৩ ক্যাটাগরিতে বিদেশি শ্রমিক নিবে সৌদি আরব

মোহাম্মদ আল-কিনানি, জেদ্দা

বিদেশি শ্রমিকদের কাজের বড় বাজার সৌদি আরব।

বাংলাদেশ-ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ শ্রমিক দেশটিতে কাজ করছেন।

প্রতিদিনই সৌদি আরবের শ্রম বাজারে প্রচুর বিদেশি ঢুকছেন।

সৌদি সরকার নতুন নতুন যেসব উদ্যােগ গ্রহণ করছে, তাতে দেশটিতে আরও অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন।

তবে এখন থেকে বিদেশি শ্রমিক নিতে নতুন মানদণ্ড অনুসরণ করবে রিয়াদ।

দেশটির ভবিষ্যত পরিকল্পনা সামনে রেখেই এই পথে এগিয়েছে রিয়াদ।

নতুন পদ্ধতিকে ‘দক্ষতা-ভিত্তিক ওয়ার্ক পারমিট’ বলছে সৌদি সরকারের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন বিভাগ।

কেন দক্ষ শ্রমিক খুঁজছে সৌদি আরব?

সৌদি সরকার বলছে, তারা বিশ্বের প্রতিভাবান মানুষদের নিজেদের দেশে কাজে লাগাতে চায়।

সে জন্য দক্ষতা-ভিত্তিক ওয়ার্ক পারমিট ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা বিদেশি শ্রমিকদের বাছাই করতে চায়।

নতুন করে যারা সৌদি আরবে কাজ করতে যেতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য চলতি মাস থেকেই এই ব্যবস্থা প্রয়োগ শুরু করেছে রিয়াদ।

মূলত ২০৩০ সালের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই এ পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি।

আগামী ৫ বছরে সৌদি আরব অবকাঠামো, প্রযুক্তি, অর্থনীতি, পর্যটনসহ বিভিন্ন সেক্টরে আমূল পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে।

সেজন্য বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে রিয়াদ। এ কার্যক্রম সহজ করতেই দেশটির শ্রমবাজারকে সুবিন্যস্ত করতে হচ্ছে।

একইসঙ্গে আরও মেধাবী ও বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন তরুণদের চাহিদা অনুভব করছে সৌদি সরকার।

কি ধরণের শ্রমিক নিবে সৌদি সরকার?

সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রী আহমেদ আল-রাজি ৩ ক্যাটাগরিতে শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনা জানিয়েছেন।

তার ভাষ্য- সরকার বিদেশী কর্মীদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, কারিগরি দক্ষতা, বেতন এবং বয়স বিবেচনা করবে।

এসবের উপর ভিত্তি করে উচ্চ দক্ষতা, দক্ষ এবং মৌলিক- এই ৩ ক্যাটাগরিতে শ্রমিকদের ভাগ করা হবে।

এর মধ্যে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিকরা দেশটির বিভিন্ন সেক্টরের শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করবে।

দক্ষ শ্রমিকরা সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ের কাজগুলো করবে।

আর মৌলিক দক্ষতা সম্পন্ন শ্রমিকরা গাড়ি চালানো, পরিচ্ছন্নতার মত সাধারণ কাজগুলো করবে।

আহমেদ আল রাজি আশা করছেন- এর ফলে সৌদি শ্রমবাজারে দক্ষ শ্রমিকদের যে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে তা দ্রুত কাটানো সম্ভব হবে।

এটিকে ভিশন ২০৩০ এর অধীনে সৌদি আরবের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলো পূরণের বৃহত্তর কৌশলের অংশ হিসেবে দেখছেন তিনি।

“এই পদক্ষেপের লক্ষ্য কর্মীদের কর্মক্ষমতা বাড়ানো, সৌদি শ্রম বাজারে দক্ষতা-অভিজ্ঞতার সমন্বয় করতে বিশ্বের প্রতিভাবানদের আকৃষ্ট করা, বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হওয়া এবং উদ্ভাবন ও ব্যবসায়িক মডেলের উন্নয়ন করা”, বলেন আল রাজি।

এজন্য ডিজিটাল মূল্যায়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার।

যার ফলে কর্মী নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, যোগ্য কর্মী পাওয়া ও কম দক্ষ শ্রমিকের উপর নির্ভরতা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসার আশা করছে সৌদি আরব।

সৌদি আরবে বিদেশি শ্রমিকের চাহিদা কেমন?

সৌদির জেনারেল অথরিটি ফর স্ট্যাটিস্টিক্সের তথ্য অনুযায়ী, কাজের চাহিদা বাড়ায় দেশটিতে বেকারত্বের হার দ্রুত কমছে।

প্রতিষ্ঠানটি পরিসংখ্যান বলছে- সৌদি আরবে ১৫.৭ মিলিয়ন প্রবাসী শ্রমিক কাজ করছে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৪৪.৪ শতাংশ।

সৌদিতে কর্মক্ষম মানুষের (১৫-৬৪ বছর) ৮৯.৯ শতাংশই বিদেশি।

অর্থাৎ, দেশটির উৎপাদন খাত বিদেশি শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীল।

বর্তমানে ১২৮টি দেশের শ্রমিক সৌদি আরবে বিভিন্ন কাজে যুক্ত আছে।

নতুন পদ্ধতিতে দেশটিকে ঢুকতে হলে প্রকৌশল, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে বিদেশী কর্মীদের শিক্ষাগত ও পেশাদার যোগ্যতা যাচাই করা হবে।

সেজন্য সরকার চাকরিদাতাদের কর্মীদের দক্ষতা যাচাই-বাছাই করতে বলছে।