কোলেস্টেরল বাড়ে যে কারণে, কমানোর উপায়

উচ্চ কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য অনেক বড় ঝুঁকির কারণ। এটি হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।

মূলত আমাদের জীবনযাত্রার কারণেই শরীরে কোলেস্টেরল বাড়তে থাকে। কিছু সহজ অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

চলুন জেনে নেওয়া যাক কোলেস্টেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী খাবেন, কী খাবেন না এবং অন্য যেসব জীবনধারা অনুসরণ করবেন।

উচ্চ কোলেস্টেরল কী?

রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুব বেশি হলে তা ‘উচ্চ কোলেস্টেরল’ হিসেবে ধরা হয়। এটি হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন জটিল রোগের কারণ হতে পারে।

যেসব খাবার উচ্চ কোলেস্টেরল বাড়ায়

স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও চিনি সমৃদ্ধ খাবার উচ্চ কোলেস্টেরলের প্রধান কারণ। তাই নিচের খাবারগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত-

১. চর্বিযুক্ত মাংস
২. বাটার, ঘি ও ফুল-ফ্যাট দুগ্ধজাত খাবার
৩. পাম অয়েল ও নারিকেল তেল
৪. প্রসেসড ফুড- যেমন বিস্কুট, কেক, প্যাস্ট্রি, চকলেট
৫. সাদা আটা, পাউরুটি, চিনি মেশানো সিরিয়াল, সাদা ভাত ও পাস্তা
৬. সুগার ড্রিঙ্কস, চিপস ও মিষ্টি খাবার

কোন খাবারগুলো কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে?

কম চর্বিযুক্ত ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তাই নীচের খাবারগুলো খাবারের তালিকায় বেশি করে রাখার চেষ্টা করুন।

আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট

  • ভেজিটেবল অয়েল (সানফ্লাওয়ার, অলিভ, রেপসিড তেল)
  • বাদাম, বীজ, অ্যাভোকাডো
  • মাছ (বিশেষ করে তৈলাক্ত মাছ, যেমন স্যামন)

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার

  • প্রতিদিন কয়েক জাতের ফল ও সবজি খান।
  • ডাল, ছোলা জাতীয় খাবার খান।
  • বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার খান।
  • ব্রাউন ব্রেড, ব্রাউন রাইস ও ওটসের মতো খাবার খান।

এছাড়া দুধের বিকল্প হিসেবে স্কিমড মিল্ক, সাদা দই খেতে পারেন। মাংসের বদলে মুরগি, মাছ, বা সয়া প্রোটিন খেতে পারেন।

কীভাবে জানবেন আপনার কোলেস্টেরল বেশি কিনা?

রক্ত পরীক্ষা করলেই কোলেস্টেরলের মাত্রা জানা যায়। ডাক্তাররা সাধারণত কিছু খাবার ও জীবনযাপন পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি কমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

কোলেস্টেরল কমানোর উপায়

সঠিক খাবার, ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই হলো উচ্চ কোলেস্টেরল কমানোর প্রধান উপায়। প্রয়োজন হলে ওষুধ সেবনের বিষয়েও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

১. চর্বিযুক্ত খাবার কম খান

বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে এমন খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। এর পরিবর্তে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে এমন খাবার খাওয়া ভালো।

খেতে পারেন:

  • তৈলাক্ত মাছ।
  • অলিভ অয়েল।
  • বাদামি চাল, হোলগ্রেইন ব্রেড, হোলহুইট পাস্তা।
  • বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার।
  • ফল ও শাক-সবজি।

এড়িয়ে চলুন:

  • মাংসের পাই, সসেজ, বেশি চর্বিযুক্ত মাংস।
  • মাখন, ঘি।
  • ক্রিম এবং শক্ত চিজ।
  • কেক ও বিস্কুট।
  • নারকেল তেল ও পাম তেলযুক্ত খাবার।

২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন

ব্যায়াম ‘খারাপ কোলেস্টেরল’কে (non-HDL) লিভারে পাঠিয়ে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে। তাই, প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।

যা করতে পারেন:

  • দিনে কয়েকবার দ্রুত হাঁটা (যাতে হৃদস্পন্দন বাড়ে)।
  • সাঁতার।
  • সাইকেল চালানো।
  • লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠতে পারেন।

এছাড়াও নিজের পছন্দ মতো ব্যায়াম বেছে নিন- যা উপভোগ করবেন, সেটাই নিয়মিত করার চেষ্টা করুন।

৩. ধূমপান ও অ্যালকোহল পান ছাড়ুন

ধূমপান শরীরের ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কমিয়ে দেয় এবং খারাপ কোলেস্টেরল (non-HDL) বাড়িয়ে দেয়। এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই কোলস্টেরেল নিয়ন্ত্রনে রাখতে ধূমপান ছেড়ে দিন।

ধূমপান বন্ধ করলে কয়েক দিনের মধ্যেই শরীর ভালো বোধ করতে শুরু করে এবং ১ বছরের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়।

এছাড়া অ্যালকোহল বেশি খেলে লিভারের কাজ ব্যাহত হয় এবং কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। তাই অ্যালকোহল পানের অভ্যাস থাকলে তা ছেড়ে দিন।

কখন চেকআপ করা জরুরি?

যদি আপনার কোলেস্টেরল বেশি থাকে, বছরে অন্তত একবার টেস্ট করানো দরকার। আর যাদের কোলেস্টেরল স্বাভাবিক বা সামান্য বেড়েছে, তারা প্রতি ৫ বছরে একবার টেস্ট করালেই যথেষ্ট।