[সতর্কতা: প্রতিবেদনটি অস্বস্তিকর মনে হতে পারে]
পৌঁণে ৪ বছরে ১০ জন নারীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত চীনের এক শিক্ষার্থী লন্ডনের আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন।
পিএইচডি করতে লন্ডনে যাওয়া ঝেনহাও জুকে এখন যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের ‘সবচেয়ে ভয়ংকর যৌন নিপীড়ক’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
যাবজ্জীবন শাস্তি হিসেবে তাকে ন্যূনতম ২৪ বছর কারাগারে থাকতে হবে।
ঝেনহাও জু ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের মে মাসের মধ্যে লন্ডনে ৩ জন এবং চীনে আরও ৭ জন নারীকে মাদকাসক্ত করে ধর্ষণ করেছিলেন।
লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, চীনা এই শিক্ষার্থী আরও কয়েক ডজন নারীকে যৌন নিপীড়ন করে থাকতে পারেন।
বিচারিক কার্যক্রম শুরুর পর ২৪ জন নারী ঝেনহাও জু’র বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন।
রায় ঘোষণার সময় বিচারক রোজিনা কটেজ কেসি জুকে “খুব মেধাবী যুবক” হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যে তার ‘যৌন নিপীড়ক’ পরিচয় লুকাতে ‘ভদ্রতার মুখোশ’ ব্যবহার করেছিল।
আরেক বিচারক কটজ বলেছেন, জু নিজের আনন্দের জন্য নারীদের ‘যৌন খেলনা’ হিসেবে দেখেছেন এবং ‘নির্মমভাবে’ আচরণ করেছেন; যার প্রভাব ছিল ‘ভয়ংকর ও দীর্ঘমেয়াদী’।
আদালত ধর্ষণের ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক’ ভিডিও দেখেছিল জানিয়ে কটজ বলেন, “যারা দেখেছিল, তাদের কেউ কেউ কেঁদেছিল”।
দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের এলিফ্যান্ট অ্যান্ড ক্যাসেলের বাসিন্দা জুকে ১১টি ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে দুটি অপরাধ ছিল একজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে।
ধর্ষণের পাশাপাশি ১০টি ‘চরম অশ্লীল ছবি’ রাখার অভিযোগ এবং তিনটি যৌন অপরাধের উদ্দেশ্যে মাদক রাখার অভিযোগেও জু দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।
জু ধর্ষণের শিকার হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা নারীদের নয়টি ভিডিও ধারণ করেছিলেন।
লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা পরিদর্শক রিচার্ড ম্যাকেঞ্জি বলেন, “জু আমাদের দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ যৌন শিকারিদের একজন”।
‘ওকে কখনো ক্ষমা করো না’
ধর্ষণের শিকার একজন নারী জানিয়েছেন, জু তাকে অতিরিক্ত পরিমাণে মদ্যপান করতে বাধ্য করেছিল এবং তাকে তার ফ্ল্যাট থেকে বের হতে দেয়নি।
“আমি মানুষের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। এই ঘটনার আগে, আমি জানতাম না যে একজন মানুষ এত খারাপ কাজ করতে পারে। এখন অপরিচিতদের সাথে দেখা হলেই সেই ভয়ংকর মুহূর্তের কথা মনে পড়ে যায়।”
চীনে থাকা আরেকজন নারী জানিয়েছেন, জু ২০২১ সালের অক্টোবরে রাসেল স্কয়ারের কাছে তার ছাত্রাবাসে অজ্ঞান অবস্থায় ধর্ষণ করেছিল।
“আমি জানি শব্দগুলি কখনই এই ক্ষতের গভীরতা পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারবে না। তবে একটি জিনিস নিশ্চিত, সেই রাতে যা ঘটেছিল তা চিরতরে আমার আত্মায় গেঁথে গেছে।
“তার মুখ, তার অভিব্যক্তি- তারা কখনই আমাকে ছেড়ে যাবে না। আমি কখনই তাকে ক্ষমা করব না।”
লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ডার কেভিন সাউথওয়ার্থের আশা, শাস্তি হওয়ায় জু আর অন্য নারীদের ক্ষতি করতে পারবে না।
“এই সত্য সেইসব নারীদের জন্য সামান্য সান্ত্বনা হিসেবে কাজ করবে, যারা অপরিমেয়ভাবে কষ্ট পেয়েছে।”