পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশগুলোর একটি মালদ্বীপ। মালদ্বীপের নীল জলরাশির টানে প্রতিবছরই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পর্যটক দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে ছুটে আসেন। কিন্তু মালদ্বীপের সৌন্দর্য নিয়ে যতটা আলোচনা হয়, সে তুলনায় আড়ালেই থেকে যান সেখানকার বাসিন্দারা।
মালদ্বীপের রয়েছে বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বহু জাতি-ধর্মের মানুষের এক অপরুপ সম্মিলেন ঘটেছে ভারত মহাসাগরের দেশটিতে। সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যে মানুষেরা দেশটিতে আস্তানা গেড়েছেন, তাদের সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন নিজেদের ভাষা, ধর্ম আর সংস্কৃতি।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই মালদ্বীপ বৈশ্বিক নাগরিকদের একটি মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে। আর দেশটিতে পা ফেললেই আপনার মনে হবে বাংলাদেশের বাইরে আরেক বাংলাদেশের দেখা পেয়ে গেছেন।
না, ঢাকার মত যানজট নেই সেখানে। ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো নেই, গাড়ির হর্ন নেই- এখানকার সিস্টেম আলাদা।
এতসব ভালো বিষয়ের মধ্যে আপনার সবচেয়ে আপন মনে হবে মানুষ! বিমান রানওয়ে ছুঁয়ে মালদ্বীপের মাটি স্পর্শ করার পর দেশটি আপনার খুব দূরের মনে হবে না। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে সব জায়গায় এত বেশি বাংলাদেশির দেখা পাবেন আপনি, তখন মালদ্বীপকেই মনে হবে আরেক বাংলাদেশ। একটু পরপর হয়তো বাংলায় কেউ বলে ওঠবে- আপনি কি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন?
মালদ্বীপের জনসংখ্যা সোয়া ৫ লাখের মত। আর দেশটিতে বাংলাদেশি আছেন ১ লাখের বেশি। ফলে বুঝতেই পারছেন, সবখানেই কোন না কোন বাংলাদেশি আপনি পাবেন।
মালদ্বীপ গিয়ে চাইলেই আপনি অন্য ভাষায় কথা না বলে সব কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। আর প্রবাসী বাংলাদেশিরা এত আন্তরিক যে তাদের সব ধরণের সহযোগিতা আপনি পাবেন।
বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপ ঘুরতে আসা এমন পর্যটকও আমরা এমন পেয়েছি যে, ডলার জটিলতায় পড়ে তারা বাংলাদেশি টাকায় এখানে ভ্রমণ, কেনাকাটা সেরে নিতে পেরেছেন। আর এগুলো সম্ভব হয়েছে মালদ্বীপ প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিকতার কারণে।
মালদ্বীপের স্পিডবোট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট, দোকান- এমন কোন সেবাখাত নেই যেখানে বাংলাদেশিরা নেই। মালদ্বীপের রাস্তায় হাঁটলে আপনার মনে হবে স্থানীয়দের চেয়ে বাংলাদেশিদের সংখ্যাই বেশি।
মূলত বহু বছর আগে মালদ্বীপে যারা গিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে, তারাই তাদের পরিচিতদের দেশটিতে কাজ করতে নিয়ে গিয়েছেন। সে হিসেবে মালদ্বীপে বাংলাদেশিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশি ছাড়াও দেশটিতে এখন ভারত ও শ্রীলংকার প্রচুর নাগরিক পাবেন। নেপালের নাগরিকদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে।
তবে দু:সংবাদ হচ্ছে, মালদ্বীপের বর্তমান প্রশাসন বাংলাদেশিদের খুব একটা ভাল দৃষ্টিতে দেখছে না। ফলে অন্য দেশ থেকে নাগরিকরা কাজ পেলেও এখন বাংলাদেশিদের কাজ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ছোটখাটো ভুলের কারণে মালদ্বীপে যেসব প্রবাসী আছেন, তাদেরও শাস্তির মুখে পড়তে হয়।
এসবের কারণ হল- মালদ্বীপ অন্য দেশ থেকে ১ লাখের বেশি নাগরিক নিতে আগ্রহী নয়। বাংরাদেশিদের সেই কোটা আগেই পূরণ হয়ে গেছে। ফলে বৈধভাবে এখন মালদ্বীপে কাজ করতে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য কঠিন। এই সুযোগে কেউ কেউ অবৈধভাবে মালদ্বীপে থাকার চেষ্টা করছেন।
মালদ্বীপের বাসিন্দারা খুব কমই অপরাধের সঙ্গে জড়ায়। তবে কম হলেও বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে নিয়ম না মানার কিছু প্রবণতা সেখানে দেখা যায়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশিরা মাঝে মাঝে দেশটিতে চাপ অনুভব করছেন। তারা এখন মনে করেন, তাদের বড় শ্রমবাজারটি শ্রীলংকা, ভারত, নেপালের নাগরিকরা দখল করে ফেলতে পারে।
এতকিছুর পরও মালদ্বীপে আপনার ভালো লাগবে। গায়ে গা লেগে যাবে কোন বাংলাদেশির। ইংরেজি বলতে গিয়ে মুখ থেকে বেরিয়ে আসবে মধুর বাংলা ভাষা!