যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বৈরাচারী আচরণের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
শনিবার দেশটির রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো, বোস্টন, আটলান্টা, সান ফ্রান্সিসকোসহ বড় বড় শহরে “নো কিংস” বিক্ষোভে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের নাগরিকরা অংশ নেন।
বিক্ষোভে প্ল্যাকার্ড হাতে ট্রাম্পবিরোধী বার্তা তুলে ধরেন তারা। মূলত ট্রাম্পের বিরোধী শিবির ডেমোক্র্যাটরা এই বিক্ষোভ আয়োজনে নেতৃত্ব দিয়েছে।
নিউইয়র্ক সিটির টাইমস স্কয়ারে দেখা যায়, এক লাখের বেশি বিক্ষোভকারী সেখানে জড়ো হয়েছেন।
এসময় অভিনেত্রী জেন ফন্ডা, সংগীতশিল্পী জন লেজেন্ডের মত তারকা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কখনোই ট্রাম্প জমানার মত নাগরিকদের স্বাধীনতা ঝুঁকিতে পড়েনি।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি গণতন্ত্রের জন্য বিপদজনক। তারা মনে করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প দিন দিন একজন স্বৈরাচার হয়ে ওঠছেন।
এই বিক্ষোভকে আধুনিক মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ কর্মসূচিগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও লন্ডন, প্যারিস, বার্লিন, মেক্সিকো সিটির মত শহরে মার্কিন দূতাবাসের সামনে ট্রাম্পবিরোধী সংহতি সমাবেশ হয়েছে।
“নো কিংস” বিক্ষোভ কেন?
“নো কিংস” আন্দোলনের উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে এমন সব নীতি হাতে নিয়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করছে।
তাদের অভিযোগ, ডোনাল্ড সংসদকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করছেন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের ওপর চাপ প্রয়োগ, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও নিজের স্বজনদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা।
নাগরিক সংগঠন ইন্ডিভিজিবলের নির্বাহী পরিচালক লিয়া গ্রিনবার্গ বলেন, আমেরিকা কোন রাজা বা একনায়ক চায় না।
“এদেশের শক্তি জনগণ, তারাই রাস্তায় নেমেছে”, বলেন তিনি।
বিক্ষোভে ডেমোক্র্যাটদের প্রভাব থাকলেও আরেক সংগঠন মুভঅনের পরিচালক ক্যাটি বেথেল জানান, তাদের বিক্ষোভ গণতন্ত্রের জন্য, কোন দলের পক্ষে নয়।
বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী নীতি, নারীদের অধিকার সীমিত করা এবং সামরিক বাজেট বৃদ্ধিরও সমালোচনা করেন।
তাদের অভিযোগ, ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপগুলো আমেরিকার মৌলিক মূল্যবোধ, স্বাধীনতা ও সমতার পরিপন্থী।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মার্টিন এলিস বিশ্লেষণ, “এটি শুধু ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন নয়, বরং গণতন্ত্র রক্ষার বার্তা; এর প্রভাব হবে গভীর।”
বিক্ষোভের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও #NoKings হ্যাশট্যাগে লাখ লাখ পোস্টে মার্কিনীরা দাবি করেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্রেসিডেন্সি থেকে রাজতন্ত্রে নিয়ে যেতে চাইছেন।
ট্রাম্প যা বলছেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই আন্দোলনকে ‘অর্থহীন ও রাজনৈতিক নাটক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ফ্লোরিডায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “তারা আমাকে রাজা বলছে, কিন্তু আমি রাজা নই। আমি জনগণের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, আমি তাদের জন্যই কাজ করছি।”
এদিকে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারা ম্যাথিউস এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ট্রাম্প শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারকে সম্মান করেন। তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে, আমেরিকার অধিকাংশ মানুষ এ ধরনের বিভাজন পছন্দ করে না।”
রিপাবলিকান নেতারা আন্দোলনটিকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রাজনৈতিক প্রদর্শনী বলে দাবি করেছেন।
হাউস স্পিকার মাইক জনসন বলেন, “এই বিক্ষোভে এমন সব গোষ্ঠী অংশ নিয়েছে- যারা আমেরিকার পতাকা পোড়ায়, পুলিশের বিরুদ্ধে সহিংসতা করে। এটাকে গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন বলা যায় না।
তবে ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলছেন, মানুষ নিজেদের স্বাধীনতা হারানোর ভয় থেকেই রাস্তায় নেমেছে।
“মানুষ রাজতন্ত্র না, ন্যায়বিচার চায়। কিন্তু আমেরিকানরা এখন ভয় পাচ্ছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসীদের সীমান্তে আটকে রাখা, সংবাদমাধ্যমের লাইসেন্স নিয়ে তদন্ত এবং সুপ্রিম কোর্টে অনুগত বিচারপতি নিয়োগের মত সিদ্ধান্ত ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়াচ্ছে।
