প্রশিক্ষণ: মাতৃভাষা বাঁচাতে চবিতে বর্ণমালার পাঠ

চবি প্রতিনিধি:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি ভাষার শিক্ষার্থীদের নিজেদের বর্ণমালা শেখার প্রশিক্ষণ দিয়েছে রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী।

‘মাতৃভাষায় বর্ণমালা প্রশিক্ষণ’ কর্মশালায় মারমা, ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা ও চাকমা ভাষার ৩৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন।

বহু ভাষার বাংলাদেশে যে ৮টি ভাষার নিজস্ব লিপি রয়েছে, তার মধ্যে এই ৪টি ভাষা অন্যতম।

লিখিত রুপ না থাকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির অন্তত ১৪টি ভাষা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। পড়ার মাধ্যম ও চাকরির বাজারে বাংলা-ইংরেজীর প্রভাবে অন্য ভাষাগুলোও টিকে থাকার লড়াইয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েকটি ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চললেও এর পরিসর খুবই সীমিত, মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

চবির প্রভাষক নৈরঞ্জনা চাকমার পর্যবেক্ষণ, বাংলা ভাষায় পড়ালেখা করতে গিয়ে অন্য ভাষাভাষীরা মাতৃভাষার চর্চা ভুলে যাচ্ছে, যা এখন আরও বাড়ছে।

সোমবার রঁদেভূ’র প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে এই ভাষা বিপন্নতা ঠেকানোর তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।

অনুষ্ঠানে বিশ্বায়নের যুগে ছোট জাতিগোষ্ঠীর ভাষা কিভাবে সংকটে পড়ছে, সে চিত্র তুলে ধরেন অধ্যাপক কাঞ্চন চাকমা।

তার ভাষ্য, “প্রযুক্তির অপব্যবহার এবং ভিন্ন ভাষার আগ্রাসনে নতুন প্রজন্মের কাছে মাতৃভাষার গুরুত্ব কমে যাচ্ছে।

“ভলান্টিয়ারিং কাজ করে আমরা সমাজে ভাষা-সংস্কৃতি চর্চা বৃদ্ধি করতে পারি। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের এসব উদ্যোগে যুক্ত করে ভাষা-সংস্কৃতি সচেতন প্রজন্ম গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে নিজের ভাষা নিয়েও গবেষণায় মনোযোগী হতে হবে।”

ভাষার সঙ্গে একটি জাতির সংস্কৃতি, জীবনযাপন ও মূল্যবোধ যে জড়িয়ে থাকে- সেটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন অধ্যাপক সুকান্ত ভট্টাচার্য।

“ভাষা হারিয়ে যাওয়া মানে এগুলো হারিয়ে ফেলা। পৃথিবীতে বিভিন্ন বিলুপ্তপ্রায় ভাষার সাথে ঐ ভাষাভাষী লোকের অস্তিত্বও এখন সংকটাপন্ন।”

মাতৃভাষা বাঁচাতে নিজের সম্প্রদায়ের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার তাগিদ দিয়ে ইংরেজির অধ্যাপক সুকান্ত বলেন, “ভাষা অনেক কারণেই হারিয়ে যায়, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আধিপত্যই এর প্রধান কারণ।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ফারজানা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, “সরকারিভাবে আদিবাসী ভাষা নিয়ে যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।”

তার পরামর্শ, সংকটাপন্ন ভাষাগুলো নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।

রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক নুখ্যাইমং মারমার সঞ্চালনা ও সভাপতি রবি বিকাশ চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রঁদেভূ’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জাল্লাং এনরিকো কুবি।