দেড় মাসের শিশু ইউসুফ ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ে বুধবার যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন।
এই শিশুর চাচা আদম আল সাফাদি জানিয়েছেন, নিহত শিশুর মা না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ফলে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে অক্ষম হয়ে পড়েন।
বড়দের খাবারের মত শিশু খাদ্যও গাজায় পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে।
ফলে ইউসুফের ভাগ্যে ফর্মুলা দুধও মেলেনি। গাজার আরও অনেক শিশুর মত তাকেও না খেয়েই জীবন থেকে বিদায় নিতে হলো।
প্যালেস্টাইনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় গাজায় না খেয়ে মারা গেছেন ১৫ জন। গত কয়েক সপ্তাহে না খেয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা ১০১।
এই ১০১ জনের মধ্যে ৮০ জনই ইউসুফের মতো শিশু।
ইসরাইলি হামলার পর থেকেই গাজায় খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আটা-ময়দার মত জরুরি খাদ্য পণ্য পেতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে।
কোন কোন খাবারের দাম কয়েক হাজার গুণ বেড়ে গেছে।
খাবার সংকটের পাশাপাশি ইসরাইলের বাধায় ত্রাণ সহায়তাও পাচ্ছে না গাজাবাসী। যে সীমিত পরিমাণ খাবার সহায়তা দেয়া হচ্ছে, সেখানেও হামলা চালিয়ে মানুষ মারছে তেল আবিব।
গাজায় খাবারের যন্ত্রণা
গাজার ১৫ বছরের আহমেদ ফরহাদের ওজন এখন মাত্র ২০ কেজি। পুষ্টির অভাবে তার মেরুদণ্ডও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।
গাজার হাসপাতালগুলোতে এমন অনেক শিশু রয়েছে, যারা পুষ্টির অভাবে হাত-পা নাড়াতে পারছে না; অক্সিজেন নিতে পারছে না।
মুহাম্মদ জুনদিয়া নামের গাজার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, তিনি ৫ দিন ধরে না খেয়ে আছেন।
গাজার হাসপাতালগুলোতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চিকিৎসক-নার্সরাও খাবার পাচ্ছেন না। খাবারের অভাবে বহু স্বাস্থ্যকর্মী অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন।
আল নাসর শিশু হাসপাতালে দেখা যায়, ডাক্তার-নার্সরা ক্ষুধার্ত অবস্থায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন ডিয়ার্দ্রি নুনান বলেন, হাসপাতালে খালি পাত্র নিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষ পড়ে থাকছে খাবারের আশায়।
এই চিকিৎসক বলছেন, যত দিন যাচ্ছে তত তার সহকর্মীরা চিকন ও দুর্বল হয়ে পড়ছেন। তারা ডিউটি করতে অক্ষম হয়ে পড়ছেন।
চিকিৎসক-নার্সদের কাজ করতে অক্ষম হয়ে পড়াকে ‘ভয়ংকর দুর্দশা’ বলছেন ডিয়ার্দ্রি নুনান।
গাজার আল-শিফা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান মুতাজ হারার জানান, তার হাসপাতলে ইসরাইলি হামলায় আহতদের পাশাপাশি বড় একটি অংশ আসছে অপুষ্টির সমস্যা নিয়ে।
“খাবারের অভাব, পুষ্টির অভাবে মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।”
এই চিকিৎসক বলছেন, খাদ্যসংকটে গাজার মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠা নতুন কোন ঘটনা নয়, কিন্তু এই সংখ্যা এখন ভয়ংকরভাবে বাড়ছে।