কামরুল হাসান
শহরে এখন ঘনঘোর ক্লান্তি। শহরের আকাশে নিস্তব্ধতা, ধুলোর রাজ্যে গূঢ় নিশ্চলতা। মানুষের হৃদয় ভগ্নখন্ড, গভীর শোকে আচ্ছন্ন। জুলাই মাস যেন অভিশপ্ত। জুলাই শুধু লাশ নেয়, দেয় না কিছুই!
রাজধানীর উত্তরায় দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক ঘটনা পুরো দেশের হৃদয়ে গভীর দাগ কেটেছে।
স্কুলের হায়দার হল নামের একটি ভবনের ক্যানটিনের ছাদে আছড়ে পড়ে বিমানটি! সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নার্সারি থেকে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের। অথচ সেই সময়ে অন্যন্য দিনের মতোই তারা মাঠে খেলছে।
কোমলমতি শিশুদের নিহতের সংখ্যা ক্রমে ক্রমে বাড়ছে। পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির আহমেদ সাগরও নিহত হয়েছেন। ২০ জন শিক্ষার্থীকে বাঁচিয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে শিক্ষিকা মাহেরীন জীবন দিলেন।
এমন ঘটনায় পুরো দেশ স্তব্ধ, মানুষের মন শোকের ভারে নুইয়ে আছে। ছোট্ট ছোট্ট কোমলমতি ফুলগুলোর আগুনে দগ্ধ শরীরের ছটফটানো, ব্যথায় কুঁকড়ানো গগনবিদারী চিৎকার দেখে কোন মানবীয় মন শান্ত থাকার কথা না। দেশের প্রতিটি অঙ্গনের মানুষের মাঝে গভীর শোক।
রাজধানীর ন্যাশনাল বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল বার্ন ইউনিট, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, উত্তরা উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ, মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে আগুনে দগ্ধ এই শিশুরা।
আগুনে দগ্ধ রোগীদের তীব্র রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। এমনটি তাপীয় আঘাত ও অস্ত্রোপাচারের কারণে সরাসরি রক্তক্ষরণের ফলে ঘটে। আগুনে দগ্ধ হওয়ার ফলে শরীর টিস্যু ও রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সরাসরি লোহিত রক্তকনিকা (RBC) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে রক্তে অক্সিজেনের প্রবাহ কমে যায়, যাদের শরীরে ২০ শতাংশেরও অধিক পুড়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে তরল পুনজ্জীবন (Fluid Resucitation) অপরিহার্য হয়ে পড়ে, তাই সে সময় রক্তের প্রয়োজন হতে পারে।
এসময় রোগীর রক্তের গ্রুপ জানা জরুরি। একটি মূল্যবান জীবনের বাঁচা মরা নির্ভর করে অনেকাংশে এর ওপর। কিন্তু হতাশাজনক ব্যাপার- ঢাকা শহরের স্বনামধন্য মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডে শুধু শিক্ষার্থীর নাম, শ্রেণি আর কোড নম্বর আছে! অন্য কোন তথ্য নেই!
শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডে তার রক্তের গ্রুপ এবং অভিভাবকের নম্বর থাকা অপরিহার্য। অসম্পূর্ণ তথ্য সম্বলিত আইডি কার্ড জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কোন কাজে আসেনা কার্যত। এমন করুণ কঠিন মর্মন্তুদ মুহূর্তে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা লাগছে! যে মুহূর্তে ১ সেকেন্ড সময় মহামূল্যবান, সে সময় রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করতে হচ্ছে!
মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের জন্য এমনটি গুরুতর অপরিণামদর্শীতার পরিচয়, এমন বেহালিপনার জন্যও জীবন ঝুঁকির মুহূর্তে পড়েছে। এমন অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা দেশে মাঝে মাঝেই ঘটে থাকে। সুতরাং রক্তের গ্রুপ ও অভিভাবকের যোগাযোগ নম্বর ব্যতিত আইডি কার্ড থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক।
শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড কিংবা পেশাগত জীবনের পরিচিত পত্রে রক্তের গ্রুপ থাকা বাঞ্ছনীয়। জরুরি মুহূর্তে এই ছোট্ট সাবধানতা একটি জীবন বাঁচিয়ে দেয়ার অন্যতম উপায় হতে পারে।
এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইডি কার্ডে শিক্ষার্থীদের রক্তের গ্রুপ ও অভিভাবকের নম্বর থাকা জরুরি। দেশের প্রতিটি নাগরিকের তার রক্তের গ্রুপ জানতে হবে। এ ব্যাপারে গণসচেতনতার বিকল্প নেই।
প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় বাধ্যতামূলক করা হোক। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
ই-মেইল: kamruljnu02bd@gmail.com