গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হামাস-ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২ বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ইসরায়েল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে রাজি হয়েছে।

এর ফলে এখন বাইরে থেকে গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো যাবে। এছাড়া বন্দি বিনিময় ও গাজা থেকে ধীরে ধীরে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পথও খুললো।

হামাস ও ইসরায়েল- উভয়পক্ষই যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে নিজেদের জয় হিসেবে দাবি করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৎপরতায় এই অগ্রগতির বার্তা আসলো নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার একদিন আগে।

ট্রাম্প এ বছর সম্মানজনক এই পুরস্কার পাওয়ার আশা করছেন। সেজন্য বেশকিছু সংঘাত থামাতে তাকে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে বছর জুড়ে।

গাজায় সত্যিকার অর্থে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে তা হবে ট্রাম্পের জন্য বড় কূটনৈতিক সাফল্য।

মিশরে হামাস ও ইসরায়েলের শান্তি আলোচনায় গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ২ পক্ষেন রাজি হওয়াকে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই ইসরায়েল ও হামাসের গাজা যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে একমত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের সহযোগিতায় এই অগ্রগতি এসেছে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির নতুন সূচনা।”

শান্তি আলোচনায় মধ্যস্ততা করছে কাতার।

যুদ্ধবিরতির চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের সব শর্ত ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় উভয় পক্ষই সম্মতি দিয়েছে।”

এদিকে হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা এমন এক চুক্তিতে পৌঁছেছি যা যুদ্ধের অবসান, গাজা থেকে দখলদার বাহিনীর প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তার প্রবেশ এবং বন্দি বিনিময়ের বিষয় নিশ্চিত করবে।”

এটিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ বিজয়’ হিসেবে দেখছে হামাস।

অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও চুক্তির দিনটিকে ইসরায়েলের জন্য ‘মহান দিন’ হিসেবে দাবি করেছেন।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার তার মন্ত্রিসভা যুদ্ধবিরতি অনুমোদনের জন্য বৈঠক করবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক ও আশা জাগানো সুযোগ’ বলে মন্তব্য করেছেন।

তার ভাষ্য, “এটি দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের একটি বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক পথ খুলতে যাচ্ছে।”

গুতেরেস বলেন, “সমস্ত বন্দিকে সম্মানের সঙ্গে মুক্তি দিতে হবে। স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে হবে এবং গাজায় অবাধ মানবিক সহায়তা পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।”

গাজা যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলার জবাবে গাজায় যুদ্ধ শুরু করে তেল আবিব।

সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, গেল ২ বছরে ইসরায়েলের এই অভিযানে ৬৭ হাজার ১৮৩ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।

আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪১ জন।

এছাড়া গাজায় খাবার সংকটে বহু মানুষ জীবন-সংকটে পড়েছেন। বহু এলাকা এমনভাবে ধ্বংস হয়েছে যে, হাজারো মানুষ এখনও ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে।

এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়েছিল, প্রায় ২০০ জনকে বন্দি করে নিয়ে আসা হয়।

আল জাজিরার ওয়াশিংটন প্রতিনিধি অ্যালান ফিশার জানিয়েছেন, হামাস ও ইসরায়েলের এই দ্বন্দ্ব থামাতে ট্রাম্প সরাসরি কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেন।

তার মতে, বাইডেন প্রশাসন ব্যর্থ হলেও ট্রাম্প কূটনৈতিক কৌশলে সফল হয়েছেন।

গাজা যুদ্ধবিরতির এই প্রথম ধাপ যদি সফল হয়, তবে তা মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফেরাতে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থায়ী সমাধানের জন্য এখনো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।