কখন খাবেন মাল্টিভিটামিন?

বিশ্বজুড়ে ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্টের বাজারের আকার প্রায় ৩২.৭ বিলিয়ন ডলার।

স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭৪ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে ৬৬ শতাংশ মানুষ নিয়মিত ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেন।

তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাপ্লিমেন্ট কোনো যাদুকরী সমাধান নয়। বরং ভুলভাবে গ্রহণ করলে এটি ক্ষতির কারণও হতে পারে।

মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজনীয়তা

ভিটামিন ও মিনারেল শরীরের জন্য অপরিহার্য, যা আমরা খাবার থেকে পেয়ে থাকি।

পর্যাপ্ত শাকসবজি, ফল, শস্য, বাদাম, মাছ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করলে আলাদা সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হয় না।

কিন্তু আধুনিক জীবনে ফাস্টফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রভাবে অনেকের খাদ্যাভ্যাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বেস ডসন-হিউজের মতে, অনেকেই এখন দিনে প্রয়োজনীয় ফল ও সবজির অর্ধেকও খান না, ফলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

অথচ বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন ও মিনারেল শরীরের জন্য খুবই জরুরি। যেমন-

ভিটামিন A: দৃষ্টিশক্তি ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

ভিটামিন C: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ভিটামিন K: রক্ত জমাট বাঁধায় সহায়ক।

ভিটামিন D: হাড় মজবুত রাখে।

ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম, পটাসিয়াম: হাড়, পেশি, স্নায়ু ও শরীরের নানা কার্যক্রম ঠিক রাখে।

ফিজিশিয়ানস হেলথ স্টাডি অনুযায়ী, প্রতিদিন মাল্টিভিটামিন খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি ৮ শতাংশ কমে, আর ৭০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে তা ১৮ শতাংশ কমেছে।

২০২৩ সালের কসমস ট্রায়ালের গবেষণা বলছে, মাল্টিভিটামিন গ্রহণকারীদের মধ্যে ৩ বছরে মানসিক অবক্ষয় ৬০% কমেছে।

কিছু গবেষণায় চোখে ছানি পড়ার (ক্যাটারাক্ট) ঝুঁকি কমার প্রমাণও মিলেছে।

অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্টের ঝুঁকি

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, ভিটামিন বা মিনারেলের অতিমাত্রা শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

যেমন- অতিরিক্ত ভিটামিন ডি গ্রহণে খিঁচুনি, কোমা এমনকি মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

ভিটামিন এ বেশি খেলে তীব্র মাথাব্যথা, দৃষ্টিধূসরতা, বমি, পেশিতে ব্যথা এবং গুরুতর ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে।

অতিরিক্ত ভিটামিন ই রক্ত পাতলা করে দেয়, ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে।

গবেষণায় দেখা গেছে- অতিরিক্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন বিটা-ক্যারোটিন, বিশেষ করে ধূমপায়ীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

আবার একটি ভিটামিনের অতিরিক্ত গ্রহণ অন্য পুষ্টি শোষণে বাধা দেয়।

কাদের মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন?

৬০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য দৈনিক মাল্টিভিটামিন ক্যান্সার ও মানসিক অবক্ষয় কমাতে সহায়ক হতে পারে।

গর্ভবতী নারীদের ফোলিক অ্যাসিড ও কিছু ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেয়া উচিত, যা ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটি কমায়।

যারা মাছ খান না বা খুব কম খান, তারা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট থেকে উপকার পেতে পারেন।

কিছু অসুখের ক্ষেত্রে বা কিছু ওষুধ গ্রহণের কারণে যাদের ভিটামিন শোষণে সমস্যা হয়, তাদের জন্যও সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে।

বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বয়স্কদের জন্য ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের যৌথ সাপ্লিমেন্ট অস্টিওপোরোসিস ও হাড় ভাঙা প্রতিরোধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ মানুষের জন্য সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজনীয় নয়, সুষম খাদ্যই সর্বোত্তম সমাধান।

খাবারের ভিটামিন শরীরে বেশি সহজে শোষিত হয় এবং সাথে ফাইবারের মতো অতিরিক্ত পুষ্টিগুণও পাওয়া যায়।

তবে যাদের খাদ্যাভ্যাসে ঘাটতি বা শারীরিক কারণে শোষণ সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নিরাপদ বিকল্প হতে পারে- তবে নির্ধারিত মাত্রার বেশি নয়।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. জোয়ান ম্যানসন বলেন, “বেশিরভাগ মানুষের জন্য সুষম খাদ্যই যথেষ্ট। তবে খাদ্যে ঘাটতি থাকলে সীমিত মাত্রায়মাল্টিভিটামিন নিরাপদ সমাধান হতে পারে। কিন্তু বেশি নিলেই বেশি উপকার- এটি ভুল ধারণা।”