রাশিয়া না যুক্তরাষ্ট্র- পারমাণবিক শক্তিতে কে এগিয়ে?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়াকে ঘিরে সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দেয়ার পর মস্কো ও ওয়াশিংটনের পারমাণবিক শক্তি আবারও আলোচনায় এসেছে।

বিশ্বে পারমাণবিক শক্তির এই প্রতিযোগিতায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।

বিশ্বব্যাপী যে পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র মজুত রয়েছে, তার প্রায় ৮৭ শতাংশই রয়েছে এই দুই দেশের হাতে।

শুধু তাই নয়, বর্তমানে যেসব পারমাণবিক অস্ত্র ‘তৎপর অবস্থায়’ বা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে- তার ৮৩ শতাংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করে রাশিয়া ও আমেরিকা।

বিশ্বে কতটি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে?

ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টস (FAS)-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর কিছুটা কমলেও বিশ্বের পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডার এখনো ‘অত্যন্ত উচ্চমাত্রায়’ রয়েছে।

২০২৫ সালের জানুয়ারির হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের ৯টি দেশের হাতে ১২ হাজার ২৪১টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওয়ারহেড রয়েছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- কে এগিয়ে? কোন দেশের কতটা অস্ত্র যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত?

রাশিয়া বনাম যুক্তরাষ্ট্র: কে কতটা শক্তিশালী?

তৎপর অবস্থায় মোতায়েন করা পারমানবিক ওয়ারহেডের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একে অপরকে সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র:

ওয়াশিংটনের মোট মোতায়েনকৃত স্ট্র্যাটেজিক ওয়ারহেড রয়েছে ১ হাজার ৪১৯টি। এগুলো বিভিন্ন বোমারু বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রে যুক্ত রয়েছে।

রাশিয়া:

মস্কোর কাছে মোট মোতায়েনকৃত স্ট্র্যাটেজিক ওয়ারহেড রয়েছে ১ হাজার ৫৪৯টি। এদের বেশিরভাগই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও সাবমেরিন-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্মে মোতায়েন।

অর্থাৎ, চলমান অবস্থায় রাশিয়ার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কিছু বেশি পরিমাণ ওয়ারহেড রয়েছে। যদিও সামগ্রিকভাবে দুই দেশের শক্তি প্রায় সমান বলেই বিবেচনা করা হয়।

ইতিহাস: কারা আগে এগিয়েছে?

১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায়। এরপর হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুটি বোমা ফেলে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনার জন্য দেয় মার্কিনীরা।

মাত্র ৪ বছর পরে ১৯৪৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে রাশিয়া) তাদের প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। সেখান থেকেই শুরু হয় পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা।

এরপর ঠান্ডা যুদ্ধের দিনগুলোতে দুই পক্ষই পারমাণবিক বোমার মজুদ বাড়িয়েছে।

পারমাণবিক সাবমেরিনে কে এগিয়ে?

পানির নিচে পারমাণবিক শক্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটাই এগিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাবমেরিন বাহিনী।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী:

মোট পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন: ৭১টি

এর মধ্যে ১৪টি ওহাইও-ক্লাস ব্যালিস্টিক সাবমেরিন (SSBN) ও ৪টি গাইডেড মিসাইল সাবমেরিন (SSGN) রয়েছে।

এছাড়া রয়েছে ৫৩টি ফাস্ট-অ্যাটাক সাবমেরিন- এগুলো গুপ্তচর, শত্রু সাবমেরিন ধ্বংস ও ক্রুজ মিসাইলের সহায়তায় বিভিন্ন কাজ করে।

রাশিয়ার নৌবাহিনী:
মোট পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন: ৩০টিরও কম

এর মধ্যে প্রায় ১০টি স্ট্র্যাটেজিক ব্যালিস্টিক সাবমেরিন (SSBN) রয়েছে, যেগুলো বুলাভা মিসাইল বহন করে।

এছাড়া আকুলা-ক্লাস অ্যাটাক সাবমেরিন রয়েছে ৬টি, যেগুলো মাল্টি-রোল ও অ্যান্টি-শিপ অভিযানে ব্যবহৃত হয়।

রাশিয়া বর্তমানে ইয়াসেন-এম ক্লাস নামে আধুনিক সাবমেরিন নির্মাণে বিনিয়োগ করছে।

এই দিক থেকে পানির নিচে এখনো যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য সুস্পষ্ট।

পারমাণবিক বোমার ভবিষ্যৎ: শান্তি না সংঘাত?

বিশ্বের পারমাণবিক শক্তি ভারসাম্যের এই প্রতিযোগিতা অনেকের কাছেই একধরনের নিরাপত্তা বিপর্যয় হিসেবে বিবেচিত।

ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টসের মতে, পরমাণু অস্ত্র হ্রাসের আন্তর্জাতিক চুক্তি থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সময়ে বিশ্ব আবার নতুন করে পারমাণবিক আধিপত্যের দিকে এগোচ্ছে।

ইরানের মত কিছু দেশ পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া, উভয়ই এই অস্ত্রের সংখ্যা কমিয়ে আনার বিষয়ে বারবার বৈঠক করলেও আস্থা ও কৌশলগত আগ্রাসনের কারণে এর বাস্তব প্রভাব খুবই সীমিত।

কে বেশি শক্তিশালী- রাশিয়া না যুক্তরাষ্ট্র?

এ প্রশ্নের সরল উত্তর নেই।

রাশিয়ার মোতায়েনকৃত ওয়ারহেডের সংখ্যা বেশি হলেও; যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে উন্নত প্রযুক্তি, অধিকসংখ্যক পারমাণবিক সাবমেরিন এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রতিরক্ষা ঘাঁটি।

তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এই দুই দেশই একে অপরকে ঠেকিয়ে রাখছে। আর এই ‘ভারসাম্য’ কৌশলই এখনো বিশ্বের বড় কোনো পারমাণবিক যুদ্ধ ঠেকিয়ে রেখেছে।