দক্ষিণ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তীব্র তাপদাহ ও ভয়াবহ দাবানলে অন্তত ৩ জন মারা গেছেন।
তাপপ্রবাহের কারণে ছড়িয়ে পড়া আগুনে হাজারো মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল ও বলকান অঞ্চলের কিছু এলাকায় ‘রেড হিট অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে, যেখানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
এসব এলাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে।
স্পেনের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, সেভিয়া ও কর্দোবার তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। দক্ষিণ পর্তুগালেও একই মাত্রার তাপমাত্রা পৌঁছানোর শঙ্কা রয়েছে।
স্পেনে মাদ্রিদের কাছে ত্রেস কান্তোস এলাকায় ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া প্রবল বাতাস দাবানলকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে দেয়। এতে শত শত মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় একজন মারাত্মক দগ্ধ হয়ে মারা যান।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ জানিয়েছেন, উদ্ধারকর্মীরা দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে “অবিরাম পরিশ্রম” করে যাচ্ছেন।
সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা দাবানলের চরম ঝুঁকিতে আছি।”
স্পেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কাস্তিয়া ও লেয়ন প্রদেশে প্রায় ৪ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং ৩০টির বেশি স্থানে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে একটি দাবানল হুমকি সৃষ্টি করেছে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান লাস মেদুলাসের জন্য, যা প্রাচীন সোনার খনির জন্য বিখ্যাত।
দক্ষিণাঞ্চলীয় আন্দালুসিয়ার পর্যটনকেন্দ্র তারিফার আশপাশের হোটেল ও বাড়িঘর থেকে আরও প্রায় ২ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দেশজুড়ে দাবানল নিয়ন্ত্রণে প্রায় ১ হাজার সেনা সদস্য করেছে স্পেন।
অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ পর্তুগালে দমকলকর্মীরা তিনটি বড় দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
দাবানল মোকাবিলায় ১,৩০০ জনের বেশি অগ্নিনির্বাপক কর্মী ও ১৪টি বিমান মোতায়েন করা হয়েছে। পর্তুগালের পানিবাহী বিমান নষ্ট হয়ে পড়ায় মরক্কো দুটি বিমান পাঠিয়েছে।
কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে।
ইতালিতে সোমবার অতিরিক্ত গরমে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে দেশটিতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রিতে পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। রোম, মিলান ও ফ্লোরেন্সসহ অন্তত ১০টি শহরে ‘রেড হিট অ্যালার্ট’ জারি রয়েছে।
ইতালির সারদিনিয়া দ্বীপে একটি গাড়ির ভেতর অচেতন অবস্থায় পাওয়া ৪ বছরের রোমানিয়ান শিশুকে হেলিকপ্টারে করে রোমের হাসপাতালে নেওয়া হলেও মস্তিষ্কে গুরুতর ক্ষতির কারণে তার মৃত্যু হয়।
গ্রিসজুড়ে ভয়াবহ দাবানলের সঙ্গে লড়ছে দেশটির জরুরি সেবা। তীব্র বাতাসে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে ৫ হাজারের কাছাকাছি অগ্নিনির্বাপক কর্মী ও ডজনখানেক বিমান আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সারা দেশে ১৫০টিরও বেশি স্থানে দাবানলের খবর পাওয়া গেছে।
জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ জাকিনথোস এবং পশ্চিম আচাইয়া অঞ্চলে ব্যাপক উদ্ধার তৎপরতা চলছে; যেখানে আগুনে বহু বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে।
পশ্চিম আচাইয়ার মেয়র গ্রিগরিস আলেক্সোপুলোস বলেছেন, ওই অঞ্চলের আগুন “নিয়ন্ত্রণের বাইরে” চলে গেছে এবং কিছু উপকূলীয় এলাকা “অপূরনীয় ক্ষতির” শিকার হয়েছে।
দাবানলে আটকা পড়া পর্যটকদের উদ্ধার করতে চিওস দ্বীপে নৌকা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গ্রিস ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে অতিরিক্ত অগ্নিনির্বাপক বিমান পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে।
কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতি আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে।
