বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায়

বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এখন বজ্রপাত বেশি হচ্ছে। তাই বজ্রপাত থেকে বাঁচতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

কয়েকটি বিষয় মেনে চললেই বজ্রপাতের ঝুঁকি সহজেই এড়ানো যাবে।

আসুন, আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের পরামর্শ নিয়ে বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায়গুলো জেনে নেই।

বজ্রপাতের সময় করণীয়

বজ্রপাত হলে কি করবেন, তা জেনে গেলে আপনি অনেকটাই সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।

১. ঘরের মধ্যে থাকুন

এখন আর অল্প কয়েকটি মাসে বজ্রপাতের তীব্রতা থাকছে না। বছরের বড় অংশজুড়েই বজ্রপাত হচ্ছে।

এর মধ্যে এপ্রিল থেকে জুন মাসে বজ্রপাত বেশি হচ্ছে। এই কয়টি মাসে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।

আকাশ কালো হয়ে আসলে কিংবা বজ্রপাতের আওয়াজ পেলে ঘরেই থাকুন। মনে রাখবেন, একটি এলাকায় ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার মতো বজ্রপাতের প্রভাব থাকে। এই সময়টুকু ঘরে থাকলে আপনার ঝুঁকি প্রায় থাকবে না বললেই চলে।

কারণ, বজ্রপাত হলে ঘরের মধ্যে থাকা সবচেয়ে নিরাপদ। মাথার উপর বাড়ির অবকাঠামো থাকা মানে আপনি সেখানে বজ্রপাতে আক্রান্ত হবেন না।

২. বাইরে থাকলে নিরাপদ আশ্রয়ে যান

বজ্রপাত হতে থাকলে বাড়ির বাইরে যাবেন না। বাইরে থাকাকালে বজ্রপাত শুরু হলে আশেপাশের কোন ঘরবাড়িতে আশ্রয় নিন।

দোকান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিচিত বাড়ি- যেখানে আগে প্রবেশের সুযোগ পাবেন, সেখানেই ঢুকে পড়ুন।

জরুরি কারণে বাইরে যেতে হলে রাবারের জুতা পরে বের হোন।

৩. জানালা-দরজা বন্ধ রাখুন

শুধু বাড়িতে থাকলেই হবে না, জানালা ও দরজা বন্ধ করে রাখতে হবে। তাহলেই আপনি বজ্রপাত থেকে পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত হবেন।

জানালার কাছে, দরজার কাছে থাকবেন না। বারান্দায় যাবেন না।

ঘর ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে একাধিক মানুষ একসাথে থাকবেন না, আলাদা আলাদা জায়গায় থাকুন।

৪. যাত্রা এড়িয়ে চলুন

বজ্রপাতের সময় কোথাও যাতায়াত করবেন না। কারণ, আমাদের চলার পথ, রাস্তা প্রায় সময়ই বজ্রপাতের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হয়ে থাকে। ফলে ফাঁকা রাস্তা, কিংবা গাছের নীচের রাস্তার মত জায়গা আপনাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

সেজন্য বজ্রপাতের সময় কোথাও যাত্রা করবেন না। যাত্রাপথে থাকলে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করুন।

এসময় কোন কারণে গাড়িতে থাকতে হলে গাড়ির ধাতব অংশ স্পর্শ করবেন না। সম্ভব হলে গাড়ি নিয়ে কোন ছাউনির নীচে অবস্থান নিন।

৫. গাছের নীচে আশ্রয় নিবেন না

অনেক সময় বৃষ্টি বা রোদে আমরা গাছের নীচে আশ্রয় নেই। সে সময় বজ্রপাত হতে থাকলে তা হবে বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত।

কারণ, বজ্রপাত লম্বা কিছুর উপর আঘাত হানে। সেক্ষেত্রে খোলা প্রান্তরে উঁচু গাছ বজ্রপাতে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

তাই গাছের নীচে আশ্রয় নিবেন না। কোনভাবে সেই গাছে বজ্রপাত হলে আপনিও আক্রান্ত হতে পারেন।

সেজন্য বজ্রপাতের সময় আশেপাশে গাছ থাকলে, অন্তত ৪ মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন।

৬. খোলা মাঠে থাকবেন না

বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা কিংবা উঁচু স্থানে থাকবেন না। শিশুরা মাঠে খেলা করলে তাদের সরিয়ে দিন।

কারণ বজ্রপাত উঁচু বস্তুতে আঘাত হানে, তাই আশেপাশে গাছ না থাকায় খোলা মাঠে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হয়ে থাকে।

খোলা প্রান্তরে থাকার সময় বজ্রপাত শুরু হয়ে গেলে পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়ুন। কানে আঙুল দিয়ে রাখুন।

বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গায় অনেকে একসাথে থাকলে দূরত্ব তৈরি করুন। একেকজন ১০০ ফুট দূরে অবস্থান নিন।

৭. জলাশয় থেকে উঠে আসুন

বজ্রপাতের পরিবেশ তৈরি হলে পুকুর, নদী বা কোন জলাশয়ে থাকলে সেখান থেকে সরে যান। কারণ, আশেপাশে বজ্রপাত হলে পানির সংযোগ আপনার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।

৮. বিদ্যুৎ পরিবাহী বস্তু থেকে দূরে থাকুন

বজ্রপাতের সময় মোবাইল টাওয়ার, বিদ্যুতের খুঁটি ও তারের নীচে থাকবেন না। ছেঁড়া তার থেকে দূরে থাকুন। ধাতব বস্তু স্পর্শ করবেন না।

বাসার বৈদ্যুতিক যন্ত্রের প্লাগগুলো খুলে রাখুন। কংক্রিটের মেঝে বা দেয়াল থেকে দূরে থাকুন।

উপরের বিষয়গুলো সতর্কভাবে মেনে চললে বজ্রপাতের সময় আপনি নিরাপদে থাকতে পারবেন।