বঙ্গবন্ধু: জনগণের হৃদয় থেকে উঠে আসা মহানায়ক

১৫ আগস্ট- বাংলাদেশের ইতিহাসের এক শোকাবহ দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য।

বাঙালি জাতি দিনটিতে শোক পালন করলেও একইসঙ্গে স্মরণ করে তাঁর অবিনাশী অবদান ও বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্ব- যা একটি জাতির ভাগ্য ঠিক করে দিয়েছিল।

জনগণের হৃদয় থেকে উঠে আসা নেতা

শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয়েছিল সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষার সংগ্রাম থেকে। ছাত্র রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে পৌঁছে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার মানুষের অকপট কণ্ঠস্বর।

অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, অনন্য বক্তৃতার ক্ষমতা ও অবিচল প্রতিশ্রুতির জন্য তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’ বা বাংলার বন্ধু হয়ে ওঠেন।

আরও পড়ুনআজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট

স্বাধীনতার স্থপতি

ষাট ও সত্তরের দশকের অস্থির রাজনৈতিক সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপরেখা নির্মাতা। ১৯৬৬ সালে ঘোষিত তাঁর ঐতিহাসিক ৬ দফা ছিল পূর্ব বাংলার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের স্পষ্ট নকশা।

গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হত্যার হুমকির মধ্যেও তিনি জনগণের অধিকার আদায়ে কখনও পিছিয়ে যাননি।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ, তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ কোটি কোটি মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে স্বাধীনতার স্বপ্ন। তিনি উচ্চারণ করেন- “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

আরও পড়ুন- বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতা

রক্ত ও ত্যাগে জন্ম নেওয়া দেশ

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালিয়ে ঢাকায় গণহত্যা শুরু করে। ভয়াল কালরাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়, এর আগেই তিনি দিয়ে যান দেশকে শত্রুমুক্ত করার ডাক।

পাকিস্তানের কারাগরে থাকলেও তাঁর নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হয়েই বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর সহকর্মীরা সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা শুরু করেন, যে সরকারের নামই হয়ে যায় মুজিবনগর সরকার।

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লাখো শহীদের প্রাণ ও অসংখ্য নারীর ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ- যা ছিল বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন।

নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন

১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে স্বাধীন দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু শুরু করেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের মহাকাজ। তিনি চেয়েছিলেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সামাজিক ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ।

তাঁর নেতৃত্বে দেশের প্রথম সংবিধান প্রণীত হয়- যেখানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল মূল নীতি।

বেদনাদায়ক সমাপ্তি, অমর স্মৃতি

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে এক সামরিক অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করা হয়। এটি শুধু একজন নেতার মৃত্যু নয়, বরং একটি জাতির গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে গভীর আঘাত ছিল।

তবুও মৃত্যুর পরও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে। তাঁর ভাষণ, নীতি ও সাহস আজও জাতির চেতনায় অম্লান।

যে উত্তরাধিকার চিরকাল বেঁচে থাকবে

বাংলাদেশ যখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে, তখন বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ জাতিকে ঘুরে দাঁড়াতে দিক-নির্দেশনা দেয়। সাধারণ মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা ও মর্যাদার জন্য তাঁর সংগ্রাম চিরকালই বাঙালির প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।