বোয়িং ছেড়ে বিশ্ব এয়ারবাসে ঝুঁকছে কেন?

রিয়াজ ইসলাম

বাংলাদেশ এমন সময়ে ২৫টি বোয়িং বিমান কিনতে যাচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিটি বিশ্বজুড়ে বাজার হারাচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে শুল্ক আলোচনার অংশ হিসেবে বোয়িং কোম্পানির বিমানের ক্রয়াদেশ দিয়েছে ঢাকা।

প্রয়োজন বিবেচনা না করে এমন পদক্ষেপ গ্রহণের সমালোচনা করছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা।

বড় বাজেটের এই কেনাকাটা দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ মেয়াদে উড়োজাহাজ বিক্রি করতে ঢাকায় প্রতিযোগিতায় নেমেছিল বিশ্বের সেরা ২ কোম্পানি বোয়িং ও এয়ারবাস।

শেষ পর্যন্ত বোয়িংকে এড়িয়ে ঢাকার সবুজ সংকেত ছিল ফ্রান্স থেকে এয়ারবাসের ১০টি উড়োজাহাজ কেনার দিকে।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর দেশটিতে বিমান বিক্রির দৌড় থেকে কার্যত ছিটকে গেছে এয়ারবাস।

বোয়িং না এয়ারবাস- বিশ্বে কে এগিয়ে?

বহু বছর ধরে আকাশপথে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং।

কিন্তু যত সময় যাচ্ছে বোয়িং ততই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। বিপরীতে দ্রুত বাজার সম্প্রসারণ করছে এয়ারবাস।

বোয়িংয়ের পিছিয়ে পড়ার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে আসছে এর নিরাপত্তা ঝুঁকি।

সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বেশ কিছু বিমান মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হওয়ায় বোয়িংয়ের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন ওঠছে।

বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের বিমানগুলো সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ায় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এরই মধ্যে ভারতের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমান বিধ্বস্তে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

এটি বোয়িংয়ের ৭৮৭ ড্রিমলাইনার মডেলের প্রথম প্রাণঘাতি দুর্ঘটনা।

এই মডেলটিকে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ বিমানগুলোর মধ্যে একটি মনে করা হতো, আহমেদাবাদের দুর্ঘটনার পর এটির নিরাপত্তাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও বেশকিছু দুর্ঘটনার পর বোয়িং নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অনেক যাত্রী এখন বোয়িং বিমানে ভ্রমণ করতে দ্বিধাবোধ করেছেন। তারা বেছে নিচ্ছেন এয়ারবাসসহ অন্যান্য বিমান।

সাম্প্রতিক বেশ কিছু দুর্ঘটনা বাজার মূল্য ও চুক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলায় গুরুতর সংকটে পড়েছে বোয়িং।

বিশেষ করে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ও ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের সাথে জড়িত ঘটনাগুলো বোয়িংয়ের শেয়ারের দামে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।

বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্সের কারণে ২০২৩ সালে বোয়িংয়ের বাজার মূলধন ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমেছিল।

সেখানে চলতি বছর নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন সমস্যায় বোয়িংয়ের বাজার মূলধন কমে গেছে ৩৯.৪৩ শতাংশ।

বোয়িংয়ের চলমান সংকটের কারণে কিছু এয়ারলাইন্স তাদের অর্ডার বাতিল বা স্থগিত করেছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে নতুন চুক্তির শর্তও পরিবর্তন হয়েছে।

বোয়িংয়ের এই সংকটের সুযোগ নিয়ে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ারবাস বাজারে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।

অনেক এয়ারলাইন্স এখন বোয়িংয়ের পরিবর্তে এয়ারবাসের বিমান কেনার কথা ভাবছে বা চুক্তি করছে।

২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে এয়ারবাসের বাণিজ্যিক বিমানের নেট অর্ডার বছরে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০৪ ইউনিটে পৌঁছেছে।

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত এয়ারবাসের বাণিজ্যিক বিমানের অর্ডার ছিল ৮ হাজার ৬৫৪টি।

অন্যদিকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিতর্ক ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার দুর্বলতায় বাজার হারাতে থাকা বোয়িংয়ের আর্থিক স্থিতিশীলতাও ঝুঁকিতে পড়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক চাপ এড়াতে বাংলাদেশের মত কিছু দেশ বোয়িংয়ে আগ্রহ দেখালেও কোম্পানিটির জন্য তা কতটা ইতিবাচক হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।