ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কার লাভ কার ক্ষতি?

দুর্বল সৌরভ

ভারত-পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার চির বৈরী দুই দেশ। দেশ দুটির জন্মই হয়েছে ঘৃণা-বিদ্বেষ আর বিরোধিতার মধ্য দিয়ে। কোটি কোটি মানুষের হিংসা নিয়ে দেশ ভেঙে আলাদা দেশ গঠনের এমন নজির, আধুনিক পৃথিবীতে খুব নেই।

প্রায় ৮০ বছর হতে চললেও দেশ দুটির সম্পর্ক স্বাভাবিক না হয়ে বরং আরও তিক্ত হয়েছে। ভারত-পাকিস্তানের বিরোধিতা শুধু সীমান্তে আটকে নেই। খেলাধুলা, বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক কূটনীতি- সব বিষয়েই দেশ দুটি বিরোধে জড়িয়ে থাকে।

অথচ সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক ভাবে এই দুই দেশের মানুষের সম্পর্ক কয়েক হাজার বছরের পুরনো।

এরপরও দেশ দুটির বিরোধিতা মূলত ধর্মকে ব্যবহার করে নানা উস্কানির মাধ্যমে। এ থেকেই আঁচ পাওয়া যায়, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কার লাভ কার ক্ষতি হবে।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কার লাভ কার ক্ষতি?

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কার লাভ কার ক্ষতি হবে- এর বিশ্লেষণ খুব সরল নয়। কিন্তু আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি, কি হতে পারে!

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কার লাভ?

ভারত-পাকিস্তানের সরকারের:

ভারত-পাকিস্তানের মত দেশে সরকারগুলো প্রায়ই নানা গনবিরোধী কাজের জন্য সমালোচিত হয়ে থাকে। অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বৈষম্য, দমন-পীড়ন ইত্যাদি কারণে সরকারের জনপ্রিয়তা তলানিতে চলে যায়।

এ সমস্ত দেশে উগ্র জাতিয়তাবাদী চেতনা সরকারকে লাভবান করে। মানুষ যখন অন্য দেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মনোভাব নিয়ে থাকে, তখন তারা নিজের দেশের সমস্যাগুলো এড়িয়ে যায়।

ভারতে মোদি সরকারের জনপ্রিয়তা যে কমে গেছে তা গত নির্বাচনেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। পাকিস্তানেও শাহবাজের সরকারের অবস্থান নড়বড়ে, বিতর্কিত উপায়ে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দেশটি রাজনৈতিক সংকটে রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সরকারের জন্যই ক্ষমতায় টিকে থাকতে মওকা এনে দিয়েছে যুদ্ধ উত্তেজনা। দেশপ্রেমের নামে মানুষ যে বিপুল সমর্থন জোগাবে, তা আদতে দুই দেশের সরকারের নেতৃত্বকে শক্তিশালী করবে।

অস্ত্র ব্যবসায়ী:

আধুনিক যুগে যুদ্ধ বাঁধানোর একটা বড় কারণ হলো অস্ত্র ব্যবসা। যুদ্ধ হলে লড়াইরত দেশগুলো সামরিক সরঞ্জাম বাড়াতে থাকে।

এই উত্তেজনায় আশেপাশের দেশগুলো সতর্ক হয়। তারাও বাড়াতে থাকে মরণাস্ত্রের জোগান।

সবমিলিয়ে যুদ্ধে লাভবান হয় অস্ত্র ব্যবসায়ী। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে সবচেয়ে লাভবান হবে সেসব দেশ, যারা যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরি করে।

ধর্ম ব্যবসায়ী

ভারত-পাকিস্তানের জন্মই হয়েছে ধর্মীয় বিভাজনের মাধ্যমে। ধর্ম সবসময় দুই দেশের অনগ্রসর মানুষদের তাঁতিয়ে তুলে। এই ফাঁকে দুই দেশেই ধর্ম ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হয়ে ওঠেছে।

নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে তারা অন্য ধর্মের মানুষদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ উগড়ে দেয়।

তাই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ কেবল সামরিক লড়াই নয়, ধর্ম যুদ্ধেও রুপ নেয়। এই দুই দেশ যুদ্ধে জড়ালে লাভবান হবে ধর্ম ব্যবসায়ীরা। যুদ্ধের বহু বছর পরেও ধর্মের নামে তারা ঘৃণা ছড়িয়ে যাবে, যারা আবার লাখ লাখ মানুষের সমর্থনও পেয়ে যাবে।

ব্যবসায়ী:

যুদ্ধের প্রথম ধাক্কায় বাজার দর বেড়ে যায় হু হু করে। সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিলে মানুষ ভয়ে বাড়তি টাকা দিয়ে আগাম পণ্য সংগ্রহ করতে থাকে।

আর এ পর্যায়েই শকুন দৃষ্টি নিয়ে হাজির হয় বড় বড় ব্যবসায়ীরা। তারা মজুদ করতে থাকেন পণ্য। এরপর বাড়ান দাম। বাড়তি মুনাফায় ফুলেফেঁপে ওঠে অনেক প্রতিষ্ঠান।

যুদ্ধে মানুষ মরে গুলিতে, রোগে, অনাহারে; আর রক্তচোষা বেনিয়ারা আসে লাভের হিসাব মেলাতে।

তাই ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে দুই দেশের বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হতে পারে।

রাজনীতিবিদ

যুদ্ধ হলে সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদও দেশপ্রেমের বুলি আওড়াতে থাকেন। তাতে আবার তাদের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে দুই দেশের রাজনীতিবিদরা লাভবান হবেন। রাজনীতিবিদদের প্রতি মানুষের যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তা দূর করার একটি সুযোগ পাবেন তারা।

সংস্কৃতি অঙ্গন:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ কালচারাল ওয়ারে রুপ নিবে। দুই দেশেই যুদ্ধ ও দেশপ্রেমের প্রচুর কবিতা, গান, নাটক, চলচ্চিত্র তৈরি হবে।

শিল্পীরা সৃজনশীলতা দেখানোর পাশাপাশি লোকরঞ্জনবাদী তৎপরতাও চালাতে পারবেন। ফলে তারা দ্রুত জনপ্রিয় হবেন, ভবিষ্যতে তাদের কাটতি বাড়বে।

অতীতে যুদ্ধ অনেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিকে কিংবদন্তী বানিয়েছে। ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধে শিল্পীদের সামনে খুলে দিবে লাভবান হওয়ার দুয়ার।

কিছু দেশ:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হলে দ্রুত বাড়বে জ্বালানি তেল, গ্যাসের দাম। এসব খনিজ সম্পদের মজুদ যেসব দেশের হাতে, তারা বাজার থেকে তুলে নিতে পারবেন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার।

যুদ্ধ শুরু হলে দুই দেশের কৃষি ও শিল্প উৎপাদন থমকে যাবে। ফলে অন্য দেশ থেকে তারা আমদানি বাড়াবে। তাতে ভোগ্যপণ্য  রপ্তানিকারক দেশগুলো বাড়তি লাভবান হবে।

ভারত-পাকিস্তানে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। যুদ্ধে জড়ালে এসব কোম্পানি বিনিয়োগ সরিয়ে অন্য দেশে চলে যাবে, লাভবান হবে সেসব দেশ।

ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ে নামলে তারা কিছু দেশ থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ আমদানি করবে। এই ফাঁকে বিপুল ডলার কামিয়ে নিবে অস্ত্র উৎপাদক দেশগুলো।

এভাবেই পরিস্থিতি কিছু দেশকে লাভবান হতে দিবে, ফুলেফেঁপে ওঠবে তাদের অর্থনৈতিক ভান্ডার।

সামরিক নেতৃত্ব:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে লাভবান হবে সামরিক নেতৃত্ব। কারণ যুদ্ধ শুরু হলে সেনানায়করা পুরো জাতির আশা-ভরসা হয়ে ওঠেন। তারা ও তাদের পরিবার বাড়তি সম্মান পেতে থাকে।

অবসর পরবর্তী জীবনেও এসব সেনানায়ক জাতির কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হন।

দুর্নীতিবাজ:

বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্রপ্রবণ দেশগুলোর অন্যতম পাকিস্তান-ভারত। যুদ্ধে হলে দুর্নীতিবাজরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠবেন।

কারণ যুদ্ধ এলে অস্ত্র কেনাবেচা হয়, ত্রাণ তৎপরতা চলে, বাজারে অস্থিরতা থাকে। এসব কিছুই দুর্নীতিবাজদের জন্য পোয়াবোরো। সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে তারা কামিয়ে নিবেন দু’হাত ভরে।

এনজিও:

যুদ্ধ সঙ্গে করে নিয়ে আসে দারিদ্রতাকে। পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ হলে লাখ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়বে। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা ভেঙে পড়বে।

এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য দেশি-বিদেশি এনজিওদের দেখা মিলবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা বড় বড় ফান্ডও পেয়ে যাবেন।

কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের মত দেশে দরিদ্রদের জন্য আসা অর্থের বড় অংশই নয়ছয় হয়ে যায়। অনেক এনজিও’র বিরুদ্ধে টাকা মেরে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ফলে যুদ্ধে এনজিওদের রমরমা যে চলবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কাদের ক্ষতি হবে?

ভারতের অর্থনীতি:

গত কয়েক দশকে ভারতের অর্থনীতি বেশ এগিয়ে গেছে। বিশ্বে ভারত এখন অর্থনৈতিক সুপার পাওয়ারগুলোর একটি।

যুদ্ধ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতের অর্থনীতির। অনিশ্চিত পরিবেশে দেশটি থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নিবে বিশ্বের বাঘা বাঘা কোম্পানিগুলো।

দেশটির অবকাঠামোর যে পরিমাণ অগ্রগতি হয়েছে, তা নিমেষেই মুখ থুবড়ে পড়বে। এসবের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের কোটি কোটি মানুষের জীবনে অন্ধকার নেমে আসবে।

পাকিস্তানের অর্থনীতি:

পাকিস্তানের অর্থনীতির আকার ছোট। দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগও কম। কিন্তু মনে রাখতে হবে, পাকিস্তান ঋণে জর্জরিত দেশ।

যুদ্ধে জড়ালে দেশটির অর্থনীতির অবস্থা এমন নাজুক হতে পারে যে, অসংখ্য মানুষ কেবল খাবারের অভাবে মারা যেতে পারে।

একইসঙ্গে দুর্বল অর্থনীতি পাকিস্তানের যুদ্ধের পিছনে ব্যয় টানাকেও অসম্ভব করে তুলতে পারে।

বিশ্ব অর্থনীতি:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জড়ালে এর ধাক্কা পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে। টালমাটাল হয়ে যাবে বিশ্ব বাজার। যার ফলে মানুষকে পণ্যের পেছনে আরও ব্যয় বাড়াতে হতে পারে।

ভারত ভেঙে যেতে পারে:

ভারতের সেভেন সিস্টার্সের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য বিদ্রোহী গোষ্ঠী রয়েছে। তারা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে।

ভারত দীর্ঘস্থায়ী লড়াইয়ে জড়িয়ে গেলে বিশ্বের মোড়লরা এসব বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে আড়ালে অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে।

ফলে যুদ্ধের পাশাপাশি নিজের দেশের বিদ্রোহীদের সামলানো কঠিন হবে ভারতের জন্য। তাতে ভূখন্ড হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে দেশটিকে।

পাকিস্তানও ভাঙতে পারে:

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে স্বাধীনতার দাবিতে কয়েক দশক ধরেই লড়াই চলছে। এছাড়া আফগান সীমান্তে তালেবানদের সঙ্গেও টানাপোড়েন চলছে পাকিস্তানের।

ফলে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে পাকিস্তান আরেক দফা ভাঙনের মুখে পড়তে পারে। দেশ ভেঙে জন্ম নিতে পারে নতুন দেশ।

সাধারণ সৈন্য ও তাদের পরিবার:

পাকিস্তান ও ভারত- উভয় দেশেরই বিপুল সামরিক শক্তি রয়েছে। ফলে পুরোদমে যুদ্ধে শুরু হলে তা ব্যাপক প্রাণহানি ঘটাবে। আর সম্মুখ সমরে প্রাণ হারাবে অসংখ্য সৈন্য।

এই যুদ্ধ হবে দেশ দুটির সৈন্যদের জন্য ও তাদের পরিবারের জন্য এক বেদনাদায়ক বাস্তবতা; যার ক্ষত অনেকদিন বয়ে বেড়াতে হবে।

সাধারণ মানুষের প্রাণহানি:

ভারত- পাকিস্তান যুদ্ধে কার লাভ কার ক্ষতি? এই প্রশ্নে এক নম্বরে থাকবে সাধারণ মানুষ, মূলত তারাই হবে ভুক্তভোগী।

কারণ ভারত-পাকিস্তানে শতকোটি মানুষের বসবাস। ছোট স্কেলে যুদ্ধ হলেও এ অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ মারা যাবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের এক জরিপে বলা হয়েছিল, ২০২৫ সালে ভারত পাকিস্তান পরমাণু যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে। এমন কিছু হলে মারা যাবেন অন্তত ১২ কোটি মানুষ!

বুঝতেই পারছেন সাধারণ মানুষের কি পরিমাণ প্রাণহানি হবে!

বাস্তুচ্যুতি:

শুধু প্রাণহানি না, যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারাবে। এটি কোন একটি দেশের ক্ষেত্রে ঘটবে না, সীমান্তের দুই পাড়েই সাধারণ মানুষ এ ধরণের ক্ষতির মুখে পড়বে।

অনাহারে মৃত্যু:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যেতে পারে অনাহারে। কারণ দুই দেশের যুদ্ধ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তকে পথের ফকির বানিয়ে দিতে পারে।

একই সঙ্গে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তাতে হু হু করে বাড়বে খাদ্যপণ্যের দাম।

সবমিলিয়ে লাখ লাখ মানুষ খাবার যোগানোর সামর্থ্য হারাবে। তাদের অনেকের মৃত্যু হবে অনাহারে।

রোগে মৃত্যু:

যুদ্ধ নানা ধরণের রোগ ডেকে আনে। আশ্রয়কেন্দ্রের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ মহামারী পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ফলে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হলে হাজার হাজার মানুষ রোগে ভুগে মারা যেতে পারেন। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অনেকক্ষেত্রেই সাধারণ স্বাস্থ্যসেবাও হয়তো জুটবে না।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: কার লাভ কার ক্ষতি?

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা:

হাজার হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ভারত পাকিস্তানের অর্থনীতিকে গতিশীল রেখেছে। যুদ্ধ তাদের প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

একদিকে উৎপাদন চালানোর মত রসদ তারা পাবেন না। অন্যদিকে পণ্য বিক্রির মত গ্রাহকও না মিলতে পারে।

সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ক্ষুদ্র উদ্যােক্তারা।

নারী, শিশু ও বয়স্ক জনগোষ্ঠী:

যুদ্ধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্পর্শকাতর জনগোষ্ঠী। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে নারী, শিশু ও বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জীবনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

ব্যবসায়ী:

যুদ্ধের বাজারে জরুরী পণ্য ছাড়া অন্য বিলাসী পণ্যে আগ্রহ থাকে না ক্রেতাদের। ফলে অর্থনীতির আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত পাকিস্তানে বিলাসী পণ্যের যে বিপুল বাজার তৈরি হয়েছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ফলে ব্যবসায়ীদের বড় অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

পার্শ্ববর্তী দেশ:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো। আকাশ পথে ভিন্ন পথ ব্যবহার করতে গিয়ে তাদের খরচ বাড়বে।

সমুদ্র পথে তাদের আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হবে। তাতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেড়ে যাবে, যা দেশগুলোকে অনিরাপদ করে দিতে পারে।

সবচেয়ে ঝুঁকির বিষয় হল- যেকোন পক্ষের উস্কানিমূলক কার্যক্রম পাশের তৃতীয় কোন দেশকেও যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলতে পারে।

বিশ্বের দরিদ্র মানুষ:

ভারত-পাকিস্তানে ১৫০ কোটি মানুষের বসবাস। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতি ৫ জন মানুষের ১ জন এ অঞ্চলে বসবাস করে।

এত বিপুল পরিমাণ মানুষ যুদ্ধে জড়িয়ে গেলে তা বিশ্ব অর্থনীতিকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ফলে সারাবিশ্বেই পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এর ভুক্তভোগী হবে মূলত সারা পৃথিবীর দরিদ্র মানুষ।

বিনিয়োগকারী:

ভারত-পাকিস্তানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিনিয়োগকারীরা অর্থ লগ্নি করে থাকেন। এই দুই দেশের যুদ্ধ মানে এসব বিনিয়োগ অনিশ্চয়তায় পড়বে। ফলে বিনিয়োগকারীরা বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়বেন।

বেসরকারি চাকরিজীবি:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে দেশ দুটির বহু প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। আবার অনিশ্চিত পরিবেশে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা গুটিয়ে নিবে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করেন তারা বেকার হয়ে পড়বেন।

আর এই দুই দেশের জনগণের বড় অংশ নির্ভরশীল বেসরকারি চাকরি ওপর। ফলে যুদ্ধ হলে হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বেন ভারত পাকিস্তানের বেসরকারি চাকরিজীবী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

একই সঙ্গে এসব দেশে কাজ করা অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও কাজ হারাবেন।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: কার লাভ কার ক্ষতি?

ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে মূলত ক্ষতি হবে সাধারণ মানুষের। তাদের কেউ বেকার, কেউ চাকরিজ,  কেউ উদ্যোক্তা, কেউবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

অন্যদিকে লাভবান হবে কতিপয় রাজনীতিবিদ, অস্ত্র ব্যবাসায়ী ও বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

সবশেষে বলা যায়- যুদ্ধে যেই জিতুক, হেরে যাবে কোটি কোটি মানুষ! যার ক্ষত এই অঞ্চলকে বয়ে বেড়াতে হবে কয়েক দশক ধরে। একটি প্রজন্ম বেড়ে ওঠবে অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে।