হাঙ্গেরির পশ্চিমাঞ্চলে, ঘুমন্ত শহর ওরোস্লানির পাশে অবস্থিত এক অদ্ভুত সুন্দর স্থান- বোকোড হ্রদ।
দূর থেকে দেখা যায় রঙিন কাঠের ঘরগুলি, যা একটিমাত্র সরু কাঠের হাঁটাপথ দিয়ে সংযুক্ত। এই শান্ত, নির্মল হ্রদটির অবস্থান এতটাই গোপন, যে একে ‘সুস্পষ্টভাবে লুকানো’ বলে উল্লেখ করা হয়।
বোকোড হ্রদ মূলত ১৯৬০-এর দশকে ভের্টেস বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য একটি শীতল জলাধার হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি রূপ নেয় একটি অনন্য ‘ভাসমান গ্রাম’-এ, যেখানে স্থানীয় জেলেরা কাঠের খুঁটির ওপর ছোট ছোট ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করেন।
এই ঘরগুলোর বেশিরভাগই ব্যক্তিগত সম্পত্তি হলেও হ্রদের চারপাশে যেকোনো দর্শনার্থী হেঁটে ঘুরে দেখতে পারেন।
স্থানীয় মৎস্যজীবী সমিতির প্রধান টিবর কোভাকস জানান, ‘এই জায়গাটি কেবল জেলেদের জন্যই নয়, বরং তাদের পরিবার ও বন্ধুদের জন্যও। মানুষ এখানে এসে মানসিক প্রশান্তি খোঁজে।’
২০১৫ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর হ্রদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কিন্তু ২০২৫ সালের শুরুতে এটি আবার চালু হয় — তবে এবার জৈববস্তুপুঞ্জ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। এতে হ্রদের পরিবেশ অনেক বেশি টেকসই ও বন্ধুসুলভ হয়ে ওঠে।
স্থানীয়রা বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কারণে হ্রদের পানি মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর জন্য উপযোগী থাকে। এই অঞ্চলে এখন শত শত হেক্টরজুড়ে বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণী অবাধে বিচরণ করছে।
বাড়ির মালিক ইস্তভান বারাবাস জানান, ‘পুরোনো কয়লাখনি শ্রমিকরাই প্রথমে ঘর তৈরি করেছিলেন। পরে তারা তাদের সন্তানদের কাছে সেগুলো হস্তান্তর করেন।’
কেউ কেউ উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ঘরগুলিকে পুরোনো রূপেই রেখে দিয়েছেন, যেন তাদের শৈশবের স্মৃতি অটুট থাকে।
বোকোড হ্রদের আরেক বাসিন্দা এরজসেবেট গ্যাস্পার বলেন, ‘এই জায়গার প্রতিটি ঘর এবং প্রতিটি মানুষ আলাদা। এখানে কারও সঙ্গে কারও সম্পত্তি বা জীবনধারা মেলে না – সেটাই এই স্থানের সৌন্দর্য।’
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যখন হাঙ্গেরির মতো একসময়কার জলবহুল দেশ শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে, তখন বোকোড হ্রদ এক ব্যতিক্রমী নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এটি শুধুই একটি মৎস্য শিকারকেন্দ্র নয়, বরং মানব ও প্রকৃতির সহাবস্থানের এক অনন্য উদাহরণ।