পুতুল সরকার
ছাতা- আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ।
রোদ হোক বা বৃষ্টি, ছাতার তুলনা মেলা ভার। ছায়ার সঙ্গেই যার নাম জড়িয়ে, সেই ছাতার রয়েছে হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাস।
ছাতার প্রাচীণ শিকড়
আজ আমরা ছাতাকে মূলত বৃষ্টির প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার করলেও, প্রাচীনকালে এর প্রধান ব্যবহার ছিল সূর্যের প্রখর রোদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।
ইংরেজি ‘Umbrella’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ‘Umbrage’ থেকে, যার অর্থ ‘ছায়া’।
অপরদিকে, হালকা ছাতাকে ‘Parasol’ বলা হয়- যা এসেছে ইতালীয় শব্দ Para (প্রতিরক্ষা) ও Sole (সূর্য) থেকে।
কোথায় আবিষ্কার হয়েছিল ছাতা?
ছাতার উৎপত্তিস্থল নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। কেউ বলেন চীন, কেউ বলেন মিশর বা গ্রিস।
তবে অধিকাংশ গবেষকের মতে, চীনেই প্রথম ছাতার ব্যবহার শুরু হয় প্রায় ৪ হাজার বছর আগে।
প্রাচীন চিত্রকর্মগুলোতেও ছাতার উপস্থিতি দেখা যায়।
চীনে প্রথমদিকে ছাতা ব্যবহার ছিল শুধু সম্ভ্রান্ত ও ধনী নারীদের জন্য। পুরুষেরা অনেক পরে ছাতার ব্যবহার শুরু করেন।
ছাতার বিবর্তনের ধারা
খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ সালের দিকে চীনারা ছাতা তৈরিতে গাছের পাতা ও ডালপালা ব্যবহার করত। পরবর্তীতে সিল্ক, কাগজ, চামড়া, এমনকি পশুর হাড় দিয়ে ছাতার কাঠামো ও নকশা তৈরি হতো।
খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দে আধুনিক রূপের ছাতার গোড়াপত্তন হয়।
আধুনিক ছাতার পথচলা
১৮৩০ সালে লন্ডনে খোলা হয় বিশ্বের প্রথম ছাতার দোকান- জেমস স্মিথ অ্যান্ড সন্স।
আশ্চর্যের বিষয়, এই দোকানটি আজও সক্রিয় রয়েছে!
১৮৫০ সালে ইংরেজ শিল্পপতি স্যামুয়েল ফক্স ছাতায় প্রথম স্টিলের রড ব্যবহার করেন, যা ছাতাকে হালকা ও টেকসই করে তোলে।
১৮৫২ সালে ফরাসি উদ্ভাবক গেজ সুইচে খোলা যায় এমন ছাতা তৈরি করেন।
পরে ১৯২০ সালে হ্যানস হাপটে ছোট ও ভাঁজযোগ্য পকেট ছাতা তৈরি করেন, যার নাম দেন ‘লর্ড অ্যান্ড লেডি’।
ছাতার ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বছর ১৯৬০- এই সময়েই পলেস্টার কাপড় ছাতায় ব্যবহার শুরু হয়।
ভবিষ্যতের ছাতা
ছাতার ব্যবহার যতটা ঐতিহাসিক, ততটাই প্রাসঙ্গিক আজকের দিনে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ছাতাও পরিবর্তিত হচ্ছে।
ভবিষ্যতে হয়তো এমন ছাতাও তৈরি হবে, যা সৌরশক্তি থেকে মোবাইল চার্জ করতে পারবে বা বৃষ্টির পূর্বাভাস জানাবে।
বর্তমানে ছাতা বিভিন্ন ডিজাইন, আকার এবং উপকরণে পাওয়া যায়, যা দৈনন্দিন জীবনে একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ।
ছাতা শুধু বৃষ্টি বা রোদ থেকে বাঁচতেই নয়, ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।