মহেশখালী দ্বীপ ভ্রমণ: কীভাবে যাবেন, কী দেখবেন, খরচ কেমন?

মুহাম্মদ ফেরদাউস

কক্সবাজারের জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোর একটি- মহেশখালী দ্বীপ। দীপাঞ্চল ভ্রমণ মানেই বিচ্ছিন্ন কোনো ভূখণ্ডে সাগর ও আকাশের দিগন্তরেখায় অর্ধচন্দ্র ডিঙি নৌকার মিলিয়ে যেতে দেখা। যেখানে ঢেউয়ের পিঠে চেপে যাওয়ার মজাই আলাদা।

বঙ্গোপসাগরের লাগোয়া দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ হওয়ার বিশেষত্বটা মহেশখালীকে আলাদা করেছে আর সব উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে। শুধুই কি পাহাড়ের চূড়া থেকে পাখির চোখে দ্বীপ দর্শন! এখানে আছে দেশের অকৃত্রিম সব সৌন্দর্যের উপাদান।

৩৬২ দশমিক ১৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি মহেশখালী, সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা- এই চারটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি উপজেলা।

মহেশখালীর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মিষ্টি পানের সুখ্যাতি। সেই সঙ্গে চিংড়ি, লবণ ও মুক্তা চাষের জন্যও ব্যাপকভাবে পরিচিত।

১৫৫৯ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সৃষ্টি হয় মহেশখালী দ্বীপ।

মহেশখালীর দর্শনীয় স্থান

কিংবদন্তির আদিনাথ মন্দির এখন সাগরবেষ্টিত মহেশখালী দ্বীপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৫ দশমিক ৩ মিটার বা ২৮০ ফুট উঁচুতে মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত মন্দিরটিতে উঠতে হয় ৬৯টি সিঁড়ি বেয়ে। এই উচ্চতা থেকে চারপাশে দ্বীপের প্রায় পুরোটাসহ চোখে পড়ে ম্যানগ্রোভ বন, পানের বরজ ও নীল জলরাশির বিস্তৃর্ণ বঙ্গোপসাগর।

নৌকা বা স্প্রিড বোট থেকে নেমে চলে যাওয়া যায় ওপারের ঝাউবাগান ও চরপাড়া সৈকতে। যাওয়ার সময় ব্রিজের দুই পাশে দেখা মেলে গোলপাতা, সুন্দরী বন, পানের বরজ ও লবণের মাঠ।

মহেশখালীর আরও একটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে এর ডকইয়ার্ডের অদূরে গোরকঘাটায় অবস্থিত রাখাইনপাড়ার বৌদ্ধবিহারটি। এর সীমানার ভেতর রয়েছে তামায় গড়া একই রকম দেখতে দুইটি প্যাগোডা, কয়েকটি ভবন এবং বিশালাকৃতির বেশ কিছু বৌদ্ধমূর্তি।

দ্বীপের ভেতরে দেখার মতো আরও আছে লিডারশীপ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ক্যাম্পাস, উপজেলা পরিষদ দীঘি, গোরকঘাটা জমিদারবাড়ী, চিংড়ি ঘের, লবণ মাঠ, শুঁটকি মহাল এবং মুদির ছড়ার ম্যানগ্রোভ বন।

মহেশখালী যাওয়া উপায় ও খরচ

কক্সবাজার শহরে পৌঁছে বিমানবন্দর রোডের আগে ৬ নম্বর ঘাট জেঠি থেকে ট্রলার বা স্পিডবোটে জনপ্রতি ৫০/৯০ টাকা ভাড়ায় মহেশখালীতে যাওয়া আসা করা যায়।

স্পিডবোটে সময় লাগতে পারে ২০ মিনিট, আর ট্রলারে সময় নেবে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট।

মহেশখালী আসার পর এবার সবকিছু ঘুরে দেখতে জেঠি থেকে অটো কিংবা ইজিবাইক ভাড়া করা যায়। পাহাড়ি দ্বীপটি ৩/৪ ঘন্টায় ঘুরে দেখা সম্ভব, তাই দরদাম করে উঠা ভাল।

সৈকতপ্রেমীরা জীবনে একটিবারের জন্য হলেও যেতে চাইবেন মহেশখালীর সমুদ্র সৈকতে। প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকত।

মহেশখালীর বিখ্যাত মিষ্টি পানের স্বাদ নিতে ও পানের বরজ দেখতে পারেন।

মহেশখালী ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুর্যোগপ্রবণ থাকে এই অঞ্চলটি। তাই এই মাস গুলোকে উপেক্ষা করে সারা বছরই ঘুরতে যাওয়া যায় এই পাহাড়ি দ্বীপে।

তবে মহেশখালী ভ্রমণের সেরা সময় হচ্ছে শীতের শুরু এবং বসন্তের সময়টা। ঠান্ডা রোদ আর শিশির ভেজা বালুকাবেলার সঙ্গে পূর্ণিমা রাত ও ফানুস উৎসব ভ্রমণের আনন্দকে পূর্ণতা দিবে।

তাই চেষ্টা করুন ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে মহেশখালী ভ্রমণ করতে। সাগর শান্ত থাকায় ও গরম না থাকায় এ সময়টায় ভ্রমণ আপনার জন্য উপভোগ্য হতে পারে।

বেশি গরমের সময় এখানে না আসাই ভালো, কারণ মহেশখালীতে কক্সবাজার শহরের চেয়ে গরমের তীব্রতা বেশি অনুভব হয়।

দুপুরের খাবার কক্সবাজার শহরে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কারণ মহেশখালীতে এখনও ভালো রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেনি।