যুক্তরাষ্ট্রের নাম শুনলেই একটা বিলাসী কল্প রাজ্য আমাদের চোখের সামনে ভেসে আসে। বড় বড় বাড়ি থাকবে, রাস্তা ভর্তি গাড়ি চলবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ।
বাস্তব চিত্রটাও এমনই। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গাড়ি চলে যেসব দেশে তার একটি যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি নানা ধরণের গাড়ি তৈরি করে থাকে।
কিন্তু সেই যুক্তরাষ্ট্রেই এমন জায়গা আছে, যেখানে গাড়ি চলাচলই নিষিদ্ধ!
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানকে বলা হয় ‘বিশ্বের গাড়ির রাজধানী’। কারণ এখানেই বিশ্বের বড় বড় গাড়ির কোম্পানির আতুরঘর। আর এই মিশিগানের উপকূলেই এক দ্বীপ- যার নাম ম্যাকিন্যাক দ্বীপ।
এই দ্বীপে কোন গাড়ি চলাচল করে না। মানে স্থানীয়রা গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ রেখেছেন। এই দ্বীপের রাজা হলো ঘোড়া। ঘোড়ার গাড়ি করেই চলছে এখানকার জীবন।
গাড়িমুক্ত শান্ত এই দ্বীপটিতে বসবাস করেন ৬০০ মানুষ। তাদের প্রত্যেকের জন্য একটি করে ঘোড়া রয়েছে। তাদের জীবনযাত্রা দেখলে আপনার বহু পুরনো দিনের পৃথিবীর কথা মনে পড়বে।
৩.৮ বর্গ কিলোমিটারের ম্যাকিন্যাক যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সুন্দর দ্বীপ। ছোট এই দ্বীপটিতে ৬০০ বছর ধরে মানুষ বসবাস করে। গাড়ি আবিস্কারের পর থেকেই এখানে এই বাহনটি নিষিদ্ধ। এটিই যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র সড়ক যেখানে গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ।
আপনি দ্বীপটিতে গেলে কোন হর্নের আওয়াজ পাবেন না। হঠাৎ কোন আওয়াজে চমকে গেলে দেখবেন- আশেপাশে হয়তো কোন হাস বা অন্য পাখি আছে।
দ্বীপে গাড়ি নেই কেন?
ম্যাকিন্যাক দ্বীপের রাজা হলো ঘোড়া। ১৮৯৮ সালে একটি গাড়ির কারণে সেখানকার ঘোড়ারা ভয় পেয়ে যায়। এরপর থেকেই দ্বীপটিতে গাড়ি নিষিদ্ধ করা হয়। ম্যাকিন্যাক দ্বীপের শান্ত জীবনযাপন নিয়ে এমনই জনশ্রুতি আছে।
ম্যাকিন্যাক দ্বীপের বাসিন্দারা ঘোড়াকে তাদের দ্বীপের অন্যতম ঐতিহ্য মনে করে, প্রিয় ঘোড়াকে তারা এমনই পছন্দ করে।
দ্বীপটিতে চলাচল, পণ্য সরবরাহ, ময়লা পরিস্কার- সব কাজেই ব্যবহার হয় ঘোড়ার গাড়ি।
ম্যাকিন্যাক দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য অসাধারণ একটি ভ্রমণ স্থান। পাহাড়, প্রকৃতি, বন আর সমুদ্র সৈকত মিলে এটি একটি অনন্য ভ্রমণ গন্তব্য।
মূলত ১৮ শতকের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ধনীরা গ্রীষ্মকালে বিশ্রাম নিতে যেতেন ম্যাকিন্যাক দ্বীপে। এরপর থেকেই দ্বীপটি ভ্রমণের জন্য আদর্শ গন্তব্য হতে থাকে।
ঘোড়ার গাড়ির পাশাপাশি হেঁটে দিনের কাজ সেরে নেন এখানকার বাসিন্দারা। এছাড়াও ১৫শ মোটরসাইকেল রয়েছে ম্যাকিন্যাক দ্বীপে। সবকিছু মিলিয়ে ম্যাকিন্যাক এমন এক জায়গা, যেখানের বাসিন্দাদের সম্পূর্ণভাবে তারা নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করেন।