পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম জব করবেন যে কারণে

part-time job

আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি অন্য কাজ করাকে খুব ভাল চোখে দেখি না। নিজেরা হিনমন্যতায় ভুগি, অন্যরা চাকরি করা শিক্ষার্থীকে দেখে গরীব পরিবারের সদস্য হিসেবে।

কিন্তু আমরা উন্নত বিশ্বের দিকে তাকাই- তখন দেখবো শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার পাশাপাশি অনেক পার্টটাইম জব করছে। আমাদের শিক্ষার্থীরাও সেসব দেশে গেলে পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম জব করে।

দেশেও আমরা তা করতে পারি। সে কারণে লজ্জা ভেঙে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ শুধু আর্থিক নয়, আরও নানা কারণে পার্টটাইম জব করা উচিত। যার মাধ্যমে আমরা জীবনে অনেকটা এগিয়ে যেতে পারবো। বইয়ের জ্ঞানের পাশাপাশি বাস্তব জীবনের যুদ্ধকে আমরা শিক্ষার্থী অবস্থায়ই বুঝে নিতে পারবো।

পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম জব আপনি যেসব কারণে করবেন তার একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা আমরা আপনাদের সঙ্গে তুলে ধরবো।

টাকা উপার্জন:

টিউশনি, চাকরি বা কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কিছু সময় কাজ করলে আপনি নিজের হাত খরচ নিজেই চালাতে পারবেন। মাসে চলার জন্য পরিবারের কাছে টাকা চাইতে হবে না।

চাইলে কিছু টাকা জমিয়ে চাকরির আবেদনে খরচ করতে পারবেন। নিজের কোন শখের জিনিস কিনতে পারেন, ভালো চাকরির প্রস্তুতির পিছনেও অর্থ ব্যয় করতে পারেন।

পড়াশুনার মধ্যে থেকেই নিজের টাকায় উৎসব আয়োজনে পরিবারের বয়স্ক সদস্য কিংবা ছোট বাচ্চাদের হাতে উপহার তুলে অনিন্দ্য আনন্দ অনুভূতিও পেতে পারেন।

দক্ষতা বাড়ানো:

পড়াশুনার সময় হাতে অনেকটা সময় থাকে। সে সময়টা আপনি পার্টটাইম জবের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজে লাগাতে পারবেন। যা আপনার ভবিষ্যত ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য কাজে লাগবে।

ধরেন- আপনি কোন একটি প্রকাশনীতে পার্টটাইম জব করছেন। তাহলে কাজের প্রয়োজনেই আপনাকে প্রকাশনা সংক্রান্ত খুটিনাটি বিষয় জেনে নিতে হবে। এর ফলে ভবিষ্যতে এ ধরণের কাজে আপনি অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন। এরজন্য আপনাকে টাকা খরচ করে স্কিল ডেভেলপ করতে হবে না।

কোন একটি ফ্রিলান্সিং প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করতে পারেন। তাহলে ডিজিটাল দুনিয়ার অনেক কিছুই আপনি আস্তে আস্তে শিখে যাবেন।

আপনি যদি মেডিক্যালের শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন- তাহলে ফার্মেসী কিংবা কোন সিনিয়র ডাক্তারের চেম্বারে পার্টটাইম জব নিতে পারেন। তাহলে বড় চিকিৎসকরা কিভাবে রোগীদের দেখেন সে বিষয়ে আপনার ধারণা তৈরি হয়ে যাবে।

চাকরির প্রস্তুতি

পার্টটাইম জব হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে ভাল হল- টিউশনি করা। এছাড়া কোন প্রকাশনীতে লেখার কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। তাহলে ভবিষ্যতের চাকরির পরীক্ষায় ভাল করার সুযোগ বাড়ে।

কারণ, আপনি আজকে যে কাজটি করছেন- সামনের পরীক্ষায় এসব বিষয় থেকেই নানা ধরণের প্রশ্ন আসে। সেক্ষেত্রে চাকরির মধ্যেই আপনি আপনার পরীক্ষার প্রস্তুতিটা সেরে নিতে পারলেন।

নেটওয়ার্ক বাড়ানো:

পার্টটাইম জবের মাধ্যমে আপনি পড়াশুনার মধ্যেই বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আপনার পরিচিত লোক বাড়তে থাকবে। যা ভবিষ্যতে আপনার ক্যারিয়ার গড়তে সহযোগিতা করবে।

দেখবেন, পড়াশুনা শেষ করে আপনার বন্ধু যখন কোন প্রতিষ্ঠানে ঢুকার উপায় খুঁজবে; তখন আপনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অফার পেতে থাকবেন।

আর আপনার যোগাযোগ বাড়া মানে আপনি আপনার পেশায় আরও ভাল কিছু করার রাস্তা পেয়ে গেলেন।

আত্মবিশ্বাস বাড়ানো

অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যেই চাকরির ব্যাপারে ভয় থাকে। কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে ধারণা না থাকায় এমনটা হয়ে থাকে।

কিন্তু আপনি যখন আগেভাগেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসা করবেন- তখন মূল চাকরিতে ঢুকার পর অনেক আত্মবিশ্বাস পাবেন। কারণ আপনি বিষয়গুলো সম্পর্কে আগে থেকেই পরিচিত।

তাতে অন্যরা যতদিনে ভয় কাটিয়ে ওঠবে, ততদিনে আপনি অনেকটা এগিয়ে যাবেন।

ম্যাচিউরিটি অর্জন

পড়াশুনা শেষে সরাসরি চাকরিতে ঢুকলে অনেক সংকোচ-দ্বিধা কাজ করে অনেকের। কার সঙ্গে কি ব্যবহার করতে হবে সে বিষয়ে অনেকটা অন্ধকারে থাকেন অনেকে। বলা যায় শুরুতেই সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা নিয়ে চাপে পড়ে যান তারা।

এ সময়ে ছোটখাটো কোন ভুল করে ফেললে তা ক্যারিয়ারের জন্য চাপ তৈরি করে।

আপনি আগেই পার্টটাইম জব করে থাকলে এ ধরণের সংকটে পড়বেন না। আপনি সহজেই বুঝে যাবেন, কোন পরিস্থিতিতে কি করতে হবে।

উদ্যোক্তা হতে পারা

পড়াশুনা শেষে সবাই চাকরি করবে, বিষয়টি এমন না। অনেকে ব্যবসা করবেন। প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন। তাদের জন্য পার্টটাইম জব সবচেয়ে উপকারী।

তারা শিক্ষার্থী অবস্থায়ই জেনে যাবেন একটি প্রতিষ্ঠান কিভাবে চালাতে হয়। মানুষের চাহিদা কেমন। কিভাবে ভাল লাভ করা যায়। কাস্টমারের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হয়। কিভাবে ক্রাইসিস ম্যানেজ করতে হয়।

এসব বিষয় সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকলে আপনি সহজেই একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন। নিজের প্রতিষ্ঠান ভালভাবে দাঁড় করাতে পারবেন।

এর বাইরেও আরও অসংখ্য কারণ রয়েছে পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম জব করার। নিজেকে এগিয়ে রাখতে পার্টটাইম জব করুন। ভবিষ্যত নিশ্চয়ই আপনাকে হতাশ করবে না।

তবে এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন যে, পার্টটাইম জব যেন আপনার পড়ালেখাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। কারণ, আমাদের অনেকে টাকা পেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেলে আরও বেশি টাকা পেতে চায়। তখন তারা ক্লাস-পরীক্ষা রেখে উপার্জন করতে শুরু করে। এগুলো ভবিষ্যতের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

আপনি ততটুকু কাজই করবেন, আপনার হাতে যেটুকু সময় আছে। দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় কাজ করতে পারেন। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে কাজ করতে পারেন।

মনে রাখবেন, আপনার এখন প্রধান কাজ পড়ালেখা করা। এর বাইরের সময়টুকু আপনি অন্য কাজে ব্যয় করবেন, পড়ালেখার সময়টুকু না।

এভাবে সময়ের ভারসাম্য আনতে পারলেই আপনি সফল হবেন।