পেহেলগাম হামলা যেভাবে বদলে দিচ্ছে কাশ্মীরি তরুণদের জীবন

কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা

আশিক নবী, ভারতের কাশ্মীরের একজন ট্যুর অপারেটর। কাশ্মীরের পর্যটন এলাকাকে ভ্রমণকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরার জন্য ভারতের যেসব তরুণ কাজ করছেন, তাদের একজন আশিক নবী।

গেল এপ্রিলে কাশ্মীরে যখন সন্ত্রাসী হামলা হয়, তখন পেহেলগামেই ছিলেন এই তরুণ। কোটি কোটি ভারতবাসীর মত আশিকের হৃদয়েও রক্তক্ষরণ হয় এই প্রাণঘাতি বিভৎসতায়।

আর এখন তাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার যন্ত্রণা।

আশিক নবী একজন স্থপতি, পর্যটন পরিকল্পনাকারী হিসেবে তিনি কাশ্মীরে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম উন্নয়নে কাজ করছেন। কিন্তু কাশ্মীরে হামলা তার সমস্ত পরিকল্পনায় ভয়াবহ এক ধাক্কা মেরেছে।

হামলার পর ভারত সরকার কাশ্মীরের ৪৮টি পর্যটন স্থান বন্ধ করে দিয়েছে, যা আশিক নবীর কাজে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে।

স্থানীয়দের নিয়ে বহু মাসের পরিকল্পনায় পর্যটনের যে লক্ষ্য তিনি দাঁড় করিয়েছিলেন তা এক মুহুর্তে থমকে গেছে।

আশিক নবীর ভাষ্য, তিনি অনেক বছর ধরে কাশ্মীরকে নিরাপদ ও অ্যাডভেঞ্চারবান্ধব পর্যটন স্থানের ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করাতে চেষ্টা করেছেন। তার সেই সব অর্জন এক ধাক্কায় হারিয়ে গেছে।

“আমি এখন আমার জীবিকা নিয়ে খুবই হতাশ, কিন্তু আশা করা ছাড়া আমাদের কিছু করা নেই।”

কাশ্মীরের পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হবে, আবার পর্যটকরা ভীড় জমাবে এবং পর্যটন শিল্প আবার দিশা খুঁজে পাবে- এই আশা নিয়েই এখন দিন কাটাচ্ছেন আশিক নবী।

যা ঘটছে কাশ্মীরে

অন্য অনেক দিনের মত গেল ২২ এপ্রিলও পেহেলগামের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের টেনে এনেছিল কাশ্মীরে। যাদের সামনে মৃত্যুদূত হয়ে এসেছিল একদল বন্দুকধারী। যারা গুলি করে হত্যা করে ২৫ জন পর্যটক ও একজন ঘোড়াচালককে।

এটিই গত ২ যুগে কাশ্মীরের সবচেয়ে প্রাণঘাতি ঘটনা, যা কাশ্মীরের জনজীবনে ব্যাপক ক্ষত তৈরি করছে।

এই হামলার পর কাশ্মীরে প্রায় সব ধরণের ভ্রমণ ট্যুর বাতিল হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটাতে পর্যটন প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় গাইড, চালক ও অন্যান্য কর্মীদের ছাঁটাই করছে। ফলে পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল বিশাল সংখ্যক মানুষের জীবনে অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে।

কাল কি খাব?

পর্যটকদের আস্থা যেভাবে নষ্ট হয়েছে এই ঘটনায়, তাতে ভবিষ্যতেও যে শত শত মানুষ কাজ হারাবেন সেই আশঙ্কা-উদ্বেগ নিয়ে এখন কাশ্মীরের বাসিন্দারা দিন কাটাচ্ছেন।

ভারত-পাকিস্তন যখন যুদ্ধের উত্তেজনা ছড়াচ্ছে, তখন কাশ্মীরের এসব মানুষ নিজেদের জীবন নিয়ে টিকে থাকার পথ খুঁজছেন। রাজনৈতিক টানাপোড়েন যত বাড়বে, তাদের জীবন যে ততই কঠিন হয়ে ওঠবে সেই হতাশা এখন তাদের ঘিরে ধরছে।

আশিক নবীর মত তরুণরা বলছেন, তারা যে ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন তা শুধু আতঙ্ক তৈরি করেনি; তাদের জীবিকার একমাত্র রাস্তাও ধ্বংস করে দিয়েছে।

বিশেষ করে যারা সরকারি চাকরি কিংবা পর্যটনের বাইরে অন্য ব্যবসা করছেন না- তারা নিঃস্ব হয়ে যাবেন, এমন আশঙ্কা তাদের।

আশিকের মতই আরেকজন কাশ্মীরি তরুণ রামিজ আহমেদ বলছিলেন, তাদের বেঁচে থাকা নির্ভর করে পর্যটনের উপর, এর বিকল্প কিছু নেই।

“আমার কোন সেভিংস নেই। আমার পরিবারকে চালাতে হয়, বাচ্চা আছে তাদের পড়াতে হয় এবং লোন শোধ করতে হয়।”

রামিজ আহমেদ বলেন, “পর্যটক না আসলে এটি শুধু কাজের জন্য একটি খারাপ দিন নয়, আমরা আগামীকাল কি খাবো সেই প্রশ্নও তৈরি করে।”

এভাবেই ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনার মূল ভুক্তভোগী হয়ে উঠেছে কাশ্মীর।