সাহু সিজদা: নামাজে ভুল হলে করণীয়

ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক

ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতগুলোর একটি নামাজ।

ধর্মে সকল মুসলমানের জন্য দিনে ৫ বার নামাজ আদায়কে অবশ্যই পালনীয় বা ফরজ কাজ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

সে হিসেবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নিয়মিত নামাজ আদায় করে থাকেন। অনিয়মিতভাবেও অসংখ্য মুসলিম নামাজ পড়ে থাকেন।

নামাজ আদায় করতে গিয়ে কখনো কখনো ভুল করে ফেলার ঘটনাও ঘটে। অনেকক্ষেত্রে নামাজ আদায় নিয়ে সন্দেহও থাকে।

এসব ক্ষেত্রে করণীয় না জানার কারণে অনেকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন।

তবে ইসলামে নামাজে ভুল হলে বা সন্দেহ তৈরি হলে করণীয় সম্পর্কে স্পষ্ট বিধান রয়েছে। সেটি হচ্ছে- সাহু সিজদা।

মনে রাখতে হবে- কোন সুন্নত ছুটে গেলে নামাজের ক্ষতি হয়, সাহু সিজদাও দিতে হয় না।

সাহু সিজদা কি?

সাহু সিজদা হচ্ছে নামাজের কোন ওয়াজিব কাজ আদায়ে ভুল হলে বা সন্দেহ দেখা দিলে অতিরিক্ত ২টি সিজদা দেয়া। অর্থাৎ নামাজে ভুলের কারণে যে সিজদা দিতে হয়, তাই হলো সাহু সিজদা।

নামাজে কোন ধরণের ভুল হলে কি করতে হবে- তা নীচে বর্ণনা করা হলো।

নামাজে তাশাহুদ বা আত্তাহিয়াতু পড়তে ভুলে গেলে

নামাজে প্রথম বৈঠকে বসতে বা তাশাহুদ পড়তে ভুলে যান অনেকে। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিধান আছে।

১. প্রথম বৈঠকে না বসে উঠে যাওয়ার মুখে- অর্থাৎ অর্ধেক দাঁড়ানোর আগেই মনে পড়লে বসে যেতে হবে।

বসে তাশাহুদ বা আত্তাহিয়াতু পড়ে নিতে হবে। এটি কোন ভুল নয়, এজন্য অন্য কিছু করারও প্রয়োজন নেই।

২. আত্তাহিয়াতু না পড়ে অর্ধেকের বেশি ওঠে গেছেন, কিন্তু পুরোপুরি দাঁড়াননি- এমন অবস্থায়ও মনে পড়লে বসে যেতে হবে।

বসে আত্তাহিয়াতু পড়তে হবে। তবে এটিকে ভুল হিসেবেই বিবেচনা করা হয় এবং এর জন্য সাহু সিজদা দিতে হবে।

৩. আত্তাহিয়াতু না পড়ে পুরোপুরি দাঁড়িয়ে গেলে, মনে পড়লেও আর বসতে হবে না।

এই ভুলের জন্য সাহু সিজদা আদায় করতে হবে।

নামাজে রাকাত নিয়ে সন্দেহ হলে

অনেক সময় নামাজী ভুলে যান যে তিনি কত রাকাত নামাজ পড়েছেন।

এ ধরণের ভুল বা সন্দেহের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নির্ভর করে মনের ওপর।

১. যদি নামাজের এক পর্যায়ে এসে কয় রাকাত পড়েছেন, তা নিয়ে সন্দেহ হয়- তাহলে যেদিকে ধারণা বেশি থাকে সে অনুযায়ী নামাজ পড়ে সাহু সিজদা দিতে হবে।

ধরেন- ৩ রাকাত শেষ করেছেন না ২ রাকাত শেষ করেছেন, এমন সন্দেহ হতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি ৩ রাকাত শেষ করেছেন বলে বেশি মনে হয়, তাহলে ৩ রাকাত পড়া হয়েছে ধরেই বাকি নামাজ আদায় করে সাহু সিজদা দিবেন।

যদি ২ রাকাত শেষ হয়েছে বলে বেশি মনে হয়, তাহলে ২ রাকাত ধরেই বাকি নামাজ আদায় করে সাহু সিজদা দিবেন।

অর্থাৎ সন্দেহজনক ক্ষেত্রে ধারণা যেদিকে বেশি যায়, তা সঠিক ধরেই এগুতে হবে।

২. যদি ধারণা কোনদিকেই প্রবল না হয়, তাহলে কম রাকাত শেষ হয়েছে ধরে বাকি নামাজ আদায় করে সাহু সিজদা দিতে হবে।

অর্থাৎ, যদি ২ রাকাত পড়েছেন না ৩ রাকাত পড়েছেন- তা মনে করতে না পারেন এবং আপনার ধারণাও কোন দিকে বেশি মনে না হয়- তাহলে ২ রাকাত পড়েছেন ধরেই এগুতে হবে।

নামাজে কোনকিছু বেশি আদায় হলে

নামাজে ভুলে কিছু বিষয় বেশি আদায় হয়ে যেতে পারে। যেমন- ৪ রাকাতের পরিবর্তে ৫ রাকাত পড়ে ফেলতে পারেন।

২ সিজদার পরিবর্তে ৩ সিজদা দিয়ে ফেলতে পারেন। আত্তাহিয়াতু পড়তে বেশিবার বৈঠকে বসে যেতে পারেন।

এসব ক্ষেত্রেও সাহু সিজদা দিয়ে নামাজ সংশোধন করে নিতে হবে।

নামাজে কোনকিছু বাদ পড়লে বা কম আদায় হলে

নামাজে ভুলে কোনকিছু বাদ পড়তে পারে। অর্থাৎ কম আদায় হতে পারে।

সেক্ষেত্রেও সাহু সিজদা দিতে হবে।

যেমন- কেউ ভুলে ১-২ রাকাত রেখেই নামাজ শেষ করে ফেলার পর মনে পড়লে বাকি নামাজ আদায় করে সাহু সিজদা দিবে।

আবার কোন রাকাতের কোন রুকন বাদ পড়লে, আর নামাজের মধ্যে তা মনে পড়লে- ঐ রাকাতটি আবার আদায় করবে।

যেমন- দ্বিতীয় রাকাতে এসে যদি মনে হয় যে, প্রথম রাকাতে সিজদা দেয়া হয়নি- তখন দ্বিতীয় রাকাতকেই প্রথম রাকাত ধরে বাকি নামাজ শেষ করতে হবে।

এরপর সাহু সিজদা দিতে হবে।

সতর্ক থাকতে হবে যে- নামাজের কোন রুকন ছুটে গেলে নামাজই হবে না।

সাহু সিজদার নিয়ম

সাহু সিজদা আদায় নিয় ২ ধরণের নিয়ম আছে।

একটি হলো- সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা আদায় করা।

নামাজে ভুল বা সন্দেহ হলে শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়ে ডান দিকে সালাম ফিরাতে হবে।

এরপর আল্লাহু আকবর বলে ২ বার সিজদা দিতে হবে। সিজদা শেষে আবার বৈঠকে বসতে হবে।

বসে সাধারণ নিয়মের মতোই আত্তাহিয়াতু, দুরুদ, দোয়া মাছুরা পড়ে ২ দিকে সালাম ফিরাতে হবে।

অন্য নিয়মটি হলো- সালাম ফিরানোর আগেই ২টি অতিরিক্ত সিজদা দিয়ে সাহু সিজদা আদায় করে নেয়া। এরপর উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।