হুটহাট চার্জ শেষ হয়ে গেলে পছন্দের মোবাইল হয়ে ওঠে বিরক্তির কারণ। তাই মোবাইল কেনার পর থেকেই ব্যাটারির যত্ন নিন। মোবাইলের ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায়গুলো বিবেচনা করুন।
আমরা আজ আপনার জন্য তুলে ধরবো মোবাইলের ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো রাখার কয়েকটি উপায়। যার মাধ্যমে আপনি কয়েক বছর নিশ্চিন্তে মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন।
মোবাইলের ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায়
মোবাইলের ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো রাখার গুরুত্বপূর্ণ উপায়গুলো নীচে দেখে নিন।
১. সঠিক নিয়মে চার্জ দিন:
মোবাইল ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো রাখতে সঠিকভাবে চার্জ দিতে হবে। কারণ, ব্যাটারি কতদিন ভালোভাবে সার্ভিস দিবে তা অনেকটাই নির্ভর করে চার্জের উপর।
চার্জ দেওয়ার ক্ষেত্রে আবার কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
* ব্যাটারিকে শূন্যে নামাবেন না:
আপনার ফোনের ব্যাটারি একেবারে শূন্যে নামাবেন না। এতে ব্যাটারির ক্ষতি হয়। ব্যাটারির কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়।
* ব্যাটারি ২০ শতাংশে নামলেই চার্জ দিন:
আপনার ফোনের ব্যাটারি ২০ শতাংশের নিচে নামার আগেই মোবাইল চার্জে বসান। তাতে ব্যাটারি ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে, দীর্ঘদিন ভালো সার্ভিস দিবে।
* ১০০ শতাংশ চার্জ করবেন না:
আধুনিক ফোনগুলোতে ওভারচার্জের ক্ষতি থেকে ব্যাটারিকে রক্ষা করার বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকে। এরপরও ব্যাটারি ফুল চার্জ করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ দীর্ঘদিন ব্যাটারি ফুল চার্জ হতে থাকলে তা চাপ তৈরি করে।
* ৮০ শতাংশ চার্জ দিন:
ব্যাটারির জন্য সবচেয়ে ভালো হল ৮০ শতাংশ চার্জ করা। তাতে ব্যাটারি ওভারচার্জিং ও গরম হওয়া থেকে বেঁচে যায়। নিয়মিত ৮০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ দিলে মোবাইলের ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো থাকে। তবে, ব্যাটারির চার্জ যেন ২০ শতাংশের নীচে নেমে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
* ঘন ঘন চার্জ দিবেন না:
অনেকে একটু পর পর ফোন চার্জ দেন। এ ধরণের অভ্যাসও ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর। তাই একসাথে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ দিয়ে নিন। দীর্ঘক্ষণ আর চার্জ দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
* রাতে মোবাইল চার্জে ফেলে রাখবেন না:
মোবাইল চার্জে রেখে অনেকে ঘুমিয়ে যান। ফলে সারারাত ব্যাটারি চার্জ হতে থাকে। যদিও আধুনিক মোবাইল শতভাগ চার্জ হলে চার্জ নেয়া বন্ধ করে দেয় নিজে থেকেই। কিন্তু ব্যাটারি একটু কমে গেলে আবার চার্জ নিতে থাকে। এভাবে চার্জ অন ও চার্জ অফ হলে ব্যাটারি গরম হয়ে ওঠে। যা দ্রুত ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে দেয়।
* ফাস্ট চার্জিং বন্ধ করুন:
দ্রুত মোবাইল চার্জ করতে অনেকে ফাস্ট চার্জিং চার্জার ব্যবহার করেন। এসব চার্জার ব্যবহারের আগে আপনার মোবাইলের চার্জ নেওয়ার সক্ষমতা কতটুকু তা দেখুন। সক্ষমতার চেয়ে কম গতিশীল চার্জার ব্যবহার করুন। কারণ, দ্রুত চার্জ করার সময় ব্যাটারি গরম হতে থাকে। নিয়মিত এভাবে চললে ব্যাটারির আয়ু কমে যায়।
* অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করুন:
বাজার এখন নকল চার্জারের অভাব নেই। কম টাকায় অনেকে এসব চার্জার কিনে মোবাইলের সর্বনাশ করেন। কারণ, এসব চার্জারের গুণগত মান খুব খারাপ হতে পারে। তাই চার্জার কেনার আগে যাচাই করুন। ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো রাখতে চাইলে ভালো মানের চার্জার ব্যবহার করুন।
* পাওয়ার ব্যবহারে সতর্ক হোন:
অনেকে পাওয়ার ব্যাংকে চার্জ দেন। আপনার পাওয়ার ব্যাংকের কোয়ালিটি যাচাই করুন। নিম্ন মানের পাওয়ার ব্যাংক ব্যাটারির ক্ষতি করে। আর অবশ্যই পাওয়ার ব্যাংকে চার্জ দিয়ে মোবাইল ব্যবহার করবেন না।
* চার্জে রেখে মোবাইল ব্যবহার করবেন না:
অনেকে চার্জে রেখে মোবাইল টিপেন। এটি ব্যাটারিকে গরম করে দেয়; যা ব্যাটারির আয়ুকেও কমিয়ে দেয়। তাই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চার্জে রেখে মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
* মোবাইল গরম অবস্থায় চার্জ দিবেন না:
মোবাইল গরম অবস্থায় চার্জে লাগাবেন না। কিংবা চার্জ অবস্থায় মোবাইল গরম হলে চার্জ দেয়া বন্ধ করুন। কারণ গরম অবস্থায় চার্জ হতে থাকলে ব্যাটারি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
২. মোবাইল গরম করবেন না:
গরম হয়ে যাওয়া মোবাইল ব্যাটারির বড় শত্রু, যার ফলে ব্যাটারির আয়ু দ্রুত কমে যায়। তাই মোবাইল যাতে নরমাল তাপমাত্রায় থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। সেজন্য কয়েকটি বিষয়ে নজর দিতে হবে।
- সূর্যের আলোতে মোবাইল ব্যবহার করবেন না: কারণ রোদে মোবাইল দ্রুত গরম হয়ে যায়। এসময় মোবাইল ব্যবহার করলে তা আরও দ্রুত গরম হবে। আর গরম হওয়া মানেই ব্যাটারির ক্ষতি। বিশেষ করে, গরমকালে বাইরে মোবাইল ব্যবহারে সতর্ক হোন।
- গরম অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করবেন না: মোবাইল গরম হলে কিছুক্ষণ তা ব্যবহার বন্ধ রাখুন। মোবাইল ঠাণ্ডা হওয়ার পর আবার ব্যবহার করুন। না হলে ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- গাড়ি বা আবদ্ধ স্থানে ফোন ফেলে রাখবেন না: আবদ্ধ স্থানে তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। দীর্ঘ সময় বদ্ধ স্থানে মোবাইল থাকলে উচ্চ তাপমাত্রা ব্যাটারিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ করুন: টানা ভিডিও দেখা, গেম খেলা, গ্রাফিক্সের মত ভারি কাজ ফোনে চাপ তৈরি করে; গরম হয়ে যায় ডিভাইস। যা সামলাতে ব্যাটারিকে অতিরিক্ত শক্তি সরবরাহ করতে হয়। তাই মোবাইল গরম হতে থাকলে কিছুক্ষণ সেটি ব্যবহার বন্ধ রাখুন। মোবাইলকে ঠাণ্ডা হতে দিন।
৩. ফোনের সেটিংসে নজর দিন:
ফোনের সফটওয়্যার এবং সেটিংসে কিছু পরিবর্তন এনে ব্যাটারির ব্যবহার কমানো যায়। এত মোবাইলের ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো থাকে। সেজন্য কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
* স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে রাখুন: স্ক্রিন ফোনের অন্যতম প্রধান অংশ যা বেশি চার্জ খায়। তাই উজ্জ্বলতা কমিয়ে নিলে ব্যাটারির ব্যবহার অনেক কমানো যায়। তাই অটো-ব্রাইটনেস অপশন ব্যবহার করে ব্যাটারির আয়ু বাড়াতে পারেন।
* স্ক্রিন টাইমআউট কমিয়ে দিন: স্ক্রিন ব্যবহারের পরে কতক্ষণ পর্যন্ত তা চালু থাকবে, সে সময়টুকু কমিয়ে নিন। ব্যবহার না করার অল্প সময়ের মধ্যে স্ক্রিন বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাটারির আয়ু বাড়বে।
* অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করুন: বিভিন্ন অ্যাপের নোটিফিকেশন ব্যাটারি খরচ করে। তাই শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোর নোটিফিকেশন চালু রাখুন।
* ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ ব্যবহার বন্ধ করুন: অনেক অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে ডেটা ব্যবহার করে, যা ব্যাটারির উপর চাপ তৈরি করে। সে কারণে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ আপডেট বন্ধ করুন।
* লোকেশন বন্ধ রাখুন: গুগলের জিপিএস লোকেশন চালু রাখলে ব্যাটারির উপর প্রচুর চাপ পড়ে। তাই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকেশন সার্ভিস বন্ধ রাখুন।
* প্রয়োজন ছাড়া ওয়াইফাই এবং ব্লুটুথ বন্ধ রাখুন: ওয়াইফাই ও ব্লুটুথ ব্যবহার শেষে বন্ধ করুন। কারণ এসব সার্ভিস সবসময় ফোনকে সজাগ রাখে। তাতে ব্যাটারিও সার্বক্ষণিক ব্যবহার হতে থাকে, যা এর আয়ুকে কমিয়ে দেয়।
* এয়ারপ্লেন মোড ব্যবহার করুন: ঘুমানোর সময় বা বিশেষ পরিস্থিতিতে মোবাইলের নেটওয়ার্কের প্রয়োজন না হলে এয়ারপ্লেন মোড চালু রাখুন। এতে মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে থাকবে, ব্যাটারিও বিশ্রামে থাকবে।
* ব্যাটারি সেভার সেটিংস ব্যবহার করুন: সব স্মার্টফোনেই ব্যাটারি সেভার সেটিংস থাকে। সেটিংস অনুযায়ী অপ্রয়োজনীয় ফিচার বন্ধ করা, ব্রাইটনেস নিয়ন্ত্রণ করা, চার্জ লেভেল নিয়ন্ত্রণ করা- ইত্যাদি নির্দেশনা অনুসরণ করুন। ব্যাটারি সাশ্রয় হবে।
* সফটওয়্যার আপডেট করুন: ফোনের সফটওয়্যার আপডেট রাখুন। তাতে আপনার কাজ স্মুথ হবে, ব্যাটারিও কম ব্যবহার হবে।
* হোম স্ক্রিণ পরিস্কার রাখুন: হোম স্ক্রিনে অপ্রয়োজনীয় উইজেট রাখলে সেগুলো নিয়মিত ডেটা রিফ্রেশ করে ব্যাটারির আয়ু কমায়। তাই এগুলো সরিয়ে হোম স্ক্রিন পরিস্কার রাখুন।
* অ্যানিমেটেড নয়, কালো স্থির ওয়ালপেপার ব্যবহার করুন: লাইভ বা অ্যানিমেটেড ওয়ালপেপার ব্যাটারির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। তাই কালো সাধারণ স্থির ওয়ালপেপার ব্যবহার করুন। এগুলো চার্জ কম খরচ করবে, ব্যাটারি ভালো রাখবে।
৪. অ্যাপ ব্যবহারে সতর্কতা:
মোবাইল এখন অ্যাপ নির্ভর। সে কারণে ব্যাটারি ভালো রাখতে হলে অ্যাপ ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে।
* ব্যাটারি কিলার অ্যাপ বন্ধ করুন: কিছু অ্যাপ প্রচুর ব্যাটারি ইউজ করে। সেটিংস থেকে এসব অ্যাপ চিহ্নিত করে আনইন্সটল করুন। কারণ, এসব অ্যাপ আপনার ব্যাটারির ক্ষতি করে।
* অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ আনইনস্টল করুন: যে অ্যাপগুলো আপনি ব্যবহার করেন না, সেগুলো আনইনস্টল করে দিন। তাতে ব্যাটারি ইউজ কমবে।
* লাইট ভার্সনের অ্যাপ ব্যবহার করুন: যেসব অ্যাপের লাইট ভার্সন পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করুন। তাহলে ব্যাটারির উপর চাপ কমবে।
৫. ব্যাটারি হেলথ চেক করুন: মাঝে মাঝে মোবাইলের ব্যাটারি হেলথ চেক করুন। তাহলে কোন কোন বিষয় আপনার ব্যাটারিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, সে বিষয়ে সতর্ক হতে পারবেন। বুঝে নিতে পারবেন কিভাবে ব্যাটারির যত্ন নিতে হবে।
আসলে মোবাইলের ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো রাখা খুব কঠিন নয়। কারণ মোবাইলের ব্যাটারি যাতে কয়েক বছর ব্যবহার করা যায়, কোম্পানিগুলো সেদিকেই নজর দিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের খামখেয়ালিতেই ব্যাটারি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
তাই মোবাইলের ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায় মাথায় রাখুন। ব্যাটারির যত্ন নিন, দীর্ঘদিন নিশ্চিন্তে মোবাইল ব্যবহার করুন।