গরীব বাড়ছে ফ্রান্সে, ভ্রমণের সামর্থ্য নেই ৪০ শতাংশ ফরাসির

জোয়ান্না ইয়র্ক

ফ্রান্সে প্রতি ১০ জনের ৪ জনই এখন আর ছুটিতে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার সক্ষমতা রাখেন না।

নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে- দেশটিতে গত ৪০ বছর ধরেই এ অবস্থা চলছে, তবে রেকর্ড হারে গরীব মানুষ বাড়ায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

গ্রীষ্মের ছুটিকে সামনে রেখে সম্প্রতি ফরাসি সংস্থা আই ওভজারভেটোরি দেস ইনগ্যালিটেস গবেষণাটি চালিয়েছে।

গবেষণা অনুসারে, ফ্রান্সে ৪০ শতাংশ মানুষ ছুটি কাটাতে বাড়ির বাইরে যেতে পারেন না।

বড় কর্মকর্তাদের মধ্যে ছুটিতে যাওয়ার হার ৭৮ শতাংশ হলেও শ্রমজীবী শ্রেণির ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ৪৭ শতাংশ।

গবেষকরা বলছেন, সামাজিকভাবে যত উচু তলায় ওঠা যায়, ছুটি কাটানোর সুযোগ তত বাড়ে।

উচ্চবিত্তদের দ্বিতীয় বাড়িতে যাওয়া কিংবা বিনা খরচে ছুটি কাটানোর সুযোগ অনেক বেশি থাকে।

বিপরীতে নিম্নআয়ের মানুষদের ছুটি কাটাতে আর্থিক সহায়তা খুবই সীমিত এবং অপ্রতুল।

একা থাকেন এমন নারীরা ভ্রমণে যেতে সবচেয়ে অক্ষম।

২০২০ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী, ফ্রান্সে ৭৮ শতাংশ নারী কখনো একা ভ্রমণে যাননি, যার প্রধান কারণ নিরাপত্তা উদ্বেগ।

একজন উপার্জন করেন, এমন পরিবারও আর্থিক কারণে ছুটিতে ঘুরতে যেতে পারেন না।

নিম্নআয়ের মানুষদের ক্ষেত্রে ছুটির সময় পেলেও ভ্রমণের খরচ তাদের জন্য অসহনীয়।

গবেষকরা বলছেন, আর্থিক সংকট বিবেচনায় নিয়ে গরীব পরিবারগুলো স্বাস্থ্য বা খাদ্য ব্যয় কিছুটা করে কমিয়ে দিচ্ছে; আর প্রথমেই বাদ দিচ্ছে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা।

নিম্ন আয়ের যেসব মানুষ ঘুরতে যান, তারা সাধারণত একবারেই লম্বা ভ্রমণে যান; যাতে একাধিক ভ্রমণের খরচ থেকে বাঁচা যায়।

ফ্রান্সের জাতীয় পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, মধ্যম ও উচ্চস্তরের পেশাজীবীরা বছরে গড়ে ২৬ রাতের ছুটি কাটান, যেখানে শ্রমজীবীরা কাটান গড়ে ১১ রাত।

গত ৪০ বছরে দেশটিতে ছুটিতে যাওয়ার হার প্রায় ৬০ শতাংশে স্থির হয়ে আছে, কারণ ফ্রান্সের নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনমান স্থবির হয়ে পড়েছে।

এ চিত্র পরিবর্তনেরও কোনো লক্ষণ নেই। কারণ বর্তমানে ফ্রান্সে দারিদ্র্য পরিস্থিতি গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। গত এক বছরে নতুন করে সাড়ে ৬ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্রমণের এ চিত্র ফ্রান্সে ব্যাপকভাবে বেড়ে চলা সামাজিক বৈষম্যকে তুলে ধরেছে।

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ভ্রমণ প্রণোদনার ব্যবস্থা করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

এক নজরে

ফ্রান্সে প্রতি ১০ জনের ৪ জন মানুষ ছুটি কাটাতে বাড়ির বাইরে যেতে পারেন না।

৪০ শতাংশ মানুষ ছুটি কাটাতে অক্ষম।

৭৮ শতাংশ শীর্ষ কর্মকর্তা ছুটি কাটান।

৪৭ শতাংশ শ্রমজীবী শ্রেণির ছুটি কাটানো সম্ভব হয়।

বছরে ২৬ রাত ছুটি কাটান উচ্চপদস্থ পেশাজীবীরা।

বছরে ১১ রাত ছুটি কাটান শ্রমিক শ্রেণির মানুষ।

একা থাকা নারী, একা উপার্জন করা পরিবার, শ্রমজীবি এলাকার তরুণরা ভ্রমণ থাকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য ও খাদ্য ব্যয়ের পর সঞ্চয় না থাকায় ভ্রমণে যেতে পারেন না অনেকে।

ফ্রান্সে ১৫.৪% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছেন, গত ১ বছরে সাড়ে ৬ লাখ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে নেমে গেছে।