দর্শনার্থীদের জন্য নতুন রূপে যুক্তরাজ্যের নরউইচ দুর্গ

৯০০ বছরের পুরনো যুক্তরাজ্যের নরউইচ দুর্গ নতুন রূপে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। পাঁচ বছরের দীর্ঘ সংস্কারকাজ শেষে এটি এখন এক অনন্য ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে।
উইলিয়াম দ্য কনকারর নির্মাণ শুরু করেছিলেন এবং তার পুত্র রাজা প্রথম হেনরি ১১২১ সালে সম্পন্ন করেন এই দুর্গটি। ২৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে পুনর্র্নিমাণ করা দুর্গকে এখন বলা হচ্ছে ‘দ্য পিপলস প্যালেস’। নতুনভাবে সাজানো দুর্গে রয়েছে পাঁচতলা জুড়ে ভ্রমণের সুযোগ—বেসমেন্ট থেকে শুরু করে যুদ্ধক্ষেত্র ও ছাদ পর্যন্ত। হুইলচেয়ার ও পুশচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষ লিফটের মাধ্যমে প্রতিটি স্তরে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
নরউইচ মিউজিয়াম সার্ভিসের পরিচালক স্টিভেন মিলার জানান, ‘নরউইচ দুর্গ সর্বকালের বৃহত্তম নরম্যান স্থাপনা এবং ইউরোপের অন্যতম দর্শনীয় দ্বাদশ শতাব্দীর ধর্মনিরপেক্ষ ভবন। আমাদের লক্ষ্য ছিল সর্বাধিক দর্শনার্থীর কাছে এটি সহজলভ্য করে তোলা।’
পুনর্র্নিমাণে গ্রেট হলের রাজকীয় কক্ষগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে সাজানো হয়েছে। দর্শনার্থীরা এখানে দেখতে পারবেন আসল ধরনের আসবাবপত্র, ইন্টারেক্টিভ ডিসপ্লে এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল লেজার প্রক্ষেপণের মাধ্যমে দুর্গের ইতিহাস।
এছাড়া ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সহযোগিতায় ৯০০-এর বেশি মধ্যযুগীয় নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে ৫০টি দীর্ঘমেয়াদী ঋণকৃত সংগ্রহ। ব্রিটিশ মিউজিয়ামের মধ্যযুগীয় ইউরোপের সাবেক কিউরেটর নাওমি স্পিকম্যান বলেন, ‘মানুষ প্রায়ই মধ্যযুগকে কেবল অন্ধকার সময় বলে ভাবে, কিন্তু আসলে এটি ছিল এক বর্ণিল ও বিলাসবহুল যুগ। নরউইচ সেই সময়ে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় শহর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।’
পাঁচ বছর ধরে চলা সংস্কারকাজে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে দ্বাদশ শতকের আসল রং, কাপড়, সরঞ্জাম ও কারিগরিকে। নরফোক মিউজিয়াম সার্ভিসের প্রকল্প কিউরেটর ড. টিম পেস্টেল জানান, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল ১১২১ সালে রাজা হেনরি প্রথম যখন দুর্গে প্রবেশ করেছিলেন, তখনকার দৃশ্যের যথাসম্ভব সঠিক প্রতিচ্ছবি তৈরি করা।’
দুর্গের ছাদ থেকে নরউইচ শহরের মনোরম দৃশ্য এখন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। শিশুদের জন্যও আকর্ষণীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেমন দুর্গের নিচে প্রাচীন কূপ, যা কাচের আচ্ছাদনে প্রদর্শিত হচ্ছে।
ন্যাশনাল লটারি হেরিটেজ ফান্ড থেকে ১৩ মিলিয়ন পাউন্ড অনুদানের সহায়তায় এই প্রকল্পটি এ বছর যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৃহত্তম ঐতিহ্য সংরক্ষণ কার্যক্রম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।