জেন জি বিক্ষোভে এবার দেশ ছেড়ে পালালেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট

প্রাণঘাতি জেন জি বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আফ্রিকার দ্বীপ রাষ্ট্র মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট অঁদ্রি রাজোয়েলিনা।

দুই সপ্তাহের আন্দোলনের পর একটি ফরাসি সামরিক উড়োজাহাজে তিনি দেশ ছেড়েছেন তিনি। তবে রাজোয়েলিনা কোথায় গিয়েছেন, তা এখনো জানা যায় নি।

জেন জি বিক্ষোভে শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা বিশ্ব রাজনীতিতে প্রথম আলোড়ন তুলেছিল। এরপর দক্ষিণ এশিয়ার আরও দুই দেশ- বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার সরকার প্রধানও জেন জি আন্দোলনে দেশ ছাড়েন।

মাদাগাস্কারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সেনাদের একটি অংশের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে যোগ দেয়ার পরই সরকার পতনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিলো।

এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার পরিকল্পনা জানান। এর পরপরই মাদাগাস্কারের সেনারা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সদরদপ্তর দখলের হুমকি দেয়। ফলে কয়েক দফা সময় পেছালেও অঁদ্রি রাজোয়েলিনা আর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন নি।

তরুণদের নেতৃত্বে চলা আন্দোলন থামাতে রাজোয়েলিনা সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তা কাজে আসেনি। ফলে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন সরকার প্রধান।

গত বুধবারের পর থেকেই তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায় নি। রবিবার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানায়, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা চলছে।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে দুরত্ব

আন্দোলনের মধ্যেই মাদাগাস্কারের সেনাদের এলিট গ্রুপ ক্যাপসাট প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এই দলটিই ২০০৯ সালে রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় বসতে সাহায্য করেছিল।

এবার তারা নিজেদের সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণকারী ঘোষণা করে এবং তাদের কিছু কর্মকর্তা রাজধানী আন্টানানারিভোর রাস্তায় প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়।

এর মধ্যে সোমবার সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠকের পর ক্যাপসাট জেনারেল ডেমোস্থেনে পিকুলাসকে সেনাপ্রধান নিয়োগ করে। নতুন সেনাপ্রধান জনগণকে আশ্বস্ত করেন যে, নিরাপত্তা বাহিনী দেশের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একসঙ্গে কাজ করছে।

এরপর সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্টের কার্যালয় পিকুলাসের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়।

তবে বিরোধী নেতারা বলছেন, ক্যাপসাটই মূলত এখন দেশ চালাচ্ছে।

বিরোধী দল জানিয়েছে, দায়িত্ব ত্যাগের অভিযোগে তারা প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করার প্রক্রিয়া শুরু করবে।

রাজোয়েলিনার ঘনিষ্ঠরাও দেশ ছাড়ছেন

রাজোয়েলিনার বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইতোমধ্যে প্রতিবেশী দেশ মরিশাসে পালিয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রিচার্ড রাভালোমানানাও রয়েছেন।

মাদাগাস্কারে আন্দোলনের কারণ

প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও মাদাগাস্কার বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলছে, মাদাগাস্কারে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মানুষের বিদ্যুৎ-সংযোগ আছে।

শুরুতে পানি সংকট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিবাদে রাজোয়েলিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। পরে এতে বেকারত্ব, দুর্নীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াসহ নানা ইস্যু যোগ হয়। একপর্যায়ে তা সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষে রূপ নেয়।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিক্ষোভের প্রথম কয়েক দিনে সরকারি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ২২ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। তবে সরকার হতাহতের এই পরিসংখ্যানকে ভুয়া বলে আসছে।

যেভাবে রাজোয়েলিনার উত্থান

১৯৬০ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে মাদাগাস্কার বহুবার রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। সবশেষ ২০০৯ সালে গণবিক্ষোভে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মার্ক রাভালোমানানা পদত্যাগে বাধ্য হন।

তখনই মাত্র ৩৪ বছর বয়সে রাজোয়েলিনা ক্ষমতায় আসেন, তিনিই আফ্রিকার সবচেয়ে কমবয়সী সরকার প্রধান।

এরপর চার বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে আবারও প্রেসিডেন্ট হন রাজোয়েলিনা।

রাজোয়েলিনা মাদাগাস্কারের এক ধনী পরিবারের সন্তান। রাজনীতিতে আসার আগে তিনি ছিলেন উদ্যোক্তা ও ডিজে। তিনি দেশটিতে রেডিও স্টেশন ও বিজ্ঞাপন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার আকর্ষণীয় ভাবমূর্তি ম্লান হয়ে যায়। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে তার জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।