প্রযুক্তির হাওয়া বিশ্বকে দ্রুত বদলে দিচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থায়ও।
ফলে প্রচলিত শিক্ষার বাইরে এখন নতুন নতুন কোর্সের চাহিদা বাড়ছে। আগামী দিনের ক্যারিয়ার নির্ভর করছে, এমন কিছু কোর্স নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
বিদেশে এআই, প্রযুক্তি, জলবায়ুর মত চাহিদাসম্পন্ন কোন কোর্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করলে ভবিষ্যতে টেকসই হবে, এমন ক্যারিয়ারের দুয়ার খুলে যেতে পারে।
১. ক্লাইমেট টেক এন্ড সাসটেইনেবিলিটি ইঞ্জিনিয়ারিং (জার্মানি)
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিচ্ছে জার্মানি। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হয়েছে এমন কোর্স, যেখানে একসঙ্গে শেখানো হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং, গ্রিন এনার্জি ও পরিবেশনীতি। এই যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম আগামী দিনের টেকসই প্রযুক্তিবিদ ও নীতিনির্ধারকদের তৈরি করছে।
বর্তমানে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো যখন নেট-জিরো লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে, তখন পরিবেশবান্ধব দক্ষ জনশক্তির চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে।
জলবায়ুভিত্তিক ক্যারিয়ার এখন বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল ক্ষেত্র। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তা ও গ্রিন জব বৃদ্ধির ফলে এই খাতে চাকরির সুযোগ বাড়ছে ব্যাপক হারে।
চাকরির বাজারে দ্রুত চাহিদা বাড়তে থাকায় এই কোর্সটি আপনাকে নিরাপদ ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দিতে পারে।
২. ইথিকাল এআই এন্ড সোসিওটেকনিকাল কম্পিউটিং (যুক্তরাষ্ট্র)
প্রযুক্তি বিশ্বে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে এআই। কিন্তু এর অসৎ ব্যবহার নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাই এআই এর সঙ্গে নৈতিকতার বিষয়টিও সামনে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বরাবরই প্রযুক্তি শিক্ষায় এগিয়ে। তারা এখন শিক্ষার্থীদের এআইয়ের মানবিক ও দায়িত্বশীল ব্যবহারের শিক্ষা দিচ্ছে।
যেহেতু বিষয়টি এখনো নতুন, তাই এক্ষেত্রে এখনো বিশেষজ্ঞ সংকট রয়েছে। তাই এ ধরণের কোর্স আপনাকে ভালো ক্যারিয়ারের সুযোগ দিতে পারে।
৩. নিউরোমার্কেটিং এন্ড কনজুমার বিহেভিয়ার (নেদারল্যান্ডস)
নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিউরোসায়েন্স ও বিহেভিয়ারাল ইকোনমিক্সকে মার্কেটিংয়ের সঙ্গে একত্রিত করে যুগান্তকারী কোর্স চালু করেছে। এসব কোর্সে শিক্ষার্থীরা শেখে- মস্তিষ্কের কার্যপ্রক্রিয়া কীভাবে ব্র্যান্ডিং ও কেনাকাটার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।
বিশ্বজুড়ে বড় বড় ব্র্যান্ড এখন এমন ব্যক্তিদের খোঁজ করছে, যারা মস্তিষ্ক ও ব্যবসা- দুয়ের জ্ঞানই রাখে। নিউরোমার্কেটিংয়ে দক্ষতা তাদের জন্য ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি হতে পারে।
৪. ডিজিটাল হেলথ এন্ড টেলিমেডিসিন (কানাডা)
স্বাস্থ্যসেবা যখন ধীরে ধীরে রিমোট বা অনলাইনভিত্তিক হয়ে উঠছে, তখন কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুরু করেছে আধুনিক ও যুগোপযোগী কোর্স। এসব কোর্সে রয়েছে টেলিহেলথ, ডিজিটাল ডায়াগনস্টিকস এবং তথ্য-নির্ভর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ।
করোনাপরবর্তী বিশ্বে ডিজিটাল হেলথকে ঘিরে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে স্বাস্থ্যখাত। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কানাডা তৈরি করছে এমন দক্ষ জনশক্তি, যারা ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যসেবাকে নেতৃত্ব দিতে পারবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে।
৫. স্পেস সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং (অস্ট্রেলিয়া)
মহাকাশ খাতে অস্ট্রেলিয়ার দ্রুত অগ্রগতি এখন বৈপ্লবিক রূপ নিচ্ছে। এই খাতকে ঘিরে গড়ে উঠছে স্যাটেলাইট ডিজাইন, অরবিটাল মেকানিক্স ও অ্যারোস্পেস প্রযুক্তিনির্ভর বিশেষায়িত কোর্স।
দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতের মহাকাশ প্রকৌশলীদের গড়ে তুলছে আধুনিক জ্ঞান ও দক্ষতায়।
স্পেস স্টার্টআপ এবং নাসার সঙ্গে যৌথ গবেষণার সুযোগ থাকায়, মহাকাশভিত্তিক ক্যারিয়ার এখন আর কল্পবিজ্ঞান নয়- এটা বাস্তব সম্ভাবনা। ফলে তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে এই সেক্টরের দিকে।
৬. ফুড সিকিউরিটি এন্ড ইগ্রিটেক ইনোভেশন (আয়ারল্যান্ড)
আয়ারল্যান্ড এখন খাদ্য-প্রযুক্তি (Food-Tech) শিক্ষায় বিপুলভাবে বিনিয়োগ করছে। দেশটির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু হয়েছে জলবায়ু সহনশীল কৃষি, সুনির্দিষ্ট চাষাবাদ (Precision Farming) এবং এগ্রি-রোবোটিকস বিষয়ক আধুনিক কোর্স।
বিশ্বজুড়ে খাদ্য ব্যবস্থা এখন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। এ অবস্থায় প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান চাহিদার শীর্ষে। আয়ারল্যান্ডের এই উদ্যোগ ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
৭. কালচারাল ডেটা সায়েন্স (ডেনমার্ক)
অগ্রসর চিন্তাধারার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ডেনমার্কের আরহুস বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছে একটি ব্যতিক্রমী আন্তবিষয়ক কোর্স। এই পাঠ্যক্রমে ডেটা অ্যানালিটিকসকে একত্রিত করা হয়েছে মানবিক বিষয়- যেমন মিডিয়া, ইতিহাস ও শিল্পকলা বিশ্লেষণের সঙ্গে। শিক্ষার্থীরা এখানে শিখছে কীভাবে বড় ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ধারায় লুকিয়ে থাকা প্যাটার্ন ও পরিবর্তন ধরতে হয়।
সমালোচনামূলক চিন্তার সঙ্গে বিগ ডেটার এমন দুর্লভ সংমিশ্রণ এখন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও ডিজিটাল মিডিয়া সংস্থাগুলোর পছন্দের শীর্ষে। ভবিষ্যতের জ্ঞানভিত্তিক সমাজে এই কোর্স দেবে এক অনন্য দক্ষতা।