মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করে মোট শুল্কহার ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছেন।
এর কারণ হিসেবে তিনি ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করেছেন।
এই সিদ্ধান্তে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তকে অন্যায্য, অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য বলেছে।
যেসব কাজের জন্য ভারতকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, ঠিক একই কাজ মার্কিন মিত্র দেশগুলোও করছে- বলছে মোদি সরকার।
সর্বোচ্চ শুল্কের শিকার এখন ভারত
বর্তমানে ভারত এবং ব্রাজিল বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মার্কিন শুল্কের শিকার, উভয় দেশের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।
তুলনামূলকভাবে চীনের উপর শুল্ক ৩০%, কানাডা ও ইরাকের ক্ষেত্রে ৩৫%, আর সুইজারল্যান্ডের ক্ষেত্রে ৩৯%।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কাছ থেকে প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যেখানে ভারত আমদানি করেছে ৪১ বিলিয়নের মতো।
ভারত দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘দ্বিচারিতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। হাঙ্গেরিসহ অনেক ইউরোপীয় দেশ এখনো পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে, একই কারণে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের উপর বাড়তি শুল্ক চাপাচ্ছে।
এছাড়া চীন রাশিয়ার সর্ববৃহৎ তেল আমদানিকারক দেশ হয়েও এখনও এমন কঠোর শুল্কের মুখে পড়েনি।
২০২৪ সালে চীনের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির ২১.৫ শতাংশ এসেছিল রাশিয়া থেকে। এছাড়া রাশিয়া থেকে চীন প্রচুর পরিমাণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসও আমদানি করে যাচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২১ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ২৫৭.৫ বিলিয়ন ইউরোর বাণিজ্য করেছিল। ২০২৪ সালে তা কমে ৬৭.৫ বিলিয়ন ইউরোতে নামলেও এখনো বিশাল অঙ্কে রাশিয়ান গ্যাস ও জ্বালানি আমদানি অব্যাহত রেখেছে ইউরোপীয়রা।
গবেষণা সংস্থা CRECA এর তথ্যমতে, ইউরোপ ২০২৪ সালে রাশিয়াকে কেবল গ্যাস বাবদ ১০৫.৬ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে, যা রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রায় ৭৫ শতাংশ।
অন্যদিকে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে মোট ৫.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য লেনদেন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এখনো রাশিয়া থেকে কিছু রাসায়নিক ও শিল্পজাত পণ্য আমদানি করছে।
এদিকে ভারত সরকার জানিয়েছে, ১.৪ বিলিয়ন মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই তারা রাশিয়া থেকে তেল আমদানি চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে শুল্ক আরোপ করলে ভারতও তার জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে, জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
