বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-২০ ম্যাচ খেলতে নামবে টাইগাররা।
যে ম্যাচটি সিরিজ শুরুর আগে সূচিতেই ছিল না, সেটি নিয়েই এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের আলোচনা করতে হচ্ছে।
কারণ, শারজার ম্যাচটি এখন ফাইনালে রুপ নিয়েছে। আর তাতে আমিরাতের সঙ্গে জয়ের চেয়েও বাংলাদেশের সমর্থকদের বেশি ভাবনা লজ্জার হার যেন না হয়, তা নিয়ে।
মূলত নিজেদের ভবিষ্যত প্রস্তুতির জন্য দুটি টি-২০ ম্যাচ খেলতে সংযুক্ত আরব আমিরাত গিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। লিটন দাসরা যেন নিজেদের আরেকটু ঝালিয়ে নিতে পারে সেজন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আরেকটি ম্যাচ সিরিজে যুক্ত করতে অনুরোধ জানায়।
তাতে সাড়া দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত, ২ ম্যাচের সিরিজের আয়ু বেড়ে দাঁড়ায় ৩ ম্যাচে। যা এখন ফাইনালের রোমাঞ্চ ছড়িয়ে দিয়েছে দুই শিবিরে।
ঢাকায় কয়েকজন ক্রিকেট ভক্তের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই সিরিজ নিয়ে তাদের কোন ভাবনা ছিল না।
এর কারণ, ক্রিকেটে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে দেখা হয় একটি দুর্বল দল হিসেবে। ১৫ নম্বরে থাকা একটি দলের সঙ্গে বাংলাদেশ অনায়াসে জিতে যাবে, এমন ভাবনাই ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের।
আগের ম্যাচগুলোতে একই চিত্র দেখা গেছে, টাইগারদের কাছে পাত্তাই পায়নি সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আর একপেশে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে দর্শকদের আগ্রহ কম থাকে, এমনটাই স্বাভাবিক!
কিন্তু সিরিজের প্রথম ম্যাচেই সেই ভুল ভেঙে দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। হেরে গেলেও দারুন লড়াইয়ে টাইগারদের চমকে দিয়ে তারা বার্তা দেয়, মরুর দেশের ক্রিকেটও অনেকটা এগিয়ে গেছে; যারা হারলেও ছেড়ে কথা বলবে না!
দ্বিতীয় ম্যাচেই চূড়ান্ত আঘাত! বাংলাদেশকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত। শুধু একটি জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েনি তারা, সঙ্গে বদলে দিয়েছে হিসাব নিকাশ।
সিরিজে সমতা ফেরানো ম্যাচটি সংযুক্ত আরব আমিরাত জিতে নেয় ২০৫ রান তাড়া করে। এর আগে আমিরাত কখনোই এত রান তাড়া করে ম্যাচ জেতেনি।
এই দুই ম্যাচ দেখার পর ঢাকার দর্শকদের মধ্যে এখন বড় শঙ্কা- বাংলাদেশ কি সিরিজ জিততে পারবে?
বাংলাদেশের সিরিজ জয় নিয়ে শঙ্কা কেন?
পঞ্চপাণ্ডবদের যুগ পেরিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ক্রিকট ভক্তরা মনে করছেন- দলটিতে এখন আর দায়িত্বশীল ক্রিকেটার তারা পাচ্ছেন না, যাকে নিজে ম্যাচ জেতার বাজি ধরা যায়।
সজিব আহমেদ নামে ঢাকার একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলছিলেন, এক ম্যাচ ভালো খেললে, পরের ম্যাচেও ভালো করতে পারে এমন আস্থা এখন আমরা কারও ওপর রাখতে পারছি না। এ দলটাতে ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে।
পরীক্ষিত ক্রিকেটারের অভাব যতদিন থাকবে, ততদিন দর্শকদের টেনশনে থাকতে হবে- বলছিলেন তিনি।
তার মতে, ব্যাটিং-বোলিং দুই ক্ষেত্রেই ক্রিকেটাররা অনিশ্চিত পারফরম্যান্স দেখাচ্ছেন।
এজন্যই সিরিজ জয় নিয়ে শঙ্কায় থাকতে হচ্ছে- মনে করেন বাংলাদেশের একজন ক্রিকেট বিশ্লেষক।
ফজল মাহমুদ মনে করেন- মাশরাফি জমানার পর থেকেই দলটির মানসিক অবস্থা দুর্বল দেখাচ্ছে। আমিরাতের মত দলের সঙ্গে সমতায় থেকে ফাইনালে নেমে তাদের মনের অবস্থা কোথায় থাকবে তা-ই ভাবনার বিষয়।
“দলের পারফরম্যান্স স্টেবল না। যে কোন দলকে হারানোর মানসিকতাও এখন দেখা যায় না। আগের ম্যাচ হেরেছে, তাও দুর্বল দলের সঙ্গে। এগুলো টাইগাররা কতটা কাটাতে পারবে তার উপর নির্ভর করবে ফাইনালের ভাগ্য।”
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কি দুর্বল হয়ে পড়ছে?
একটা সময় জিম্বাবুয়ের সঙ্গে কোন মতে জিততে পারলে বাংলাদেশে মিছিল হতো। তরুণদের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে ব্যাপক আগ্রহে সে অবস্থান থেকে দ্রুত এগিয়ে যায় দেশটির ক্রিকেট।
গ্রাম-গঞ্জ থেকে অসংখ্য প্রতিভাবান ক্রিকেটার জমিয়ে তুলেন ঢাকার ক্রিকেট। তার প্রভাব পরে জাতীয় দলেও।
আশরাফুল-আফতাব, মাশরাফি-সাকিব, তামিম-মুশফিক- নিয়মিতই তারকার দেখা মিলে দলটিতে। জয়ের তালিকা বাড়তে থাকে।
মাশরাফি যুগে স্বপ্নের মত সময় কাটাতে থাকে ক্রিকেট দল। হারাতে থাকে বাঘা বাঘা দলকে। পঞ্চপাণ্ডবরা আশা দেখান দেশের ক্রিকেটকে।
তবে এই জুটি ভেঙে যাওয়ার পর বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন হতাশাই দেখছে বেশি। দুর্বল দলগুলোর সঙ্গে মাঝে মাঝেই হেরে যাওয়া দর্শকদেন বিব্রত করছে।
ঢাকার আরেকজন দর্শক মাহবুব আলম মনে করেন, পাইপলাইনে মাশরাফি-সাকিবদের জায়গা নেওয়ার মত ক্রিকেটার তৈরি হয়নি, এটিই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ডুবিয়েছে।
“মাঝে মাঝে কেউ কেউ ভালো করছে। কিন্তু তারা সেটা ধরে রাখতে পারছে না। দলটা একটা টিম হয়েও খেলতে পারছে না। এসবের প্রভাব ক্রিকেটে পড়বে না?”
তার শঙ্কা, বাংলাদেশের ক্রিকেট ভবিষ্যতে আরও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। কারণ, ক্রিকেটাররা এখন আর তরুণদের খেলাটির প্রতি আগ্রহী হওয়ার মত পারফরম্যান্স দেখাতে পারছে না।
তবে এসবের জন্য ক্রিকেটার নয়, দেশের ক্রিকেটের ব্যবস্থাপকদের দায় দিচ্ছেন তিনি।