নৈতিকতার মানদণ্ড

সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে banglainsight24.com এর সাংবাদিকরা নীচের কোড অব এথিক্স বা নৈতিকতার মানদণ্ড অনুসরণ করবেন।

১. গণমাধ্যম, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং জনসাধারণের তথ্য লাভের অধিকারের নীতিকে সমুন্নত রাখুন।

অন্য কোনও স্বার্থে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ব্যবহার করবেন না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে বা পেশার ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাতের দিকে নিয়ে যায়- এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন।

বিশ্বাসযোগ্যতা, ভারসাম্য এবং বৈচিত্র্যের সাংবাদিকতার মূল্যবোধ মেনে চলুন। পেশাদার বিবেচনার ওপরে বিজ্ঞাপন, বাণিজ্যিক বা রাজনৈতিক স্বার্থ, রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ, অন্য কোনও স্বার্থ ও বাইরের চাপকে অগ্রাধিকার দিবেন না। তথ্য প্রচার করা বা না করার কারণে কোন সুবিধা গ্রহণ করবেন না।

২. শুধু তথ্য প্রদান নয়- সংবাদ প্রাসঙ্গিক ও অর্থপূর্ণভাবে উপস্থাপন করুন।

সর্বোচ্চ পেশাদার ও নৈতিক মান বজায় রাখুন। সত্যের কাছে এমনভাবে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন- যাতে সংবাদের নিরপেক্ষতা, নির্ভুলতা ও স্বচ্ছতা সম্পর্কে কোন সন্দেহ না থাকে।

কৌশলগত বা অবহেলামূলক বিচ্যুতি, বিকৃতি, অতিরঞ্জন, অস্পষ্টতা, পক্ষপাত, আংশিক তথ্য প্রদান, মিথ্যাচার বা ভুল উপস্থাপনার মাধ্যমে সংবাদকে প্রভাবিত করবেন না।

সংবাদে ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধন করুন এবং এসবের পুনরাবৃত্তি বন্ধে সতর্ক হোন। দ্রুত ব্যাখ্যাসহ সংশোধন বা প্রত্যাহারের পাশাপাশি উপযুক্ত স্থানে সম্পাদক ক্ষমা প্রার্থনা করবেন।

সংবাদে স্বচ্ছতা থাকলে বাইরের স্বার্থের চাপে তাতে পরিবর্তন আনবেন না। তথ্য প্রভাবিত, অতিরঞ্জিত, বিকৃত বা দমনের হুমকি অথবা অন্য কোনও প্রলোভন প্রতিরোধ করুন।

সকল জাতি, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি দিন- যাতে সেগুলোর নিরপেক্ষ ও বিশ্বস্ত প্রতিফলন উপস্থাপন করা যায়।

মন্তব্য এবং সমালোচনা বিনিময়ের জন্য একটি ফোরাম হিসেবে কাজ করুন এবং বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির অ্যাক্সেস প্রসারিত করুন। সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলির অন্তর্ভুক্ত বা প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র তুলে ধরুন।

নিরপেক্ষভাবে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য রাখুন এবং সেই মতামতগুলিকে তাদের বিশিষ্টতা ও তাৎপর্য অনুসারে স্থান দিন।

নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, মতামত, পূর্বানুমান এড়িয়ে মৌলিক তথ্য প্রদান করুন। তবে সকল প্রাসঙ্গিক তথ্য এবং দৃষ্টিভঙ্গির নিরপেক্ষ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঘটনাবলীকে বোঝানো।

দেশ, জাতি, রাষ্ট্র, ভাষা, ধর্ম, বর্ণ পক্ষে অবস্থান বা বিপক্ষে বিদ্বেষ ছড়ানো যাবে না।

৩. সংবাদে নাম-পরিচয় যথাযথভাবে প্রকাশ করুন, অপ্রয়োজনীয় শব্দ ব্যবহার করে ব্যক্তির মর্যাদা ক্ষুন্ন কিংবা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করবেন না।

জনস্বার্থের জন্য জরুরি না হলে কারো ব্যক্তিগত গোপনীয়তার যুক্তিসঙ্গত অধিকারে হস্তক্ষেপ করবেন না।

শিশুর সাক্ষাৎকার বা ছবি-ভিডিও ধারণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রাপ্তবয়স্কের সম্মতি নেবেন। অপরাধের শিকার, কোন ঘটনার সাক্ষী কিংবা আদালতের রায়ে অপরাধী প্রমাণিত হননি- এমন শিশুর নাম-পরিচয় প্রকাশ থেকে বিরত থাকুন।

বয়স্ক, রোগাক্রান্ত বা নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই- এমন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার জরুরি হলে তা সতর্কভাবে নিন। জরুরী পরিস্থিতিতে চিকিৎসক, উদ্ধারকারীদের মত জীবন রক্ষাকারী দায়িত্বে কর্মরতদের মন্তব্য নিবেন না।

গুরুতর ক্ষেত্রে প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত রাখা, প্রমাণ ধ্বংস করা বা সাক্ষীদের ভয় দেখানো হতে পারে- এমন যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে অভিযুক্তদের মতামত সংগ্রহ থেকে বিরত থাকুন।

জনস্বার্থের জন্য জরুরি না হলে বিশ্বাসভঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা প্রকাশনার তথ্য প্রকাশ করবেন না।

৫. তথ্যের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে সংবাদ তৈরি করবেন না, প্রতিবেদনকে বিশ্বাসযোগ্য করতে উৎস প্রকাশ করুন। তথ্য প্রচারে তাৎক্ষণিকতার ধারণা তথ্য বা উৎস যাচাইকরণ এবং প্রয়োজনীয় মন্তব্য সংগ্রহের চেয়ে অগ্রাধিকার পাবে না।

সোর্সের সাথে আচরণে স্বচ্ছতা বজায় রাখুন, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তথ্যের উৎস সম্পর্কে পেশাদার গোপনীয়তা বজায় রাখুন। তবে গোপনীয় উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য কমপক্ষে দুটি নির্ভরযোগ্য ও স্বাধীন উৎস দ্বারা যাচাই করে নিতে হবে।

দ্বিতীয় কোন পক্ষের (রাষ্ট্রীয় বাহিনী, ধর্মীয় সংগঠন, রাজনৈতিক দল, অর্থনৈতিক গোষ্ঠী ইত্যাদি) সহায়ক হিসেবে কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন।

ব্যক্তিগত জীবন ও উদ্বেগের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে সতর্কতা এবং বিবেচনা প্রয়োগ করবেন। যদি এটি অপরাধ-দুর্নীতি, সমাজবিরোধী আচরণ, জনস্বাস্থ্য বা জননিরাপত্তার হুমকি হয় তবেই তা সংবাদের বিষয়বস্তু বানান।

জনস্বার্থের জন্য জরুরি না হলে হাসপাতাল, নিয়ন্ত্রিত এলাকা ও ব্যক্তিগত পরিসরে প্রবেশের আগে অনুমতি নিন, অন্যথায় ছবি-ভিডিও ধারণ, তথ্য সংগ্রহ বা মন্তব্য নেয়ার চেষ্টা করবেন না।

৬. এমন উপাদান তৈরি করবেন না, যা ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ, জাতি, বর্ণ, সম্প্রদায়, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, শারীরিক- মানসিক অসুস্থতা বা অক্ষমতা, বৈবাহিক অবস্থা বা যৌন অভিমুখের প্রতি ঘৃণা, বৈষম্য, উপহাস, কুসংস্কারের জন্ম দেয়। প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্র ছাড়া এসব পরিচয় উল্লেখ করবেন না।

জাতিগত বা ধর্মীয় ঘৃণা উস্কে দেওয়ার আশংকা থাকে, সংঘাত-সহিংসতা বা এ ধরণের পরিস্থিতি সম্পর্কিত সংবাদ প্রচারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন, যাতে পরিস্থিতির আরও অবনতি না ঘটে, জীবনকে বিপন্ন না করে, অথবা জনসাধারণের অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি না করে।

অনিবার্য না হলে সহিংসতা, বিকৃত দেহ এবং কোনও ট্র্যাজেডির শিকার ব্যক্তির রক্তাক্ত ছবি প্রকাশ করবেন না।

অপরাধীকে মহিমান্বিত করবেন না। উগ্রবাদ, চরমপন্থা বা মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টিকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, মতাদর্শ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে তাদের প্রচারণা বা সমবেদনা তৈরি যাতে না হয়- সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকুন।

সমাজের জন্য ক্ষতিকর, অযৌক্তিক, অপ্রাসঙ্গিক ও আপত্তিকর শব্দ-চিত্রের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন

সংবাদ ও ছবি-ভিডিও’র শিরোনামে বিষয়বস্তুর যুক্তিসঙ্গত প্রতিফলন থাকতে হবে, ভুল বা বিভ্রান্তিকর উপস্থাপনা এড়িয়ে চলুন।

যৌন নির্যাতন, জোরপূর্বক বিবাহ বা পিতামাতার কোন দায়িত্বজ্ঞানহীন অংশীদারিত্বের ফলে সৃষ্ট অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু, ধর্ষণের শিকার, এইডস আক্রান্ত বা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তাকে সনাক্ত বা ছবি তুলবেন না।

ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তদের আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত না করা পর্যন্ত শনাক্ত করা বা ছবি-ভিডিও ধারণ করবেন না। জনস্বার্থে না হলে দোষী সাব্যস্ত বা অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বজনদের সনাক্ত করবেন না।

অভিযুক্তকে প্রতিক্রিয়া জানানোর যুক্তিসঙ্গত সুযোগ প্রদান করুন, তাকে মন্তব্য করার সুযোগ না দিয়ে সুনাম বা নৈতিক চরিত্রকে প্রভাবিত করে এমন অনানুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রকাশ করবেন না।

অপরাধ, যুদ্ধ, নিপীড়ন এবং দুর্যোগের শিকার ব্যক্তি, তাদের স্বজন এবং দর্শকদের অনুভূতি, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং জনসাধারণের মর্যাদার প্রতি পূর্ণ বিবেচনা করে- এ ধরণের প্রতিবেদনে চিত্র উপস্থাপন করুন।

সংবাদ সংগ্রহে শিশু, অপরাধের শিকার, বিশেষভাবে (ট্রমা, আঘাত, অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে) ঝুঁকিপূর্ণদের সঙ্গে আচরণে সংবেদনশীলতা দেখান। শোক, আঘাত, তদন্ত, মৃত্যু, আত্মহত্যা সম্পর্কিত প্রতিবেদন যথাযথ সংবেদনশীলতার সঙ্গে উপস্থাপন করতে হবে।

৭. তথ্য, ছবি, ভিডিও, নথি এবং উপাত্ত সংগ্রহে প্রচলিত পদ্ধতির ব্যবহার করুন। জনস্বার্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা অসম্ভব হলেই কেবল বিকল্প পদ্ধতির ব্যবহার করা যাবে।

জরুরি পরিস্থিতিতে স্বাধীনভাবে তথ্য যাচাই করা বা প্রয়োজনীয় মন্তব্য সংগ্রহ করা না গেলে- প্রতিবেদনে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। মন্তব্য, দাবি বা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করলে উপস্থাপনায় তা স্পষ্ট করতে হবে এবং বিদ্বেষ-বিভ্রান্তি এড়াতে বাস্তব ভিত্তি বিশ্লেষণ করতে হবে।

জনগুরুত্বপূর্ণ ঘটনার পর্যবেক্ষণ উপস্থাপনের অধিকারী হবেন, তবে নীতিগত সতর্কতা এবং ন্যায্য মন্তব্যের সীমা অতিক্রম করবেন না। সংবাদ, মতামত এবং বিশ্লেষণের মধ্যে পার্থক্য নিশ্চিত করুন।

৮. প্রতিবেদনে চৌর্যবৃত্তি, বিকৃতি, অপবাদ, মানহানি, কুৎসা, ভিত্তিহীন অভিযোগের মত বিষয়কে গুরুতর পেশাদার অসদাচরণ হিসেবে দেখা হবে। বাইরের উৎস থেকে তথ্য, ছবি, ভিডিও বা অন্য কোন উপাদান ব্যবহার করলে কপিরাইট মেনে চলুন।

রুচির ক্ষেত্রে নিজস্ব বিচক্ষণতা ব্যবহার করতে হবে, এমন কিছু প্রকাশ করবেন না যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করে বা জনসাধারণের কাছে অত্যন্ত আপত্তিকর করে তোলে।

পেশাগত কারণে অন্যায় চাপের মুখে পড়া সহকর্মীর পাশে দাঁড়ান। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ন্যায়ভিত্তিক সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করুন।

পেশাগত নীতিমালা, আইনের শাসন, সংবিধান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন, কনভেনশনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। তবে জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সতর্কভাবে বিতর্কিত বিচারপ্রক্রিয়া, আইন-বিধির বিশ্লেষণ করুন।