গ্রেগ চ্যাপেল
জো রুট নিঃসন্দেহে ইংল্যান্ডের আধুনিক যুগের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন, অনেকে তো তাকে সেরা বলেই মানেন।
তিনি এখন পর্যন্ত টেস্টে ১৩,৪০৯ রান করেছেন, গড় ৫১.১৭- যার মধ্যে রয়েছে ৩৮টি সেঞ্চুরি।
১৩ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে রুট ছাড়িয়ে গেছেন কুকের ১২,৪৭২ রানের মহাকীর্তিও- যা একসময় ইংলিশ ব্যাটারদের জন্য ছোঁয়ার বাইরে বলেই মনে করা হতো। এখন তার লক্ষ্য ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে উঁচু রানের পাহাড়- শচীন টেন্ডুলকারের ১৫,৯২১ টেস্ট রান।
রুটের বয়স এখন চলছে ৩৩ বছর, যদিও তিনি এখনো ব্যাট হাতে নতুন খেলোয়াড়দের মতোই ক্ষুধা নিয়ে নামেন। ঠিক যেমনটা টেন্ডুলকার করেছিলেন তার সময়ে।
টপ লেভেলে দীর্ঘদিন খেলার পর অনেক ব্যাটসম্যানই মানসিক-শারীরিক চাপে পড়েন। ধীরে ব্যাটিং করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধা, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া- ৩৫ বছরের দিকে এসব সংকটে পড়েন তারা।
তবে অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, জো রুটের মধ্যে এমন কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না।
৩৩ বছর বয়সী এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান এখনো তার পায়ের কাজ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আগের মতোই আত্মবিশ্বাসী। যেখানে অন্য অনেক তারকা এই বয়সে গতি হারাতে শুরু করেন, রুট সেখানে এখনো ব্যাট হাতে ধারাবাহিকভাবে উজ্জ্বল।
আগামী তিন বছরে জো রুটের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। কারণ তার সামনে এখন সম্ভাব্য এক বিশ্বরেকর্ড- টেস্টে শচীন টেন্ডুলকারের ১৫,৯২১ রানের চূড়া ছোঁয়া।
এই পর্বের চূড়ান্ত গন্তব্য হতে পারে ২০২৮ সালের ভারত সফর, যেখানে রেকর্ড স্পর্শ করে নায়কোচিত পরিণতির সুযোগ থাকছে। তবে এখনো ২৫১২ রান বাকি- যা এক সময়ে পুরো ক্যারিয়ারের সমান বলে বিবেচিত হতো। আধুনিক সময়ে যেখানে টেস্ট কম, আর শারীরিক-মানসিক চাপ অনেক বেশি, সেখানে এটা এক দুঃসাধ্য চ্যালেঞ্জ।
২০২৮ সালের সেই সফরে যদি রুট টেন্ডুলকারকে টপকে যান, তাহলে সেটি হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্তরে তার ১৬তম বছর- আধুনিক ক্রীড়াবিশ্বে যা প্রায় নজিরবিহীন। বিশেষ করে টেস্ট ব্যাটিংয়ের মতো ফরম্যাটে।
রুট কেমনভাবে এই বাকি কয়েক হাজার রান সামলাবেন, তা-ই নির্ধারণ করবে তার ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়।
জো রুট সবসময় চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করেন বিনয়, দৃঢ়তা এবং এক চিরচেনা হাসি নিয়ে। গত বছর ইয়ান চ্যাপেল বলেছিলেন, রুট “এক ব্যাটিং বিস্ময়”, কিন্তু তার সামনে এখন দুটি বড় পরীক্ষা- অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পারফর্ম করা এবং টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে যাওয়া।
অস্ট্রেলিয়ায় এখনো একটি টেস্ট শতকও করতে পারেননি রুট। এটি তার ঝলমলে ক্যারিয়ারের একমাত্র ফাঁকা জায়গা। অস্ট্রেলিয়ার হ্যাজলউড, কামিন্স, স্টার্ক, লায়নের মতো দুর্ধর্ষ বোলারদের বিরুদ্ধে সফল না হওয়ার কারণ হয়তো এটিই। এই বছরের শেষে অ্যাশেজ সিরিজ হতে পারে তার শেষ সুযোগ সেই খরা কাটানোর।
হোক বা না হোক রেকর্ড ভাঙা, রুট ইতোমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এক কিংবদন্তি হিসেবে।
