এআই: বিভ্রান্তির বিপদ এড়াতে আইন সংশোধনে ভারত

ভারত বিষয়ক সম্পাদক

এআই তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি কনটেন্টকে সামনে রেখে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে ভারত সরকার।

মূলত জনগণকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করতেই নয়াদিল্লি এ পদক্ষেপ নিচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে এআই প্রযুক্তি যে নাড়া দিয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে ভারতেও। দেশটিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ এআই ব্যবহার করে কনটেন্ট তৈরি করায় ভুয়া তথ্যও ছড়িয়ে পড়ছে।

ফলে উদ্বিগ্ন ব্যক্তিরা এআই প্রযুক্তিতে নিয়ন্ত্রণ আনার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন।

এ পরিস্থিতিতে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের আইটি বিধিতে সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। এতে এআই কনটেন্টে আলাদা লেবেল রাখা বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে।

এর ফলে একজন ব্যবহারকারী সহজেই আসল ছবি-ভিডিও থেকে কৃত্রিমভাবে তৈরি কনটেন্ট আলাদা করতে পারবেন। অর্থাৎ এআই দিয়ে বাস্তব তথ্য তৈরির চেষ্টার যে প্রবণতা, নতুন সিদ্ধান্তে তা থেকে বিভ্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসবে।

মন্ত্রণালয় বলছে, সহজলভ্য হওয়ায় এআই টুলের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। এতে ডিপফেক, ভুয়া ভিডিও এবং বিভ্রান্তিকর প্রচারণাও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।

এতে মানুষের ক্ষতি করা, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করা, ভুয়া খবর প্রচার করা, প্রতারণা করার মত ঘটনা যে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে- তাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

এআই নিয়ে আইনে যা থাকছে

তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংসদীয় আলোচনা ও জনমতের ভিত্তিতে তৈরি আইনের খসড়া সংশোধনীতে এআই কনটেন্টে আলাদা লেবেল যুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

অর্থাৎ এআই কনটেন্ট ভার্চুয়াল মাধ্যমে আপলোড করার সময়ই এটি যে কৃত্রিমভাবে তৈরি- তা স্পষ্ট করতে হবে।

ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মগুলোকেও প্রযুক্তিগতভাবে কৃত্রিম কনটেন্টের লেবেল যাচাই করতে হবে।

খসড়া সংশোধনী চূড়ান্ত হলে- কৃত্রিম ছবি বা ভিডিওর কমপক্ষে ১০ শতাংশ অংশে দৃশ্যমান লেবেল থাকতে হবে।

অডিও কনটেন্ট হলে প্রথম ১০ শতাংশ সময়ের মধ্যে সতর্কীকরণ বার্তা শোনাতে হবে।

কনটেন্টে একটি স্থায়ী মেটাডেটা বা ইউনিক আইডেন্টিফায়ার সংযুক্ত থাকবে- যা থেকে সহজেই বোঝা যাবে এটি কৃত্রিমভাবে তৈরি।

কোন প্ল্যাটফর্ম এই লেবেল মুছে ফেলতে বা পরিবর্তন করতে পারবে না।

কেন এআই লেবেল বাধ্যতামূলক হচ্ছে?

ভারতের আইটি মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, “সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ডিপফেক অডিও-ভিডিও প্রমাণ করছে যে- এআই ব্যবহার করে বিশ্বাসযোগ্য মিথ্যা কনটেন্ট তৈরি করা এখন খুব সহজ।

“অনেক সময় এতে মানুষকে অশালীন বা আপত্তিকরভাবে উপস্থাপন করা হয়, রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়, এমনকি আর্থিক প্রতারণাও হয়।”

আইনী পরিবর্তনের পর  ব্যবহারকারীর সচেতনতা, জবাবদিহি ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়।

৫০ লাখের বেশি ব্যবহারকারী আছে, এমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কৃত্রিম কনটেন্ট চিহ্নিত ও সরানোর ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে খসড়া আইনে।

এর ফলে কেউ এআই প্রযুক্তির অপব্যবহারের ভুক্তভোগী হলে, প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ পাবেন।

সেজন্য নতুন আইনে ব্যবহারকারীর অভিযোগ পেলে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে কৃত্রিম তথ্য মুছে ফেলতে কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নিয়ম কার্যকর হলে ডিপফেক শনাক্ত ও প্রতিরোধে বড় অগ্রগতি আসবে।

তবে লেবেলিং সিস্টেম কার্যকর করার চ্যালেঞ্জ সম্পর্কেও সতর্ক করছেন তারা।