মোবাইল ছাড়া এখন আর দুনিয়া চলে না। আর একটি ভাল মোবাইল কিনলে আপনি কয়েক বছর ভাল ভাবে স্বস্তিতে তা ব্যবহার করতে পারবেন।
এজন্য আপনাকে ফোন কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে। বিশেষ করে এখনকার সময়ে যে ইস্যুগুলো নিয়ে ব্যবহারকারীদের বেশি ভুগতে হচ্ছে, সে বিষয়গুলো চেক করে মোবাইল কেনা উচিত।
একইসঙ্গে মোবাইলের যে বিষয়গুলো ব্যবহারকারীকে ভাল অনুভূতি দেয়, সেগুলো আপনার কাংখিত ফোনে পাবেন কিনা তাও জেনে নেয়া দরকার।
একটি কমন ধারণা হলো- বেশি টাকা দিলে ভাল মোবাইল পাওয়া যায়। এটি পুরোপুরি সঠিক নয়। অনেক সময় একটি দামী মোবাইলও আপনার জীবনকে কঠিন করে তুলতে পারে। আবার কম দামি ফোনেও ভাল সার্ভিস পেতে পারেন।
তাই মোবাইলে আপনার চাহিদা কি ধরণের, তা আগে বিবেচনা করুন। এরপর সে ফিচারগুলো আপনার বাজেট অনুযায়ী কোন ফোনে পাবেন, তা দেখে নিন।
যেমন- আপনার পছন্দ ভালো ক্যামেরা। এখন বাজারে খুব ভাল ক্যামেরার অনেক ফোন আপনি পাবেন। কিন্তু দেখা যাবে কিছু কিছু ফোন শুধু ক্যামেরা ছাড়া আর কোন সার্ভিস ভাল দিতে পারছে না। তাই আপনাকে আগে ঠিক করতে হবে আপনি কি চান। যদি অন্য সার্ভিস ছাড়াও আপনার চলে তাহলে এই ফোন নিতে পারে। আবার আপনি যদি ভাবেন আপনার অন্য সার্ভিসগুলোও ভালো লাগবে- তখন আপনাকে অন্য ফোন বেছে নিতে হবে।
তাই ফোন কেনার আগে কয়েকদিন ভাবুন। মোবাইলের ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা শুনুন। এরপর সঠিক ফোন কেনার সিদ্ধান্ত নিন। এই সিদ্ধান্ত নিতে গেরে নীচের বিষয়গুলো আপনার জন্য বিবেচ্য হতে পারে। তাহলে মোবাইল কিনে ঠকবেন না।
মোবাইল কিনে ঠকতে না চাইলে যা করবেন
একটি মোবাইলে বহু ধরণের সুবিধা থাকে। সব বিষয় সম্পর্কে আপনি হয়তো জানেনও না। তাই সব বাদ দিয়ে আপনাকে একটি মোবাইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো মাথায় রাখতে হবে।
আমরা আপনার জন্য সে অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরছি। নীচের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে মোবাইল কিনলে আশা করি ঠকবেন না।
গ্রীন লাইন পড়ে কিনা
কিছু কোম্পানির মোবাইলে নিয়মিতই গ্রীন লাইন পড়ছে। যেমন- ওয়ান প্লাস, ভাল ক্যামেরা থাকলেও গ্রীন লাইন ইস্যুর কারণে মার্কেটে কোম্পানিটি পিছিয়ে পড়েছে।
আবার কিছু কোম্পানির নির্দিষ্ট সিরিজে গ্রীন লাইন পড়ছে। যেমন- স্যামসাং এর এস সিরিজ, সবদিক থেকে প্রিমিয়াম ফোন হলেও এর গ্রীন লাইন ব্যবহারকারীদের মধ্যে আতংক তৈরি করেছে।
এখন এই ২ ধরণের মোবাইল আপনি কিনবেন কিনা- সেটি আপনাকেই বিবেচনা করতে হবে। আমাদের পরামর্শ হলো- টাকা দিয়ে গ্রীন লাইনের ঝুঁকি আছে এমন মোবাইল না কেনাই ভাল।
কারণ কয়েক মাস চালানোর পর গ্রীন লাইন পড়লে মোবাইল ব্যবহার করে আর মজা পাবেন না। তখন আপনাকে হয়তো ডিসপ্লে পরিবর্তন করতে হতে পারে। কিন্তু অরিজিনাল ফোনের ডিসপ্লের ফ্লেভার আর পরের ডিসপ্লেতে পাবেন না। সবচেয়ে বড় কথা হল ডিসপ্লে পরিবর্তন করতেও অনেক টাকার প্রয়োজন হতে পারে।
এ কারণে অনেকে খরচের চিন্তা করে গ্রীন লাইন পড়া মোবাইলই ব্যবহার করতে থাকে। কিন্তু গ্রীন লাইন পড়া মোবাইল চোখের জন্য অনেক ক্ষতি করে, এ বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
তাই, সবচেয়ে ভাল হবে- এ ধরণের ফোন না কেনা।
নেটওয়ার্ক সমস্যা কিনা
কিছু মোবাইলে কমন সমস্যা হচ্ছে- নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না, ব্যবহারের সময় ডিস্টার্ব করে।
এ ধরণের মোবাইল কিনলে সহকর্মী, বন্ধু, স্বজনদের অভিযোগের শেষ থাকবে না। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তারা আপনাকে ফোন দিয়ে পাবে না। একটু বেশি মানুষের ভীড়ে ঢূকলে আপনি আউট অফ নেটওয়ার্কে চলে যাবেন।
ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় স্লো নেট পাবেন। কল দিতে গেলে কথা বেজে আসতে পারে। তাতে আপনার সময় ব্যয় হবে বেশি। মোবাইল ডাটা, কল খরচ বাড়বে।
তাই মোবাইল কেনার আগে খোঁজ নিন- আপনার কাংখিত মোবাইলের নেটওয়ার্ক কেমন। যদি নেটওয়ার্ক ইস্যু থাকে, তাহলে মোবাইল কিনে ঠকতে না চাইলে ভিন্ন ফোন বাছাই করতে পারেন।
ব্যাটারি ড্রেইন হয় কিনা
কিছু মোবাইলের ব্যাটারি ক্যাপাসিটি কম থাকে, ফলে চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যায়। আবার কিছু মোবাইলের ব্যাটারির ক্যাপাসিটি ভাল থাকলেও চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যায়, এসব মোবাইল ব্যবহারের ভোগান্তির শেষ নেই।
দেখবেন কতক্ষণ নেট চালালে বা গেম খেললে ব্যাটারি শেষ। তখন পাওয়ার ব্যাংক বা ক্যাবল নিয়ে ঘুরতে হবে। এভাবে মোবাইল ব্যবহার করা ভোগান্তির।
আবার চার্জ না থাকার কারণে দেখা যাবে ফোন বারবার বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আপনি মোবাইল হয়তো ব্যবহার করতে পারবেন না। আবার আপনাকেও অন্যরা প্রয়োজনে পাবে না। সবচেয়ে বড় কথা- বারবার ফোন বন্ধ-চালু হলে মোবাইলের আয়ু কমে আসবে।
তাই ঠকতে না চাইলে আগেই যাচাই করে নিন- আপনার কাংখিত মোবাইলের ব্যাটারির পারফরম্যান্স কেমন।
গরম হয়ে যায় কিনা
আমাদের মত গরম অঞ্চলে মোবাইলের গরম হয়ে যাওয়া কষ্টের। কিন্তু কিছু মোবাইল অল্পতেই গরম হয়ে যাচ্ছে ইদানিং। আপনি দেখবেন, ব্যবহারের সময় ফোন গরম হয়ে গেলে সে ফোন আর চালাতে ইচ্ছে করে না।
আর গরম হয়ে যাওয়ার সমস্যা মোবাইলের ক্ষতি করে। ফলে এতে ব্যাটারি দুর্বল হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে দেখা যায়।
টেকসই কেমন
মোবাইল কিনলে নিশ্চয়ই আপনি চাইবেন কয়েক বছর ব্যবহার করতে। কিছু মোবাইল দীর্ঘস্থায়ী হয়, আবার কিছু মোবাইল কয়েক বছর যেতেই স্লো হয়ে যায়। বডি ভেঙে যায়। আপডেটের পর ক্যামেরাসহ বিভিন্ন পারফরমেন্স দুর্বল হয়ে যায়।
সে কারণে মোবাইলের স্থায়ীত্ব কেমন- তা আগে যাচাই করুন। কয়েকদিন যেতেই সমস্যা তৈরি করে, এমন ফোন না কেনাই ভাল। কারণ একটি মোবাইল কয়েক বছর শান্তিতে ব্যবহার না করা গেলে আপনার আপনার বাজেট লোকসানে যাবে।
পারফরম্যান্স স্মুথ কিনা
পারফরমেন্সই মোবাইলের মূল বিষয়। কারণ স্মুথ না হলে আপনার মোবাইল মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠবে। তাই আপনার কাংখিত মোবাইলের পারফরম্যান্স কেমন তা আগে চেক করুন। এরপর ভাল গতিশীল একটি মোবাইল বেছে নিন।
মোবাইলের ক্যাপাসিটি কেমন
মোবাইলের ব্যাটারি ক্যাপাসিটি কেমন, স্টোরেজ কেমন, ক্যামেরার ছবি-ভিডিও কোয়ালিটি কেমন, আপডেট কেমন পাবেন, ডিসপ্লে কেমন- ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে তুলনা করুন। সেখানে কোন কোম্পানি ভাল করছে তা দেখুন। তাহলে মোবাইল কেনার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।
মোবাইলের দাম কেমন
মোবাইলের দাম সবচেয় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মোবাইল কিনার জন্য নির্দিষ্ট বাজেট থাকে। এই বাজেটের মধ্যে কোন কোম্পানি তার মোবাইলে কি দিচ্ছে সেটা বিচার করে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করুন। এরপর ফোনের শো-রুমে গিয়ে সে ফোনগুলো সরাসরি দেখুন। যেটা ভাল মনে হবে তা নিয়ে নিন।
আসলে মোবাইল এখন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। শুধু কথা বলা না, জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখন মোবাইলের মাধ্যমে হাতে চলে এসেছে। তাই একটি ভাল মোবাইল কিনুন। আপনার জীবন আরও গতিশীল হবে। সেজন্য উপরের বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিন।