ইরানে জীবন-মৃত্যুর শঙ্কায় বাংলাদেশের জাফর

বিশেষ প্রতিনিধি

যুদ্ধের আঁচ পেয়ে বাংলাদেশে ফেরার টিকিট নিশ্চিত করেছিলেন হবিগঞ্জের জাফর মিয়া, ইসরায়েলের হামলায় তার তেহরান ছাড়ার পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।

ইরানে এখন বোমার শব্দ আর বিস্ফোরণের আগুন দেখে নির্ঘুম রাত কাটছে বাংলাদেশি এই শ্রমিকের।

মঙ্গলবার রাতে জাফর যখন বাংলা ইনসাইট টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন তার কন্ঠে ধরা পড়ছিল জীবন নিয়ে তীব্র অনিশ্চয়তার শঙ্কা।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশের প্রবাসীদের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও ইরানে এই সংখ্যা খুবই কম।

পশ্চিমা দেশগুলোর নানা রকম চাপের মধ্যে থাকা দেশটিতে ২ হাজারের মতো বাংলাদেশি থাকেন।

যারা মূলত কাজ ও পড়ালেখার জন্য বাংলাদেশ ছেড়েছেন। এছাড়াও শিয়া ধর্ম বিশ্বাসের কিছু অনুসারীর যাতায়াত রয়েছে ইরানে।

বাংলাদেশের হবিগঞ্জের নবিগঞ্জের বাসিন্দা জাফর মিয়া ৩ বছর আগে দেশ ছাড়েন।

ইরানের আর্দাবিল প্রদেশের বাকারাবাদের একটি পলিথিন কারখানায় কাজ করেন তিনি।

জাফর মিয়া বাংলা ইনসাইট টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ইসরায়েল যে ইরানে বড়সড় হামলা চালাতে যাচ্ছে, সেটি তারা আগে থেকেই বুঝতে পারছিলেন।

সেজন্য বিপদ এড়াতে গেল শুক্রবার তেহরান ছাড়ার বিমান ধরার কথা ছিল তার।

“শুক্রবার দুপুরে আমার ফ্লাইট ছিল, আর বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েল হামলা করলো। এখন তো কিছু করার নেই, আমার জীবন ঝুঁকিতে পড়ে গেল”, উদ্বেগ শোনা গেল জাফরের কন্ঠে।

ইরানে যেভাবে দিন কাটছে

যুদ্ধ যেভাবে দিন-রাতকে ভেঙে একাকার করে ফেলে, ইরানে এখন সে পরিস্থিতিই চলছে। অন্য অনেক ইরানির মতই বাস্তবতা মেনে নিতে হচ্ছে বাংলাদেশের প্রবাসীদের।

ইরানের সামরিক স্থাপনা, তেল-গ্যাস ক্ষেত্র, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বাসাবাড়িতে এসে পড়ছে ইসরায়েলের বোমা। প্রতিদিনই মৃত্যুর তালিকা লম্বা হচ্ছে দেশটিতে।

জাফর মিয়া জানান, ইরানে আক্রমণ শুরুর পর থেকে নিয়মিতই তার এলাকায় বোমা পড়ছে।

“আমার কারখানার পিছনেই প্রতিদিন হামলা হচ্ছে। চোখের সামনে আগুন আর ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখে দিন কাটছে।”

এই বাংলাদেশি বলছেন, ইসরায়েল যেভাবে আক্রমণ করছে, তাতে ইরানে এখন কেউ নিজেকে নিরাপদ মনে করছেন না। ভয়-আতংকের সঙ্গে লড়াই করা ছাড়া তাদের আর কিছুই করার নেই।

আর প্রবাসীরা যতটা সম্ভব স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার শেষ চেষ্টা করছেন। তবে দিনের বেশিরভাগ সময়ই ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।

এই সাক্ষাৎকার দেয়ার সময়ও জাফর মিয়াকে কয়েকবার ইন্টারনেট সেবার বাইরে চলে যেতে হয়েছে।

জাফর মিয়ার ভাষ্য, “নেটওয়ার্ক আসলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলি। তারা খুব টেনশনে আছে। বলা তো যায় না, কখন কি হয়ে বসে।”

বাংলাদেশ সরকার ও তেহরান দূতাবাস কি করছে?

যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই ভারত-পাকিস্তানের মত দেশগুলো নিজেদের নাগরিকদের ইরান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে। এখনো পর্যন্ত এ ধরণের কোন তৎপরতা শুরু করেনি ঢাকা।

জাফর মিয়া দাবি করেছেন, অন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের মত তিনিও তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেছিলেন।

তাদের চাওয়া ছিল, সরকারি উদ্যােগে জরুরিভাবে বাংলাদেশিদের যেন ঢাকা বা অন্য কোন নিরাপদ গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

“তারা (দূতাবাস) বলে সরকার থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখন কেবল আল্লাহ আমাদের রক্ষা করতে পারেন”, বলেন জাফর মিয়া।

এ বিষয়ে তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের বক্তব্য জানতে পারেনি বাংলা ইনসাইট টোয়েন্টিফোর ডটকম।

তবে ঢাকায় বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আমিন সিদ্দিকী দাবি করেছেন, ইরান থেকে ১০০ জনকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে দেশটির সরকার।

“যারা ফিরতে চায় তাদের ও আমাদের কর্মকর্তাদের ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।”