হংকংয়ের কোচ অ্যাশলে ওয়েস্টউড বলেছিলেন তিনি ‘হামজা চৌধুরীকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখতেন’। এমন কথা বলার পর তিনি কি চিন্তা করেছিলেন সেই হামজার পা থেকেই বাংলাদেশের প্রথম গোল আসবে? বাংলাদেশ ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়েও শেষ ১৫ মিনিটে ৩-৩ সমতা, আবার সেকেন্ডের ব্যবধানে গোল হজম করে ৪-৩ গোলে হার? হংকং যদি বাংলাদেশে এমন খেলতে পারে বাংলাদেশও কি পারবে সেখানে গিয়ে ওই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে? বাংলাদেশ কি হংকংয়ের বিপক্ষে পরবর্তী ম্যাচ জিততে পারবে? এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সমর্থকদের মাথায়। তার আগে খুঁজতে হবে, এগিয়ে গিয়েও কেন এমন হার বাংলাদেশের?
হংকং ম্যাচে বাংলাদেশ কোচের দল নির্বাচন এবং কৌশলে কী ভুল ছিল? রক্ষণের এমন বাজে অবস্থা কেন? গোলকিপার মিতুল মারমা বল পজিশনিং বা ম্যাচ রিড করার মত যথেষ্ট ফিট কি না? ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সাদ উদ্দিন, মিডফিল্ডার সোহেল রানা জুনিয়রের কী এ দলে জায়গা হওয়া উচিত? লেফট উইংয়ে ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের প্রভাব কতটুকু ছিল ম্যাচে? মিডফিল্ডে জামাল ভূঁইয়া, সামিত সোম, শাহ কাজেম কিরমানির মত মিডফিল্ডারের জায়গা হচ্ছে না কেন? উইঙ্গার ফরোয়ার্ড ফাহমিদুল সেরা একাদশে নাই কেন? জাতীয় দলে একটি ক্লাবের খেলোয়াড়দের আধিক্য কী পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে? বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা কি এখনও এই দলের কোচিং করানোর উপযুক্ত?
তবে এখনও আশাবাদী বাংলাদেশের প্রাণভোমরা হামজা চৌধুরী। হংকং ম্যাচের পর তিনি বলেছিলেন, ‘আশাকরি, আমরা পরের তিনটি ম্যাচই জিতব।’ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া এখনও আশাবাদী। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের হাতে তিনটি ম্যাচ আছে। তিনটি ম্যাচই জিততে হবে। এক পয়েন্ট হারালেই আমাদের বিদায়। ইনশাআল্লাহ এবার আমরা কিছু দিতে পারব।’
সামিত সোম: ‘হতাশ কিনা জানি না। তবে ওই মুহুর্তে গোল করতে পেরে খুব সম্মানিত বোধ করছি। গোল না দিয়েও যদি আমরা জিততাম তবে আরও ভালো লাগত। ড্র করলেও ভালো লাগত। দর্শকরা যেভাবে উদযাপন করছে ওই অনুভূতিটা আমি কখনই ভুলব না। আমাদের শিখতে হবে আরও। ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশ হংকংয়ের বিপক্ষে জিতবে।’

সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘খেলোয়াড়েরা শিশুসুলভ ভুল করেছে। তৃতীয় গোলের উৎস তৈরি হয়েছে সাদের পায়ের ফাঁক দিয়ে। এভাবে রক্ষণ করলে জেতা সম্ভব না।’
মোহামেডান কোচ আলফাজ আহমেদ বলছেন, ‘আগে থেকেই বলছি, ক্যাবরেরা যোগ্যতাসম্পন্ন কোচ নন। বাংলাদেশে আসার আগে একাডেমি পর্যায়ের কোচ ছিলেন। কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। এখানে প্রায় চার বছর হচ্ছে তাঁর। আমি বলব, একজন অভিজ্ঞ কোচ থাকলে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে বাংলাদেশ দলের জন্য ভালো হতে পারত। সাফ জিততে না পারার পরই তাঁকে বাদ দিয়ে নতুন কোচ আনা দরকার ছিল।’
বাংলাদেশের অন্যতম সেরা আবাহনীর কোচ মারুফুল হক – ‘লেফট ব্যাক সাদের কোনো ক্রস দেখিনি। জায়ান শুরু থেকে থাকলে হয়তো ভালো হতো।’
বাংলাদেশের সমর্থকদের প্রশ্ন, জামাল ভূঁইয়া, জায়ান, সামিত সোম বা ফাহমিদুল ইসলামকে কেন আগে নামানটি কোচ। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ৩-১ গোলে পিছিয়ে। বিরতির পর ৫৭ মিনিটে ক্যাবরেরা যখন জামাল, সামিত এবং ফাহমিদুলকে যখন মাঠে নামালেন, মাচের চিত্রই বদলে গেল। মাঝমাঠ বাংলাদেশের হাতে, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও। মোরসালিনের দেয়া গোলের বল সাপ্লাই করেছে ফাহমিদুল। সামিতের গোলে বাংলাদেশ ৩-৩ সমতা আনে। অর্থাৎ শতভাগ প্রভাব রাখতে পেরেছিল বদলিরা।

জায়ান আহমেদ বাংলাদেশের ফুটবলে যুক্ত হওয়া নতুন একটি নাম। হংকংয়ের বিপক্ষের ম্যাচ ৭৮ মিনিটে অভিষেক হয়েছে এ ডিফেন্ডারের। লেফট ব্যাকে পুরোটাই সার্পোট দিতে পারেন। মাঠে নেমেই বাংলাদেশ দলে নিজের ভবিষ্যৎ লিখে ফেলেছেন জায়ান। বাংলাদেশ যখন ৩-১ গোলে পিছিয়ে, জায়ান নামার পরই লেফট ব্যাকের পুরো চিত্রটাই পাল্টে যায়। খেলায় প্রাণ ফিরে পায়, আক্রমণের গতি বাড়ে, হামজা-জায়ানের বোঝাপড়াও ঠিকঠাক ছিল। খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রায় সবগুলো আক্রমণ বাংলাদেশ লেফট উইং দিয়েই করেছিল। দারুণ কিছু কারিকুরিতে হংকং রক্ষণে কাপনও ধরিয়েছিলেন জায়ান।
হাউসফুল স্টেডিয়ামে ম্যাচের ১৩ মিনিটে ফ্রিকিক থেকে মোহনীয় এক গোল করেন হামজা, প্রতিপক্ষকে দিয়ে রাখেন বার্তা। এরপর ডিফেন্সের ভুল এবং ফাহিমের অপ্রত্যাশিত হেড, লুফে নেন এভারটন কামারগো, প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে ১-১ সমতায় হংকং। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি খেলোয়াড় নামেন রাফায়েল মারকিস, ৫০ এবং ৭৪ মিনিটের সাদের দুই পায়ের ফাঁক গলে বের হওয়া বলে গোল করে এগিয়ে দেয় হংকংকে। ৮৪ মিনিটে মোরসালিন ও যোগ করা সময়ের ৯ মিনিটে সামিত সোম গোল করলে ৩-৩-এ সমতা আসে। যোগ করা সময়ের ১১তম মিনিটে আনমার্কড সেই মারকিসের শট, সাদের পায়ের ফাঁক এবং মিতুলের হাত গলে আবারও গোল, হৃদয় ভেঙে যায় স্বাগতিক খেলোয়াড় ও সমর্থকদের। ৩-৪ গোলে হার মানে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে প্রতিপক্ষের মানসিকতা বুঝতে হবে। ম্যাচ ভালোভাবে রিড করতে হবে, মাঠের পরিবেশ বুঝতে হবে। বাংলাদেশে এ বিষয়গুলো বুঝতে পারলে হামজা, জামাল বা সামিতের মত বাংলাদেশের কোটি কোটি সমর্থক তাদের এ কথা বিশ্বাস করবে। আর ওই বিশ্বাসটা বাংলাদেশ ফুটবল দল ইতিমধ্যে তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে।
