ট্রাম্প, নেতানিয়াহু ‘আল্লাহর শত্রু’: ফতোয়া

ট্রাম্প নেতানিয়াহু

ইরানে হামলা চালানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘আল্লাহর শত্রু’ উল্লেখ করে ইরানে ফতোয়া জারি হয়েছে।

ইসরায়েল-ইরানের ১২ দিনের যুদ্ধ শেষ হওয়ার তেহরান যখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরতে শুরু করেছে, তখন এই ফতোয়া এল।

গত ১৩ জুন ইরানে আকস্মিক হামলা শুরু ইসরায়েল। এরপর ইরান পাল্টা আঘাত হানলে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তেল আবিব ও তেহরান।

যুদ্ধে ইসরায়েলের বোমা হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী মারা গেছেন। ইরানের হামলায় ইসরায়েলেরও বেশ কিছু শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর যুদ্ধ শেষ হয়।

এর জবাবে কাতারে মার্কিন বিমান ঘাটি লক্ষ্য করে হামলা চালায় তেহরান।

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে দুই দেশের প্রায় হাজার খানেক মানুষ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ৫ হাজারের বেশি মানুষ। দুই দেশেই সামরিক-বেসমারিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দুই পক্ষই যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়ায় পরিস্থিতি এখন আপাতত শান্ত রয়েছে। যুদ্ধের ক্ষত নিয়েই মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে।

ফতোয়ায় কি আছে?

ইরানের একজন শীর্ষ শিয়া ধর্মগুরু ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছেন।

গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজির এই ফরমানে বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের নেতৃত্বকে হুমকি দেওয়ার জন্য আমেরিকান ও ইসরায়েলি নেতাদের পতন ঘটানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

মাকারেম তার ফতোয়ায় বলেছেন, ইসলামী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যদি কোন ব্যক্তি বা সরকার হুমকি দেয়- তাহলে তাদের ‘যুদ্ধবাজ’ বা ‘মোহারেব’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ইরানে এমন ব্যক্তিকে মোহারেব বিবেচনা করা হয়, যিনি সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।

দেশটির আইন অনুসারে, মোহারেব হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা বা নির্বাসনের মতো শাস্তির বিধান রয়েছে।

মাকারেম তার ফতোয়ায় এই ধরণের শত্রুর প্রতি ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর যে কোন ধরণের সহযোগিতাকে হারাম বা নিষিদ্ধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

“বিশ্বজুড়ে সমস্ত মুসলমানদের জন্য এই শত্রুদের তাদের কথা ও ভুলের জন্য অনুতপ্ত করা জরুরি”, ফতোয়ায় বলেন তিনি।

মাকারেম বলেন, কোন মুসলমান এই কর্তব্য পালন করলে, তাতে কষ্ট বা ক্ষতির সম্মুখীন হলেও- তাকে আল্লাহর পথের যোদ্ধা হিসেবে পুরস্কৃত করা হবে।

ফতোয়া কী?

ইসলামে ফতোয়াকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। ধর্মীয় বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখেন, এমন ব্যক্তিদের ইসলামের আলোকে ব্যাখ্যা প্রদান করাকে ফতোয়া বলা হয়।

অর্থাৎ, গভীর জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তির জারি করা ইসলামী আইনের ব্যাখ্যাকে মুসলমানরা ফতোয়া হিসেবে বিবেচনা করেন।

ফতোয়ার মাধ্যমে ইসলামী সরকার ও মুসলমানদের কোন নির্দিষ্ট বিষয় মানার আহ্বান জানানো হয়।

ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ধর্মগুরুরা সময়ে সময়ে ফতোয়া দিয়ে আসছেন।

এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ফতোয়ার ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৯ সালে লেখক সালমান রুশদির “দ্য স্যাটানিক ভার্সেস” উপন্যাস প্রকাশের পর।

ইরানে তার বিরুদ্ধে জারি করা ফতোয়াটি মুসলমানদের মধ্যেও বিতর্ক তৈরি করেছিল।

সেই ফতোয়ায় রুশদিকে হত্যার আহ্বান জানানো হয়েছিল, এরপর নিজের নিরাপত্তার জন্য লেখক আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন।

এর ফলে একজন জাপানি অনুবাদককে হত্যা করা হয়েছিল এবং বইটির প্রকাশকদের উপর একাধিক আক্রমণ করা হয়েছিল।

তারপর থেকে সালমান রুশদি একাধিক হত্যা চেষ্টার শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে ২০২৩ সালে নিউ ইয়র্কের উত্তরাঞ্চলে ছুরিকাঘাতে হামলা, এই আঘাতে তিনি একটি চোখ হারিয়েছিলেন।