শান্তিতে নোবেল পাচ্ছেন কে ? মনোনীতদের তালিকায় আছেন ট্রাম্পও

২০২৫ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের মনোনীতদের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম রয়েছে। তিনি একাধিকবার দাবি করেছেন, “বিশ্বে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ বন্ধ করে তিনি এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের যোগ্য।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ১২৪ বছরের পুরোনো এই পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা ট্রাম্পের খুবই কম। পুরস্কারের জন্য মোট ৩৩৮টি মনোনয়ন জমা পড়েছে, যার মধ্যে ২৪৪ জন ব্যক্তি এবং ৯৪টি প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এবারের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে রয়েছেন সুদানের ‘ইমারজেন্সি রেসপন্স রুমস এবং ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)।

প্রতি বিজয়ী পাবেন ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা (প্রায় ১২ লাখ মার্কিন ডলার) অর্থমূল্য, একটি স্বর্ণপদক ও সম্মাননাপত্র। পুরস্কারটি প্রদান করা হবে ডিসেম্বরের ১০ তারিখে, সুইডিশ উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুদিবসে।

গত বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিল জাপানের পারমাণবিক বোমা হামলার বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সংগঠন ‘নিহন হিদানকিও। যারা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন

নরওয়ের পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআইও)-এর পরিচালক নিনা গ্রেগার আল জাজিরাকে বলেন, “এই বছর শান্তি পুরস্কার যদি ‘ইমারজেন্সি রেসপন্স রুমস-এর মতো মানবিক উদ্যোগকে দেওয়া হয়, তবে তা সংঘাতময় সময়ে সাধারণ মানুষের ত্যাগ ও মানবিক সেবার স্বীকৃতি হবে।”

তিনি আরও বলেন, “একইভাবে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করা ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস-কে পুরস্কার দিলে তা হবে একটি শক্তিশালী বার্তা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিপন্ন হলে শান্তি ও গণতন্ত্রও বিপন্ন হয়।”

বুকমেকারদের তালিকায় এগিয়ে ট্রাম্প

বেটিং সংস্থা ল্যাডব্রোকস এবং অডস্পিডিয়া-এর পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প ও সুদানের ইমারজেন্সি রেসপন্স রুমস বর্তমানে যৌথভাবে শীর্ষে রয়েছেন। রুশ বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া তৃতীয় স্থানে আছেন।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি “কমপক্ষে সাতটি যুদ্ধ বন্ধ করেছেন”। তিনি উল্লেখ করেছেন কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড, কসোভো-সার্বিয়া, কঙ্গো-রুয়ান্ডা, পাকিস্তান-ভারত, ইসরায়েল-ইরান, মিসর-ইথিওপিয়া এবং আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাতের অবসান ঘটানোর কথা।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই দাবিগুলোর অনেকগুলিই অতিরঞ্জিত। কিছু সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই অংশ নিয়েছিল, যেমন ইরান ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘর্ষে মার্কিন বাহিনী সরাসরি হামলা চালিয়েছে।

নোবেল পুরস্কারের প্রেক্ষাপট

আলফ্রেড নোবেল ছিলেন ১৯শ’ শতকের সুইডিশ রসায়নবিদ, উদ্ভাবক ও শিল্পপতি। ডিনামাইট আবিষ্কারের মাধ্যমে তিনি বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হন। জীবনের শেষদিকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর সম্পদের একটি বড় অংশ ব্যবহার হবে মানবতার কল্যাণে অবদান রাখা ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করতে।

১৯০১ সালে প্রথমবারের মতো চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য ও শান্তি—এই পাঁচটি বিভাগে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। পরে ১৯৬৮ সালে অর্থনীতিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়ন প্রক্রিয়া

প্রতি বছর নরওয়ের পার্লামেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত পাঁচ সদস্যের নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নির্ধারণ করে। মনোনয়ন পাঠানোর সুযোগ থাকে জানুয়ারির ৩১ তারিখ পর্যন্ত, এবং মনোনীতদের নাম ৫০ বছর পর্যন্ত গোপন রাখা হয়।

যাঁরা মনোনয়ন দিতে পারেন তাদের মধ্যে রয়েছেন: বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্য ও সরকারপ্রধান,আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারপতি,শান্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালক,পূর্ববর্তী নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান, আইন, দর্শন ও ধর্মবিষয়ক অধ্যাপকগণ।