বিদেশ যারা যেতে চান- তাদের মধ্যে ২ ধরণের মানুষই সবচেয়ে বেশি।
১. পড়াশুনা শেষ, বিদেশে পড়ার জন্য গিয়ে থেকে যাওয়া।
২. দেশে কিছু করা যাচ্ছে না। নরমাল কোন চাকরি নিয়ে বিদেশ চলে যাওয়া।
এই দুই শ্রেণির মানুষই বিদেশ গিয়ে আর্থিক কষ্টে পড়েন। কারণ, উন্নত দেশে জীবনযাত্রাও ব্যয়বহুল। আপনার দেশের ২০ টাকার টমেটো সেসব দেশে গিয়ে ৩০০ টাকায় কিনতে হতে পারে।
এছাড়া বিদেশ গেলে আপনার দেশের স্বজনরা আশায় থাকেন। তারা মনে করেন- লাখ লাখ টাকা খরচ করে আপনাকে বিদেশ পাঠাইছে; আর আপনি গিয়েই দুই হাতে ডলার কামাবেন। সেই ডলার দিয়ে তারা দেশে একটু আরামের জীবন কাটাতে চান।
তখন আপনি পড়বেন ২ ধরণের সংকটে। কারণ আপনি পড়তে যান কিংবা নরমাল চাকরি- আপনার সামনে দুই হাতে ডলার কামানোর সুযোগ কম। ফলে আপনাকে বিদেশে প্রথমে অনেক কষ্টে থাকতে হবে।
দ্বিতীয়ত, আপনার দেশের স্বজনরা তখন নানা ধরণের চাপ তৈরি করবে। প্রতিদিনই আপনার ইনকামের বিষয়ে হয়তো জানতে চাইবে। তখন স্বজনদের খুশি করতে না পারার কষ্টও আপনাকে পেয়ে বসবে।
সেজন্য আপনি বিদেশ যাওয়ার আগে সহজ কিছু কাজ শিখে যান। তাহলে কম সময় কাজ করে ভাল টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
মনে রাখবেন, আপনি বিদেশ যাবেন একটু ভাল জীবনের আশায়। টাকার অভাব নিয়ে দেশে ফিরে আসার জন্য আপনি বিদেশ যাবেন না নিশ্চয়ই। তাহলে সহজে কিছু কাজ শিখে নিলে ক্ষতি কি? কখন কোন কাজ লেগে যায়, তা আপনি কাজ জানলেই বুঝতে পারবেন।
বিদেশ যাওয়ার আগে যেসব কাজ শিখবেন
ইলেকট্রিকের কাজ
আপনার এলাকায় যিনি বিদ্যুতের কাজ করে তাকে দেখুন। দেখবেন তেমন পড়াশুনা নেই। কোথাও গিয়ে বড় রকমের ট্রেনিংও নেয়নি। কিন্তু তিনি ইলেকট্রিকের ভাল কাজ জানেন।
এর মানে হলো- আপনি যন্ত্রপাতি নাড়ানো শুরু করলে আস্তে আস্তে শিখে যেতে পারবেন। কাজ তেমন কঠিন না।
বিদেশ যাওয়ার নিয়ত করলে- পরিচিত ইলেকট্রিশিয়ানের সঙ্গে কয়েক মাস সময় কাটান। বাসা-বাড়িতে বিদ্যুতের সাধারণ যে কাজগুলো, অন্তত সেটুকু জেনে নিন।
বিদেশি ইলেকট্রিকের কাজের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। পড়াশুনা বা চাকরির ফাঁকে আপনি এ কাজ করতে পারবেন। বিনিময়ে পাবেন মোটা অংকের টাকা।
সেলাইয়ের কাজ
সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের কাপড় যায়। এর কারণ কি? পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কাপড়ের কাজ কম হয়।
কিন্তু কাপড় ছাড়া তো কেউ চলতে পারে না! এর মানে কাপড়ের চাহিদা সব জায়গায় সব সময় থাকবে।
যেহেতু বিদেশে কাপড়ের কাজ জানা লোক কম এবং তাদের চাহিদা বেশি- সেখানে আপনার ভাল ইনকামের সুযোগ আছে।
সেজন্য এলাকার কোন দর্জির কাছে মাঝে মাঝে গিয়ে কাজ শিখুন। কিভাবে কাপড় সেলাই করবেন, কিভাবে কাপড়ের সাইজ ছোট করবেন, কিভাবে বোতাম লাগাবেন, জিপার কিভাবে লাগাবেন, প্যাকেট লাগানো- এসব সহজ কাজ শিখতে পারেন।
মনে রাখবেন- বিদেশে কাপড়ের দাম অনেক বেশি। যারা কম ইনকাম করেন, তারা আপনার মত লোক খুঁজবে। সেখানে আপনার বাড়তি আয়ের একটা পথ বেরিয়ে যাবে।
রান্না করা
আমরা মনে করি, রান্না কেবল মেয়েদের কাজ। কিন্তু হোটেল-রেস্তুরায় গেলে দেখবেন পুরুষরাই রান্না করে। অর্থাৎ রান্না সবাই পারে, যদি প্রয়োজন হয়।
এই সহজ দক্ষতাটা আপনি কোন টাকা খরচ না করেই বাসায় শিখতে পারবেন। মাসখানেক বাসার রান্নায় সহযোগিতা করুন, দেখবেন ব্যাপারটা সহজ ও মজাদার।
রান্না করা শিখে বিদেশ গেলে আপনা লাভ ২টা। নিজে রান্না করে খেলে আপনার খরচ অনেক কমে যাবে। আপনি চাইলে সহজেই কোথাও রান্নার চাকরি পেয়ে যাবেন, তাতে ভাল উপার্জনও হয়ে যাবে।
একবার চিন্তা করুন- আপনি কোন দক্ষতা না অর্জন করে বিদেশে গিয়ে কি করবেন? টাকা উপার্জনের জন্য হয়তো আপনি রেস্টুরেন্টে ক্লিনারের চাকরি করবেন। একই রেস্টুরেন্টে যদি আপনি রান্নার কাজ করেন, সেটা কি আপনার জন্য বেশি ভাল হবে না?
আর বিদেশে প্রচুর বাঙালি আছেন, যারা বাংলা খাবার খেতে চান। রান্না জানা থাকলে আপনি আপনার পরিচিতদের মধ্যে খাবার সরবরাহ করতে পারবেন।
চুল কাটা
এখন চুল কাটা খুব সহজ, কষ্ট কম। সময় লাগে কম। কারণ মেশিন চলে এসেছে। বিদেশে চুল কাটার লোকের চাহিদা ভাল, বেতনও ভাল।
আপনি কোন নাপিতের দোকানে যান। তাকে চা-নাস্তা খাওয়ান। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে তিনি আপনাকে শিখিয়ে দিবেন।
বিদেশে আপনি পার্টটাইম হিসেবে চুল কাটার কাজ করে কম কষ্টে বেশি টাকা ইনকামের সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন।
ড্রাইভিং শিখুন
গাড়ি চালানো শিখুন। বেশিদিন লাগবে না। পাড়া-মহল্লায় গাড়ি প্রশিক্ষণের লোক পাবেন।
বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ড্রাইভারদের চাহিদা খুব বেশি। বেতনও ভাল।
গাড়ি চালানো শিখে আপনি বিদেশ গেলে ভাল বেতনের কাজ পেয়ে যাবেন।
তো, আপনি এসব দক্ষতা শিখে নিলে কোন না কোন কাজ পেয়ে যাবেন বিদেশে। যা আপনাকে ভালো টাকার ব্যবস্থা করে দিবে।
বিদেশে গিয়ে এসব কাজ শিখতে হলে আপনাকে অনেক টাকা ব্যয় করতে হবে। তখন আফসোস হবে। মনে হবে- এত সহজ কাজ দেশে কম খরচে শিখে আসলাম না কেন! তাই সময় থাকতেই কিছু দক্ষতা অর্জন করে নিন।
মনে রাখবেন, কিছু শিখলে ক্ষতি নেই। বরং জীবনের নানা সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে। আর কোন কাজেই লজ্জা পাবেন না! লজ্জা আপনাকে পিছিয়ে দিতে পারে।