ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও করণীয়

স্বাস্থ্য সম্পাদক

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ডেঙ্গু সবচেয়ে প্রাণঘাতি রোগের তালিকায় ওঠে আসছে। বাংলাদেশ, ভারতের মত দেশে বছরে বহু মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।

মশাবাহিত এই রোগটি সাধারণত খুব গুরুতর হয় না, বেশিরভাগ সময় নিজে থেকেই সেরে যায়।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু জ্বরের প্রবণতা বদলে যাওয়া ও ব্যাপক মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় কেউ কেউ মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। যা মৃত্যুও ডেকে আনছে।

   আরও পড়ুন: চুল পড়ার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়

আজকের আলোচনায় থাকছে ডেঙ্গু রোগের সবদিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।

কখন ডেঙ্গু রোগ বেশি ছড়ায়?

বৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় ডেঙ্গু সংক্রমণ সাধারণত আগস্ট-অক্টোবর মাসে বেশি হয়ে থাকে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থার কারণে এখন সারাবছরই ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকছে।

বাংলাদেশ-ভারতে ডেঙ্গু রোগ বেশি ছড়ায় কেন?

বিশ্বের সবচেয়ে ডেঙ্গু প্রবণ অঞ্চলে পড়েছে ভারত ও বাংলাদেশ। কারণ, উঞ্চমণ্ডলীয় এলাকায় মশার বিস্তার সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

এমন অঞ্চলে আবহাওয়া গরম ও স্যাঁতসেঁতে থাকে, প্রচুর বৃষ্টি হয়। আর মশার বংশবিস্তার হয় গরম ও ভেজা জায়গায়।

ডেঙ্গু রোগ যেভাবে ছড়ায়

সংক্রমিত মশার কামড়ে মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। আর যে মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে, সেগুলো দিনের বেলায় কামড়ায়।

ফলে মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে- এমন এলাকায় বসবাস বা যাতায়াত থাকলে সতর্ক হতে হবে। কারণ, সেখানে ডেঙ্গুবাহী মশা থাকার সম্ভাবনা বেশি।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

সবসময় ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেয় না। তবে সাধারণত এডিশ মশার কামড়ের ৪-১০ দিন পর উপসর্গগুলো সামনে আসে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- তীব্র জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, মাংসপেশি ও জয়েন্টে ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া, চামড়া ফুসকুড়ির মত দাগ হওয়া।

ডেঙ্গু হলে করণীয়

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কয়েক দিনের মধ্যে ডেঙ্গু ভালো হয়ে যায়। তবে সেজন্য বাসায় আলাদা যত্নের প্রয়োজন।

    আরও পড়ুন: জ্বর হলে কি খাবেন?

ঢাকার একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মেহেদী হাসান বাংলা ইনসাইট টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই রোগের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই।

“লক্ষণ অনুযায়ী রোগীকে পরামর্শ দেয়া হয়, সাধারণ কিছু ঔষধ দেয়া হয়। এর সঙ্গে কয়েকদিন লাইফস্টাইলের দিকে খেয়াল রাখতে হবে”, বলেন তিনি।

সেজন্য ডেঙ্গু হলে- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি বা তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে, জ্বর ও ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল খেতে হবে।

  আরও পড়ুন: কখন খাবেন মাল্টিভিটামিন?

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের সতর্ক পরামর্শ হল- ডেঙ্গুর ব্যথা কমাতে ইবুপ্রোফেন বা অ্যাসপিরিনের মতো ঔষধ নেয়া যাবে না। এতে রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

বিরল ক্ষেত্রে রোগী ‘গুরুতর’ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন। এমনকি ভালো লাগতে শুরু করার পরও ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো আরও তীব্রভাবে ফিরে আসতে পারে।

আরও পড়ুন: রক্তদানের উপকারিতা, আগে-পরে করণীয়

মেহেদী হাসানের পরামর্শ- তীব্র পেট ব্যথা, বারবার বমি হওয়া, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত হওয়া, বমি বা পায়খানায় রক্ত যাওয়া, প্রচণ্ড ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা, অস্থিরতা, বিশ্রাম নিতে না পারার মত উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

তিনি বলেন, “গুরুতর ডেঙ্গু রোগী দ্রুত চিকিৎসা না পেলে পরিস্থিতি খুব বিপজ্জনক হতে পারে।”

এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে থাকতে হতে পারে বলে জানান মেহেদী হাসান।

ডেঙ্গুতে যাদের ঝুঁকি বেশি

তরুণদের জন্য ডেঙ্গু তেমন ভয়ের না হলেও বয়সভেদে এটি ঝুঁকির কারণ হয়ে ওঠতে পারে।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ছোট শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

এছাড়া গর্ভবতী নারী, আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের জন্য ডেঙ্গু বিপদের কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন: গর্ভধারণের পরিকল্পনা করছেন? মানুন ৫ খাদ্যাভ্যাস

যাদের হাঁপানি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তপাতজনিত রোগের মত স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে তারাও ডেঙ্গুর ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীতে রয়েছেন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

ডেঙ্গু থেকে বাঁচার প্রধান সতর্কতা হলো মশার কামড় থেকে দূরে থাকা। সেজন্য সকাল ও বিকেলে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। এজন্য লম্বা হাতার জামা ও প্যান্ট পরে শরীর ঢেকে রাখা একটি ভালো কৌশল হতে পারে।

এছাড়া ত্বকে মশা প্রতিরোধক ব্যবহার করা, মশারি ব্যবহার করা, দরজা-জানলা বন্ধ রাখা বা জানালায় মশা ঠেকানোর জাল ব্যবহার করা যেতে পারে।