শীঘ্রই সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করলে অবশ্যই ৫টি খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা উচিত। সঠিক খাদ্যাভ্যাস আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।
গর্ভধারণের প্রস্তুতির জন্য তার আগের পুষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি আপনি আপনার পরিবারে নতুন সদস্য যোগ করার পরিকল্পনা করেন, তাহলে এখনই আপনার খাদ্যাভ্যাসের উপর মনোযোগ দেওয়ার সময়।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস বিভিন্ন ধরণের জটিলতা কমিয়ে সহজে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
যাদের স্বাস্থ্যগত জটিলতা রয়েছে, আগে থেকেই সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে সেটি শিশুর স্বাস্থ্যের উপরও ইতিবাচক প্রভাব রাখে। তাই গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার তিন মাস থেকে এক বছর আগে থেকেই সঠিক খাদ্যাভ্যাস নির্দেশিকা অনুসরণ করে আপনার স্বাস্থ্যগত পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস আপনার শরীরকে সন্তান ধারণের জন্য প্রস্তুত করে এবং ভ্রূণের সর্বোত্তম বিকাশ নিশ্চিতে সহায়তা করে।
নীচে গর্ভধারণের আগেই অনুসরণ করা উচিত, এমন ৫টি খাদ্যাভাস দেয়া হল।
১. সঠিক খাবারে স্বাস্থ্যকর ওজন
গর্ভাবস্থার আগে আপনার শরীরের ওজন সরাসরি আপনার শিশুর জন্মগত ওজনকে প্রভাবিত করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, কম ওজনের নারীদের ছোট বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এছাড়া স্বাস্থ্যকর ওজনের নারীদের সহজেই গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। বিপরীতে, কম ওজনের বা অতিরিক্ত ওজনের নারীদের গর্ভধারণ করতে সমস্যা হতে পারে।
তাই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে প্রয়োজন অনুযায়ী ওজন কমান বা বাড়ান। যা যৌন হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে এনে আপনাকে গর্ভধারণে সহায়তা করতে পারে।
মনে রাখবেন- অতিরিক্ত ওজনের গর্ভবতী নারীদের গর্ভাবস্থার জটিলতা যেমন গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, জরুরি সিজারিয়ান প্রক্রিয়া, গর্ভপাত, রক্ত জমাট বাঁধা, প্রি-এক্লাম্পসিয়া এবং মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে।
এ ধরণের মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুর ভ্রূণের মৃত্যু, মৃতপ্রসব, জন্মগত অস্বাভাবিকতা এবং পরবর্তীকালে স্থূলতার ঝুঁকিও বেশি থাকে।
তাই গর্ভধারণের আগেই সঠিক ডায়েট মেনে স্বাস্থ্যকর ওজন নিশ্চিত করুন। কারণ গর্ভাবস্থায় সাধারণত ক্যালোরি সীমিত করার পরামর্শ দেওয়া হয় না। তাতে অপর্যাপ্ত শক্তি এবং পুষ্টি গ্রহণ ভ্রূণের বিকাশ এবং স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
২. খাদ্যতালিকায় ফলিক অ্যাসিড রাখুন
গর্ভধারণের পর প্রথম ২৮ দিনে যখন ভ্রূণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেরুদণ্ড এবং নিউরাল টিউবের বিকাশ ঘটে- তখন ফলিক অ্যাসিড সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়। দুর্ভাগ্যবশত, অনেক নারী ২৮ দিনের আগে বুঝতেই পারেন না যে তারা গর্ভবতী।
অতএব, প্রজনন বয়সের নারীদের গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহের আগে এবং তার মধ্যে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম (০.৪ মিলিগ্রাম) ফলিক অ্যাসিড বা ফোলেট গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃত্বকালীন ফোলেটের মাত্রা কম থাকলে শিশুর নিউরাল টিউব ত্রুটি (এনটিডি) হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এর ফলে বিভিন্ন মাত্রার পক্ষাঘাত, অসংযম এবং কখনও কখনও বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।
সেজন্য গর্ভধারণের আগে থেকেই গাঢ় সবুজ শাকসবজি, লেবু জাতীয় ফল, বিটরুট, বাদাম, ডাল ও বীজজাতীয় খাবার, গমের রুটি, ওটসের মতো খাবার গ্রহণে গুরুত্ব দেয়া উচিত।
৩. নিয়মিত আয়রন খান
গর্ভবতী হওয়ার আগে আপনার শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকতে পারে, তাতে আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
যদি এই অবস্থায় গর্ভবতী হন, তাহলে শিশুর জন্মের সময় কম ওজনের এবং জীবনের প্রথম কয়েক মাস আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
অতএব, গর্ভাবস্থায় প্রবেশকারী নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে আয়রন গ্রহণকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি কমাতে পারে।
মাংস, ডিম, মটরশুটি, কুমড়োর বীজ, বাদাম, গাঢ় সবুজ শাকসবজি আয়রন পাওয়া যেতে পারে।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার সাথে সাথে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে আপনার শরীর তা ভালোভাবে শোষণ করতে পারবে। তাই, আয়রনযুক্ত খাবারের সাথে লেবু, কমলা, মাল্টার মত খাবার গ্রহণ করুন।
বিপরীতে, আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সাথে চা বা কফি পান না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। চা এবং কফিতে ট্যানিন নামক রাসায়নিক যৌগ থাকে, যা আয়রন শোষণে বাধা দেয়।
৪. ক্যাফেইন গ্রহণ কমান
অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ গর্ভধারণকে প্রভাবিত করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ২৫০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করলে প্রজনন ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে। ক্যাফেইন শরীরের আয়রন এবং ক্যালসিয়াম শোষণের ক্ষমতাকেও বাধাগ্রস্ত করে।
কফি, চা, কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস, চকোলেটে ক্যাফেইন থাকে।
গড়ে, এক কাপ কফিতে ১০০-১৪০ মিলিগ্রাম, চায়ে ৭৫ মিলিগ্রাম, কোমল পানীয়তে ৪০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকতে পারে। এছাড়া ৫০ গ্রাম চকলেটে ক্যাফেইনের পরিমাণ ১৫ মিলিগ্রাম হতে পারে।
৫. সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন
হার্ভার্ডের ২০০৭ সালের এক গবেষণা অনুসারে, যেসব নারী ‘ফার্টিলিটি ডায়েট’ নিবিড়ভাবে অনুসরণ করেছিলেন, তাদের অন্যদের তুলনায় বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি ৬৬% কমে গিয়েছিল।
সামগ্রিকভাবে, গর্ভধারণের আগে সুষম খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়। এর অর্থ হল আপনি দিনে এমন সব খাবার গ্রহণ করবেন- যাতে প্রচুর বৈচিত্র্য থাকবে।
শাকসবজি, ফল, মাছ-মাংস, ডিম, ডাল, দুধের মত খাবার পরিমাণ অনুযায়ী খান। চর্বিযুক্ত, চিনিযুক্ত খাবার এবং অন্যান্য পানীয় সীমিত পরিমাণে খান।
মনে রাখবেন- সুস্থ থাকতে সব সময়ই সুষম খাবার গ্রহণ করা উচিত। গর্ভধারণের আগে এটি আরও জরুরি। তাতে আপনার শরীর অনাগত শিশুর বিকাশে সব ধরণের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত হয়ে ওঠার উপাদান পায়।