ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে কোন কোন দেশ?

রাষ্ট্র হিসেবে প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দেয়ার পক্ষে বিশ্ব জুড়ে ব্যাপক জনমত তৈরি হয়েছে। বর্তমানে বেশকিছু শক্তিধর দেশ পাশে দাঁড়ানোয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবি আরও জোরালো হয়েছে।

এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৪৫টিরও বেশি দেশ এই স্বীকৃতির পক্ষে দাঁড়িয়েছে।

১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর আলজিয়ার্সে প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল কাউন্সিল স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার পরপরই বেশিরভাগ দেশ প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দেয়। পরবর্তী তিন দশকে এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার অধিকাংশ দেশ এ সিদ্ধান্তে যোগ দেয়।

প্রথম দিকের স্বীকৃতিদাতাদের মধ্যে ছিল ভারত, চীন, রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন), দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, তুরস্ক ও মিশর।

তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স ও জাপানের মতো পশ্চিমা মিত্ররা দীর্ঘদিন ধরে এই পদক্ষেপ থেকে বিরত থেকেছে।

২০২৪ সালের বসন্তে ইউরোপ ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের আরও কয়েকটি দেশ প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়- যার মধ্যে ছিল বার্বাডোস, আয়ারল্যান্ড, জ্যামাইকা, নরওয়ে ও স্পেন।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ফ্রান্স ঘোষণা দিয়েছে যে তারা আসন্ন সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য বলেছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলে তারাও স্বীকৃতি দেবে।

এতে যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের মধ্যেও একা হয়ে পড়ছে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব স্বীকৃতিকে “হামাসের জন্য পুরস্কার” বলে অভিহিত করেছে।

সাম্প্রতিক পরিবর্তন

২০২৪ সালের বসন্তে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের মধ্যে আন্তর্জাতিক সমালোচনা বেড়ে যায়।

মে ২০২৪: আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও স্পেন একসঙ্গে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি ঘোষণা করে।

জুন ২০২৪: বার্বাডোস ও জ্যামাইকা স্বীকৃতি দেয়।

জুলাই ২০২৫: অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ফ্রান্স ঘোষণা দেয় যে তারা ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে।

আগস্ট ২০২৫: লুক্সেমবার্গ, স্লোভেনিয়া ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের আরও কয়েকটি ছোট দ্বীপরাষ্ট্র এই তালিকায় যুক্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।

যেসব দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে

এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য (৩৫+ দেশ)

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেই।

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন।

ইরান, ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন, ইয়েমেন ও তুরস্কের মতো এশিয়ার দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

আফ্রিকা (৫০+ দেশ)

দক্ষিণ আফ্রিকা, মিশর, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া, ঘানা, উগান্ডা।

প্রায় সব সাব-সাহারান আফ্রিকান দেশ।

লাতিন আমেরিকা (২৫+ দেশ)

ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলি, পেরু, বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলা, কিউবা, নিকারাগুয়া।

মধ্য আমেরিকার প্রায় সব দেশ।

ইউরোপ (১০+ দেশ)

নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন (২০১৪)।

সাইপ্রাস, মাল্টা, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র (১৯৮৮–৮৯ সালে)।

ওশেনিয়া ও ক্যারিবীয় (২০+ দেশ)

পাপুয়া নিউগিনি, ফিজি, ভানুয়াতু।

বার্বাডোস, জ্যামাইকা, ট্রিনিদাদ ও টোবাগো, গায়ানা।

গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত

১৯৮৮ – প্যালেস্টাইন স্বাধীনতা ঘোষণা; এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অধিকাংশ দেশ তাৎক্ষণিক স্বীকৃতি দেয়।

২০১২ – জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্যালেস্টাইনকে “অবজারভার রাষ্ট্র” মর্যাদা দেওয়া হয়।

২০১৪ – সুইডেন প্রথম বড় পশ্চিমা দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়।

২০২৪–২৫ – ইউরোপ, ক্যারিবীয় ও ওশেনিয়ার একাধিক দেশ নতুন করে স্বীকৃতি দেয়, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের জন্য কূটনৈতিক চাপে রূপ নেয়।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েল এসব স্বীকৃতিকে “হামাসের জন্য পুরস্কার” আখ্যা দিয়েছে এবং অভিযোগ করেছে যে এটি যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা দুর্বল করবে।

যুক্তরাষ্ট্র এখনও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি। দেশটির যুক্তি- সরাসরি শান্তি আলোচনার মাধ্যমেই প্যালেস্টাইনের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিশ্চিত হওয়া উচিত।

অন্যদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেছেন, “প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক শান্তি ও ন্যায়বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।”

ভবিষ্যত সম্ভাবনা

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ অধিবেশনে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ফ্রান্স আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলে পশ্চিমা ব্লকের ভেতরেও ফাটল স্পষ্ট হবে।

এতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কূটনৈতিক চাপ আরও বাড়বে এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধান নিয়ে নতুন করে আলোচনার সুযোগ তৈরি হতে পারে।