শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অঙ্গনে অভূতপূর্ব ঝড় তুলেছে সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিংহের গ্রেপ্তার।
একসময় যাকে বলা হতো ‘Accidental President’, এখন অনেকে তাকে দেখছেন ‘Accidental Unifier’ বা আকস্মিক ঐক্যসাধক হিসেবে।
কারণ, সরকারের এই পদক্ষেপ শুধু বিক্রমসিংহের জন্য নয়, পুরো শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
ইতোমধ্যে এ ঘটনায় শ্রীলংকার বিরোধী শক্তিগুলো এক সুরে সরকারকে তোপ দাগছে। তারা মনে করছেন, বিরোধীদের প্রতি প্রতিশোধ নিতেই আইনের অপব্যবহার করছে ক্ষমতাসীনরা।
জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে সরকার
শ্রীলংকার বর্তমান সরকার এমনিতেই ধীরে ধীরে জনসমর্থন হারাচ্ছে। মাত্র ৪২ শতাংশ ভোট নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতেছিল শাসকদল এনপিপি, আর সাম্প্রতিক স্থানীয় নির্বাচনে এই জনপ্রিয়তা আরও কমেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাবেক প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তার করা সরকারের জন্য রাজনৈতিকভাবে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিরোধী শক্তিকে দুর্বল করার বদলে সরকার হয়তো তাদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সুযোগ উপহার দিয়ে ফেলেছে।
প্রেসিডেন্ট পদকে ঝুঁকির মুখে ফেলা
এই ঘটনায় সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট পদের মর্যাদা ও নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলা। কারণ, প্রেসিডেন্টের জীবন কখনো ব্যক্তিগত ও সরকারি ভাগে ভাগ করা যায় না। ক্ষমতায় আসার পর তার নিরাপত্তা, চলাফেরা, ভ্রমণ- সবকিছুই রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের অধীনে চলে যায়।
প্রেসিডেন্টের সিকিউরিটি ডিভিশন কোনোভাবেই তাকে ‘ব্যক্তিগত’ অনুষ্ঠানে একা ছেড়ে যেতে পারে না। তাদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক এবং ব্যয়ও স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রীয় খরচেই হয়।
তাহলে যদি অভিযোগ ওঠে যে, বিক্রমসিংহ ‘ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে’ গিয়েও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবহার করেছেন, তবে এর দায় নিতে হবে প্রত্যেক সাবেক, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের প্রেসিডেন্টকেই। এতে প্রেসিডেন্টের পদ মূলত একটি রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত হবে, যা যেকোন সময় প্রতিশোধমূলক অভিযানের শিকার হতে পারে।
রাজনৈতিক প্রতিশোধ নাকি আইনের শাসন?
এ গ্রেপ্তার শুধু একজন নেতার ব্যক্তিগত বিষয় নয়, বরং এটি এখন শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক গতিপথের একটি বড় পরিবর্তন নির্দেশ করছে। এর মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে আইনের শাসনের ভঙ্গুরতা, বাছাই করে বিচার করার বিপদ এবং রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির ঝুঁকি।
এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা বিক্রমসিংহ নতুনভাবে আলোচনায় উঠে এসেছেন, এমনকি তিনি এখন ভাঙা বিরোধী শক্তিকে এক করার সম্ভাবনাও তৈরি করেছেন।
ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ দৃষ্টান্ত
এ ঘটনায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট পদের মর্যাদার। এখন বিক্রমসিংহকে যেভাবে টেনে নামানো হয়েছে, ভবিষ্যতে অন্য যে কোনো প্রেসিডেন্টও একই ভাগ্য বরণ করতে পারেন। এর ফলে সর্বোচ্চ পদটি হয়ে পড়ছে প্রতিশোধমূলক রাজনীতির সহজ শিকার।
রনিল বিক্রমসিংহকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে দেশটির একজন প্রবীণ সাংবাদিকের ভাস্য, “আইন যদি সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর না হয়, তবে তা ক্ষমতাবানদের খেলনায় পরিণত হয়।
“শ্রীলঙ্কার সরকার বিক্রমসিংহকে গ্রেপ্তার করে আসলে নিজের জন্যই নতুন ঝুঁকি তৈরি করেছে। কারণ এটি শুধু একজন রাজনীতিবিদের ভাগ্যের সঙ্গে নয়, পুরো প্রজাতন্ত্রের সততা এবং ভবিষ্যতের সঙ্গেও জড়িয়ে গেছে।”
