস্তুপের নীচ থেকে রেশমা নামের এক শ্রমিককে জীবিত উদ্ধার করা হয়। অক্ষত অবস্থায় তাকে বের করে নিয়ে আসা ব্যাপক হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল।

কারণ রেশমাকে এমন সময় বের করে আনা হয়, যখন ভবনের নীচে আর কেউ জীবিত থাকতে পারে এমন আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন প্রায় সবাই।

দেশের গণমাধ্যমগুলো একে অলৌকিক ঘটনা হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল। পরদিন দেশের প্রায় সব সংবাদপত্র পুরো প্রথম পাতা জুড়ে এই সংবাদ প্রচার করেছিল।

সরকারি সংস্থাগুলো রেশমাকে জীবিত উদ্ধারকে তাদের একটি সফলতা হিসেবে দাবি করেছিল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ব্যাপক গুরুত্ব পায় এই ঘটনা।

তবে রেশমার ঘটনা নিয়ে অনেকে সন্দেহও প্রকাশ করেছেন। ১৭ দিন এমন ধ্বংসস্তুপের নীচে কারও বেঁচে থাকাকে তারা অবিশ্বাস্য হিসেবেই দেখেছেন।