টানা ২য় দিন সিরিয়ার রাজধানীতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবারের বিমান হামলা ছিল দামেস্কে দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছেই।
দ্রুজ সংখ্যালঘুদের ‘রক্ষায়’ ইসরায়েল সিরিয়ায় আরও সামরিক হামলার হুমকি দিয়ে রেখেছে।
সিরিয়ায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ইতোমধ্যে শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। দেশটির সংখ্যালঘু গোষ্ঠী দ্রুজ সম্প্রদায়ের একজন ধর্মীয় নেতা দাবি করেছেন, তার জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর প্রচারণা চলছে সিরিয়ায়।
এ পরিস্থিতি সামলাতে সিরিয়ার সরকার যখন চাপের মুখে রয়েছে, তখনই দৃশ্যপটে হাজির ইসরায়েল। ফিলিস্তিন ও লেবাননে হামলা চালিয়ে আসা নেতানিয়াহু সরকার এখন সিরিয়ায় হামলা চালানোর জন্য অজুহাত দেখাচ্ছে দ্রুজদের রক্ষার।
ইসরায়েল সিরিয়ার প্রেসিডেন্টশিয়াল প্যালেসের মত স্পর্শকাতর স্থানের পাশে হামলা চালানোর আগে দেশটির সেনাবাহিনীর শতাধিক স্থানে আক্রমণ করেছে।
সিরিয়ার দ্রুজ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতা শেখ হিকমত আল হিজরি শান্তির জন্য আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চাওয়ার পরপরই এসব হামলার ঘটনা ঘটছে।
স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে হামলার অর্থ হচ্ছে সিরিয়াকেও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পাল্টা আক্রমণের জন্য ডাকা, যা এই অঞ্চলে আরেকটি প্রাণঘাতি যুদ্ধের সূচনা করতে পারে।
ইসরায়েল যে এ ধরণের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত, তার ইঙ্গিত দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বক্তব্যে ধরা পড়ছে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন যে, দ্রুজ সম্প্রদায়কে সিরিয়া রক্ষা করতে না পারলে ইসরায়েল আরও শক্তি নিয়ে আক্রমণ চালাবে।
ইসরায়েল ইতোমধ্যে সিরিয়া-ইসরায়েল সীমান্তের বেসামরিক বাফার জোন এলাকায় সৈন্য পাঠিয়েছে।
গাজার পর সিরিয়াও ধ্বংস করতে চায় ইসরায়েল?
সিরিয়ায় বাসার আল আসাদের পতনের পরই সীমান্তের গোলান হাইটস এলাকায় গিয়েছিলেন বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। তখনকার ছবিতে ধরা পড়েছিল যে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে নিয়ে সিরিয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
সেসময় একটি ভিডিওতে তাকে বলতে শুনা যায়, বাসার আল আসাদের পতন ইসরায়েলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
এরপর ইসরায়েল বাহিনীকে সিরিয়ায় নিয়মিত বিমান হামলা চালাতে দেখা যায়। মূলত আসাদ সরকারের সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করেই এসব হামলা চালানো হয়।
একইসঙ্গে সিরিয়ার কিছু অংশও সেনা পাঠিয়ে দখলে নিয়ে নেয় ইসরায়েল। যেসব এলাকা একইসঙ্গে ইসরায়েল, সিরিয়া ও লেবাননে নজরদারি চালানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
নেতানিয়াহু যখনই ক্ষমতায় থেকেছেন, মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে হামলা চালিয়েছেন। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র বদলে দেওয়ার উচ্চভিলাস তার নানা পদক্ষেপে সামনে এসেছে।
এর মাধ্যমে ইসরায়েল বরাবর চেয়ে পাশের দেশগুলোর ভূমি দখল করে তার সীমানা বাড়িয়ে নিতে।
ইসরায়েলের এমন কৌশল সহজ করে দেওয়ার মত পরিবেশ তৈরি করেছে সিরিয়ায় বাসার আল আসাদের পতন। আসাদের পতনের পর যে সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, তারা এখনো দেশটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে নি। নিয়মিত সশ্রস্ত্র শক্তিগুলোর চ্যঅলেঞ্জ সামলাতে হচ্ছে নতুন সরকারকে।
অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল এ সরকারকে আরও চাপে ফেলতে ইসরায়েলের হাতে আছে সংখ্যালঘুদের ঢাল হিসেবে সামনে এনে সিরিয়ায় অভিযান চালানো।
সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে সামরিক বিশ্লেষকরা দেখছেন, নেতানিয়াহুর মধ্যপ্রাচ্যকে পাল্টে দেওয়ার আরেকটি পদক্ষেপ হিসেবে। যার অংশ হিসেবে গাজার পর সিরিয়াও পরিণত হতে পারে আরেকটি ধ্বংসস্তুপে।