বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। তাদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা দেশটির লাখ লাখ পরিবারে স্বচ্ছলতা এনেছে।
বৈদেশিক কর্মসংস্থানের শুরু থেকে দীর্ঘ বছর এই খাতকে শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য ভাবা হত। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে।
এখন বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকে নারী শ্রমিক নিচ্ছে। ফলে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও চাকরি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার হার বাড়ছে।
বাংলাদেশ থেকে ২০টির বেশি দেশ বর্তমানে নারী শ্রমিক নিচ্ছে। তবে এখনো কয়েকটি দেশেই নারীদের শ্রমবাজার সীমাবদ্ধ রয়েছে।
২০টির বেশি দেশে নারীরা কাজ করতে গেলেও, নিয়মিতভাবে ১৫টির মত দেশে নারী শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছে।
এর মধ্যে সিংহভাগ দেশই হাতেগোনা কিছু নারী শ্রমিক নিচ্ছে।
মূলত নারী শ্রমিকরা ভাল পরিমাণে চাকরি পাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। আর সবচেয়ে বেশি নারী কাজ পাচ্ছে সৌদি আরবে।
যেসব দেশ নারী শ্রমিক বেশি নিচ্ছে
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কাজ করতে যেতে চান, এমন নারীর সংখ্যা খুবই কম।
আর এই নারীরা মূলত যেতে চান হাতেগোনা কয়েকটি দেশে।
এই বাস্তবতায় ২ থেকে ৩টি দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নারী শ্রমিক যাচ্ছেন। বাকি দেশগুলোতে নামে মাত্র সংখ্যায় নারীরা যাচ্ছেন কাজ করতে।
বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, দেশটির ৭২ শতাংশ নারী শ্রমিকই যাচ্ছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের পর সবচেয়ে বেশি নারী শ্রমিক যাচ্ছে জর্ডানে।
বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের প্রায় ২০ শতাংশের গন্তব্য হচ্ছে জর্ডান।
এর বাইরে কাতারে প্রায় ৫ শতাংশ ও কুয়েতে প্রায় ১ শতাংশ নারী শ্রমিক কাজ করতে যাচ্ছেন।
মধ্যপ্রাচের বাইরে বেশি নারী শ্রমিক যাচ্ছে যুক্তরাজ্যে, দেশটিতেও প্রায় ১ শতাংশ নারী শ্রমিক যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে।
কি পরিমাণ নারী শ্রমিক বিদেশ যাচ্ছে?
পুরুষদের তুলনায় বিদেশগামী নারী শ্রমিকের সংখ্যা খুবই কম। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে ৫ হাজারের মত নারী শ্রমিক বিদেশ যাচ্ছেন।
নারী শ্রমিকদের জন্য সতর্কতা
নারী শ্রমিকরা নানা সময়ে বিদেশে প্রতারণা, যৌন হয়রানি ও শারিরীক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
যারা এসব সহ্য করতে পারেন না, তাদের অনেকে খালি হাতে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।
তাই শ্রম বাজার সংশ্লিষ্টরা, বিদেশ যাওয়ার আগে নারীদের কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।
এ খাতে এক যুগ ধরে কাজ আসা ঢাকার ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেনের পরামর্শ, কি ধরণের কাজের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সেটি আগে নারীদের স্পষ্টভাবে জানা উচিত।
“অনেকে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে এমন কাজ দেখেন, যা দেখে তিনি ভেঙে পড়েন। কিন্তু দেখা যায় তাকে এই কাজের জন্যই নেয়া হয়েছে, অথচ তিনি জানেন না।”
সোহরাব হোসেন বলছেন, বেতনের পাশাপাশি নারীদের কাজের পরিবেশ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে বিদেশ যাওয়া উচিত।
“অফার পেলেই রাজি হওয়া, বেতন দেখেই চলে যাওয়া- এগুলো ঠিক না। যেখানে যাবেন, সেখানের পরিবেশে টিকতে পারবেন কিনা তা আগে জানতে হবে। যিনি নিচ্ছেন, তিনি দালাল কিনা তাও আগে নিশ্চিত হওয়া উচিত।”
তার আশা, দক্ষ নারী শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে পারলে বৈদেশিক শ্রম বাজার নিয়ে নেতিবাচক ধারণাগুলো দূর হয়ে যাবে।